দখলে মরতে বসেছে খাল

এস এস শোহান, বাগেরহাট
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২২, ১৩: ৪৯
Thumbnail image

বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের জয়গাছি খাল দেখে এখন বোঝার উপায় নেই যে এটি একটি প্রবাহমান খাল। বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ, খালের ওপর পাকা স্থাপনা ও সড়ক নির্মাণের ফলে অনেক জায়গায় খালটির চিহ্ন পর্যন্ত বোঝা যায় না। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধানি জমি ও খাল এখন একাকার হয়ে গেছে।

এক সময় খরস্রোতা খালটি এখন মৃত প্রায়। পানির স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় স্থানীয় সমতল ভূমির বৃষ্টির পানিও এই খাল থেকে নিষ্কাশন হতে পারে না। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। দ্রুত খালটি দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ অবস্থায় খালটি দখলমুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন বাগেরহাট সদর উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাগেরহাট শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদী থেকে উঠে আসা কাটা খালের একটি শাখা জয়গাছি খাল। পুরোনো বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছন থেকে উঠে বর্তমান বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছন দিয়ে রঘুনাথপুর মোড় হয়ে কচুয়া উপজেলার রাড়ীপাড়া ইউনিয়নের ধলনগর এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে। 
প্রায় ৫ থেকে ৭ কিলোমিটার

লম্বা খালটি গড়ে ২০ থেকে ৪০ ফুট লম্বা ছিল। খালে স্রোতও ছিল, খাল থেকে অন্তত দশটি গ্রামের পানি নিষ্কাশন হতো। এই খালের পানি ওঠা নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে খালের মুখে (বিদ্যালয়ের পাশে) একটি স্লুইসগেটেও করা হয়েছিল। কিন্তু সেটিও এখন অকেজো। বৈটপুর-দেপাড়া সড়ক দিয়ে পুরোনো বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য করা কংক্রিটের সড়কে খালটির একটি অংশ আটকা পড়েছে।

সড়কের উত্তর পাশে খাল আটকে বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী, স্থানীয় এনামুল কবির, ছত্তারসহ অন্তত ১০-১৫ জন ঘের করেছেন। খালের মধ্যে অন্তত ১০-১৫টি বাঁধ ও নেট-পাটা রয়েছে। পরবর্তী দখল হয়েছে রঘুনাথপুর মোড়ে। খালের পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য সড়কের নিচে দেওয়া কালভার্টের মুখ আটকে ভবন করা হয়েছে। এখনো চলছে ভবন নির্মাণ। খাল বাঁচাতে দ্রুত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইউনুস বলেন, এক সময় বর্ষা মৌসুমে জয়গাছি খাল দিয়ে তাঁদের এলাকার পানি নামতো। খালটির জোয়ারের সময়ের পানি দিয়ে স্থানীয়রা কৃষিকাজ করতেন। কিন্তু প্রায় ৩০ বছর দখল করে মাছ চাষ করার ফলে খালটি এখন মৃতপ্রায়। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন যে, কোনটা খাল আর কোনটা মাছের ঘের সেটাই খুঁজে পাওয়া যায় না।

জয়গাছি গ্রামের আলমগীর মোল্লা বলেন, হাইস্কুলে যাওয়ার সড়ক নির্মাণের সময় খালটির একপাশ আটকে দেওয়া হয়। পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলীসহ অনেকে এখানে ঘের করেন। এমনকি যাঁরা খাল দখল করে মাছ চাষ করছে তাঁরাও জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন।

বেমরতা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী মল্লিক বলেন, খালটির এক পাশ দিয়ে পুরোনো একটি সড়ক রয়েছে, যার নিচ দিয়ে কোনো কালভার্ট বা পানি সরার কোনো ব্যবস্থা নাই। এ ছাড়া খালটির বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ও নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করছে। তিনিও খালের বেশ কিছু অংশ নিয়ে ঘের করেছেন।

তবে সরকার খাল খনন বা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিলে তিনি খাল আটকে ঘের করা বন্ধ করে দেবেন। 
জুলফিকার আলী আরও বলেন, ‘আমি নিজেও জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছি।’

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কুমার স্বস্তিক বলেন, জয়গাছি খাল দখলের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত খালটি দখলমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, জয়গাছি খালটি দখলের বিষয়ে স্থানীয় অনেকেই অভিযোগ করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে খালটি দখলমুক্ত করা হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত