শাহরিয়ার হাসান ও মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা
দেশের প্রাপ্তবয়স্ক সব মানুষের যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য আছে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সার্ভারে। একান্ত গোপনীয় তথ্যের সেই ভান্ডারে চাইলেই ঢুকে যেতে পারছে ভারত-পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্রের মতো আরও কয়েকটি দেশের প্রতিষ্ঠান। জেনে যেতে বা নিয়ে নিতে পারছে যেকোনো নাগরিকের খুঁটিনাটি। শুধু কয়টা টাকা দিয়ে একই কাজ করতে পারছে আরও কিছু অখ্যাত প্রতিষ্ঠান।
নির্বাচন কমিশন-সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, অর্থের বিনিময়ে দেশি-বিদেশি ১৭১টি প্রতিষ্ঠান এনআইডির সার্ভারের সেবা নেয়। এগুলোর মধ্যে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫৪টি, মোবাইল ফোন সেবাদাতা কোম্পানি ৬টি, দেশি-বিদেশি ব্যাংক ৬৩টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২৮টি, বিমা প্রতিষ্ঠান ৫টি, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি ৮টি ও অন্যান্য ৭টি। ব্যাংকগুলোর মধ্যে আছে ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, যুক্তরাজ্যের ৯টি প্রতিষ্ঠান।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাকার জন্য যদি কোনো বিদেশি, ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের কাছে দেশের নাগরিকের গোপন তথ্য ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে নিশ্চিত অপব্যবহারের শিকার হবে। তারা তথ্য সংরক্ষণ করে রাখবে, যাতে ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেছেন, বিদেশি ব্যাংকগুলোকে দেশের নাগরিকের তথ্য সরাসরি যাচাই করার সুযোগ দেওয়া হয়তো ঠিক হয়নি। কারণ, অন্য দেশে আমরা এভাবে সুযোগটা পাই না। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করতে হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সারোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি এভাবে ভাবা হয়নি। কী মনে করে এমনটা দেওয়া হয়েছে, আইটি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে আপনাকে জানাতে পারব।’
নির্বাচন কমিশনও কি নাগরিকের গোপন তথ্য দিয়ে এভাবে চুক্তি করতে পারে? এ প্রশ্নে আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক গতকাল শনিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন হয়তো জানেই না, কাদের সঙ্গে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা যাবে। এই তথ্য শেয়ারে রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে, মানুষের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে, সেটা বোঝার দক্ষতা-যোগ্যতাসম্পন্ন লোক হয়তো সেখানে নেই। থাকলে এই কাজটা এভাবে করতে পারত না।’
বিদেশি ব্যাংক ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কাদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে আমরা নতুন করে আর কারও সঙ্গে চুক্তি করছি না। পুরোনো কেউ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হবে।’
হঠাৎ করে হইচই
গত ৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ খবর দেয়, বাংলাদেশের সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে লাখ লাখ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে চারদিকে ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।
এর কয়েক দিন পর ১১ জুলাই সরকারের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালককে প্রধান করে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয় সাত দিনের মধ্যে। ১৭ জুলাই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ১৭১টি প্রতিষ্ঠানের একটি সরকারের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁস হয়। তবে কত নাগরিকের তথ্য ফাঁস হয় বা উন্মুক্ত অবস্থায় ছিল, তা জানা যায়নি।
যে শর্তে, যেভাবে চুক্তি হয়
নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডার থেকে এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের জন্য সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ১৭১টি। ২০১৬ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি বা ব্যক্তিগত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এককালীন ৫ লাখ টাকা আর প্রতিটি এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের জন্য ২ টাকা থেকে ৫ টাকা দিতে হয়। বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেয় ২ টাকা করে। এর বাইরে সব প্রতিষ্ঠান দেয় ৫ টাকা করে।
চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের তারিখ থেকে চুক্তি কার্যকর হয় এক বছরের জন্য। প্রতিবছর চুক্তির মেয়াদ নবায়ন করা হয়। এভাবে দেশের নাগরিকদের গোপনীয় তথ্যের ভান্ডার ভাড়া দিয়ে গত সাত অর্থবছরে নির্বাচন কমিশন পেয়েছে প্রায় ২৫৪ কোটি টাকা।
এনআইডির তথ্যভান্ডার ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। তবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাইলে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চুক্তি করতে পারে। তবে সে জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। কমিশন থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হয়।
সেবা নিচ্ছে কারা
অর্থের বিনিময়ে সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এগুলোর মধ্যে ব্যাংক আছে ৬৪টি। ব্যাংকগুলোর মধ্যে হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ব্যাংক আলফালাহ্ নামের তিনটি পাকিস্তানি ব্যাংক রয়েছে। তথ্য নিচ্ছে ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক সিটিব্যাংক এনএ পাচ্ছে এই সুবিধা। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ ও এইচএসবিসি এবং শ্রীলঙ্কার কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন এবং দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংক উরী এনআইডির তথ্যভান্ডারে ঢুকতে পারে।
এ ছাড়া মোবাইল ফোন সেবাদাতা কোম্পানি ৬টি, বাণিজ্যিক ব্যাংক ৬৩টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২৮টি, বিমা প্রতিষ্ঠান ৫টি, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি ৮টি ও অন্যান্য ৭টি প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে এনআইডির সেবা নিচ্ছে।
অন্যান্য সাতটির মধ্যে নাগরিকের গোপন এসব তথ্য পায় ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি আইটি প্রতিষ্ঠান, দুটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান, একটি অ্যাপস ও একটি সেবা প্রতিষ্ঠান। তাদের পরিচয় অনুসন্ধান করে দেখা যায়, সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে চুক্তি করে এনআইডির তথ্য যাচাই-বাছাই করছে দেশের একটি শিল্পগোষ্ঠীও। এদের মধ্যে সেবা প্ল্যাটফর্ম লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে। যার মূল কার্যালয় রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায়।
সেবা প্ল্যাটফর্ম লিমিটেডের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে এস ম্যানেজারের কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি সুরাইয়া জানান, সেবা প্ল্যাটফর্ম লিমিটেডের তিনটি ব্যবসা রয়েছে। সেগুলো হলো এস ম্যানেজার, সেবা ডট এক্সওয়াইজেড ও এস ম্যানেজার বন্ধু।
এনআইডি যাচাইসংক্রান্ত কী ধরনের কাজ তাঁরা করেন জানতে চাইলে সুরাইয়া বলেন, ‘এস ম্যানেজার একটি ব্যবসায়িক সলিউশন অ্যাপস। এটি দিয়ে অনেক টাকাপয়সা লেনদেন করা হয়। আমাদের লক্ষাধিক মার্চেন্ট আছে, যাদের ক্রেডিট রিচার্জ করা হয়, টপ আপ করা হয়। তাই বিকাশ, নগদের মতো আমাদের অ্যাপসটি ব্যবহারের জন্য ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয়।’
তথ্যভান্ডার ভাড়া দিয়ে ইসি পেয়েছে ২৫৩ কোটি নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, তথ্যভান্ডার ভাড়া দিয়ে ২০১৬ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ২৫৪ কোটি টাকা আয় করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে তথ্য-উপাত্ত যাচাই সরবরাহ চার্জ থেকে ২৩১ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, এককালীন নবায়ন ও সাব-ইউজার চার্জ থেকে প্রায় ২২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে গত সাত অর্থবছরে মোট ২৫৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আয় হয়েছে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, চুক্তিবদ্ধ এই প্রতিষ্ঠানগুলো কার কার তথ্য যাচাই করেছে, সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ব্যাংকগুলোর বিষয়টি দেখার কথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি অডিট টিমের। তবে যেহেতু ইসির সঙ্গে ব্যাংকগুলোর চুক্তি, সেহেতু ইসিরও দায়িত্ব আছে। ইসির উচিত নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিষয়টি দেখভাল করা। কিন্তু সেটা করা হয় না।
দেশের প্রাপ্তবয়স্ক সব মানুষের যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য আছে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সার্ভারে। একান্ত গোপনীয় তথ্যের সেই ভান্ডারে চাইলেই ঢুকে যেতে পারছে ভারত-পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্রের মতো আরও কয়েকটি দেশের প্রতিষ্ঠান। জেনে যেতে বা নিয়ে নিতে পারছে যেকোনো নাগরিকের খুঁটিনাটি। শুধু কয়টা টাকা দিয়ে একই কাজ করতে পারছে আরও কিছু অখ্যাত প্রতিষ্ঠান।
নির্বাচন কমিশন-সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, অর্থের বিনিময়ে দেশি-বিদেশি ১৭১টি প্রতিষ্ঠান এনআইডির সার্ভারের সেবা নেয়। এগুলোর মধ্যে দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫৪টি, মোবাইল ফোন সেবাদাতা কোম্পানি ৬টি, দেশি-বিদেশি ব্যাংক ৬৩টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২৮টি, বিমা প্রতিষ্ঠান ৫টি, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি ৮টি ও অন্যান্য ৭টি। ব্যাংকগুলোর মধ্যে আছে ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, যুক্তরাজ্যের ৯টি প্রতিষ্ঠান।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাকার জন্য যদি কোনো বিদেশি, ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের কাছে দেশের নাগরিকের গোপন তথ্য ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে নিশ্চিত অপব্যবহারের শিকার হবে। তারা তথ্য সংরক্ষণ করে রাখবে, যাতে ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেছেন, বিদেশি ব্যাংকগুলোকে দেশের নাগরিকের তথ্য সরাসরি যাচাই করার সুযোগ দেওয়া হয়তো ঠিক হয়নি। কারণ, অন্য দেশে আমরা এভাবে সুযোগটা পাই না। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করতে হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র সারোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি এভাবে ভাবা হয়নি। কী মনে করে এমনটা দেওয়া হয়েছে, আইটি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে আপনাকে জানাতে পারব।’
নির্বাচন কমিশনও কি নাগরিকের গোপন তথ্য দিয়ে এভাবে চুক্তি করতে পারে? এ প্রশ্নে আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক গতকাল শনিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন হয়তো জানেই না, কাদের সঙ্গে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা যাবে। এই তথ্য শেয়ারে রাষ্ট্রের ক্ষতি হবে, মানুষের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে, সেটা বোঝার দক্ষতা-যোগ্যতাসম্পন্ন লোক হয়তো সেখানে নেই। থাকলে এই কাজটা এভাবে করতে পারত না।’
বিদেশি ব্যাংক ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কাদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে আমরা নতুন করে আর কারও সঙ্গে চুক্তি করছি না। পুরোনো কেউ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলে তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হবে।’
হঠাৎ করে হইচই
গত ৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ খবর দেয়, বাংলাদেশের সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে লাখ লাখ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে চারদিকে ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।
এর কয়েক দিন পর ১১ জুলাই সরকারের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালককে প্রধান করে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয় সাত দিনের মধ্যে। ১৭ জুলাই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ১৭১টি প্রতিষ্ঠানের একটি সরকারের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁস হয়। তবে কত নাগরিকের তথ্য ফাঁস হয় বা উন্মুক্ত অবস্থায় ছিল, তা জানা যায়নি।
যে শর্তে, যেভাবে চুক্তি হয়
নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডার থেকে এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের জন্য সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ১৭১টি। ২০১৬ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি বা ব্যক্তিগত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এককালীন ৫ লাখ টাকা আর প্রতিটি এনআইডির তথ্য যাচাইয়ের জন্য ২ টাকা থেকে ৫ টাকা দিতে হয়। বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেয় ২ টাকা করে। এর বাইরে সব প্রতিষ্ঠান দেয় ৫ টাকা করে।
চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের তারিখ থেকে চুক্তি কার্যকর হয় এক বছরের জন্য। প্রতিবছর চুক্তির মেয়াদ নবায়ন করা হয়। এভাবে দেশের নাগরিকদের গোপনীয় তথ্যের ভান্ডার ভাড়া দিয়ে গত সাত অর্থবছরে নির্বাচন কমিশন পেয়েছে প্রায় ২৫৪ কোটি টাকা।
এনআইডির তথ্যভান্ডার ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। তবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাইলে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চুক্তি করতে পারে। তবে সে জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। কমিশন থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হয়।
সেবা নিচ্ছে কারা
অর্থের বিনিময়ে সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এগুলোর মধ্যে ব্যাংক আছে ৬৪টি। ব্যাংকগুলোর মধ্যে হাবিব ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ব্যাংক আলফালাহ্ নামের তিনটি পাকিস্তানি ব্যাংক রয়েছে। তথ্য নিচ্ছে ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক সিটিব্যাংক এনএ পাচ্ছে এই সুবিধা। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ ও এইচএসবিসি এবং শ্রীলঙ্কার কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন এবং দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক বাণিজ্যিক ব্যাংক উরী এনআইডির তথ্যভান্ডারে ঢুকতে পারে।
এ ছাড়া মোবাইল ফোন সেবাদাতা কোম্পানি ৬টি, বাণিজ্যিক ব্যাংক ৬৩টি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২৮টি, বিমা প্রতিষ্ঠান ৫টি, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি ৮টি ও অন্যান্য ৭টি প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে এনআইডির সেবা নিচ্ছে।
অন্যান্য সাতটির মধ্যে নাগরিকের গোপন এসব তথ্য পায় ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি আইটি প্রতিষ্ঠান, দুটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান, একটি অ্যাপস ও একটি সেবা প্রতিষ্ঠান। তাদের পরিচয় অনুসন্ধান করে দেখা যায়, সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে চুক্তি করে এনআইডির তথ্য যাচাই-বাছাই করছে দেশের একটি শিল্পগোষ্ঠীও। এদের মধ্যে সেবা প্ল্যাটফর্ম লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে। যার মূল কার্যালয় রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায়।
সেবা প্ল্যাটফর্ম লিমিটেডের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে এস ম্যানেজারের কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি সুরাইয়া জানান, সেবা প্ল্যাটফর্ম লিমিটেডের তিনটি ব্যবসা রয়েছে। সেগুলো হলো এস ম্যানেজার, সেবা ডট এক্সওয়াইজেড ও এস ম্যানেজার বন্ধু।
এনআইডি যাচাইসংক্রান্ত কী ধরনের কাজ তাঁরা করেন জানতে চাইলে সুরাইয়া বলেন, ‘এস ম্যানেজার একটি ব্যবসায়িক সলিউশন অ্যাপস। এটি দিয়ে অনেক টাকাপয়সা লেনদেন করা হয়। আমাদের লক্ষাধিক মার্চেন্ট আছে, যাদের ক্রেডিট রিচার্জ করা হয়, টপ আপ করা হয়। তাই বিকাশ, নগদের মতো আমাদের অ্যাপসটি ব্যবহারের জন্য ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয়।’
তথ্যভান্ডার ভাড়া দিয়ে ইসি পেয়েছে ২৫৩ কোটি নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, তথ্যভান্ডার ভাড়া দিয়ে ২০১৬ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ২৫৪ কোটি টাকা আয় করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে তথ্য-উপাত্ত যাচাই সরবরাহ চার্জ থেকে ২৩১ কোটি ১৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, এককালীন নবায়ন ও সাব-ইউজার চার্জ থেকে প্রায় ২২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে গত সাত অর্থবছরে মোট ২৫৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আয় হয়েছে।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, চুক্তিবদ্ধ এই প্রতিষ্ঠানগুলো কার কার তথ্য যাচাই করেছে, সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। ব্যাংকগুলোর বিষয়টি দেখার কথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি অডিট টিমের। তবে যেহেতু ইসির সঙ্গে ব্যাংকগুলোর চুক্তি, সেহেতু ইসিরও দায়িত্ব আছে। ইসির উচিত নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিষয়টি দেখভাল করা। কিন্তু সেটা করা হয় না।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে