কাগজে চিকিৎসক আছেন বাস্তবে দেখা মেলে না

ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২২, ১২: ১৯

নীলফামারীর ডিমলায় চারটি উপস্বাস্থ্য এবং ছয়টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে আটজন চিকিৎসক নিয়োগ থাকলেও প্রত্যন্ত এলাকার এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা বিভাগীয় শহরে বসেই দায়িত্ব পালন করেন।

তাঁদের মধ্যে তিনজন চিকিৎসা কর্মকর্তা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পাঁচজন আছেন বিভিন্ন জেলা এবং বিভাগীয় হাসপাতালে। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে চরগ্রাম থেকে সেবা নিতে ছুটতে হয় উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে।

সরেজমিনে উপজেলার কয়েকটি উপস্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। জানা গেছে, উপজেলায় চারটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ছয়টি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার (এমবিবিএস ডাক্তার), উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, মিডওয়াইফ, ফার্মাসিস্ট ও অফিস সহায়ক পদ থাকলেও শুধু চারটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রয়েছেন। এ ছাড়া কোনোটিতেই চিকিৎসক ও জনবল নেই। অধিকাংশ কেন্দ্রে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা দিয়েই চিকিৎসাসেবা চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডাক্তার না থাকায় রোগীদের চিকিৎসা না নিয়েই ফিরে যেতে হয়। এতে এলাকার মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বালাপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে নিয়োগ দেওয়া হয় চিকিৎসা কর্মকর্তা সাতিল সায়মন চৌধুরীকে। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ওই এলাকার মানুষ কোনো দিন দেখেননি তাঁকে। তিনি দায়িত্ব পালন করছেন জেলার সদর হাসপাতালে।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান কামালও নিয়মিত আসেন না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশের বাসিন্দা বিলকিস আকতার নামের একজন সেখানে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।

এলাকাবাসী জানান, কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার কামরুজ্জামান সপ্তাহে দু-এক দিন এলেও এক ঘণ্টার বেশি থাকেন না। তিনি ব্যক্তিগতভাবে মাসিক বেতনে বিলকিস আকতারকে চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

বিষয়টি স্বীকার করে উপসহকারী মেডিকেল অফিসার কামরুজ্জামান বলেন, ‘এখানে জনবল-সংকট। অফিসের কাজে বাইরে যেতে হয়।বিলকিস আকতার আমার সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। তাঁকে আমিই বেতন দিই। তিনি ডাক্তার না হলেও খুবই অভিজ্ঞ।’

কামরুজ্জামান জানান, ‘এখানে এমবিবিএস ডাক্তার ও মিডওয়াইফের নিয়োগ থাকলেও তাঁরা ডেপুটেশনে কাজ করেন অন্যত্র। এ ছাড়া ফার্মাসিস্ট ও অফিস সহায়ক পদ শূন্য।’

উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে টেপাখড়িবাড়ি পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মৌসুমি বৈশ্বম্বী নামের এক চিকিৎসকের পদায়ন থাকলেও তিনি সেখানে যান না। সেখানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন খালিশা চাপানি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা লুনা পারভিন।

লুনা বলেন, ‘এখানে সপ্তাহে দুই দিন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। বাকি দিন চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ থাকে। দুটি কেন্দ্রেই চিকিৎসা কর্মকর্তা ও উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা নেই।’

স্থানীয় বাসিন্দা রিপন ইসলাম জানান, ‘শুনেছি, এখানে একজন ভালো ডাক্তারের পোস্টিং আছে। তিনি এখানে আসেন না। প্রতিদিন ৬০-৭০ জন রোগী আসেন সেবা নিতে। ডাক্তার না থাকায় সেবা পাচ্ছেন না এই চর এলাকার লোকজন।’

একই অবস্থা উপজেলার অন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেও। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুজ্জামান জানান, ‘জনবল ও চিকিৎসক সংকটের মধ্যে যতটুকু পারা যায় করছি। আর কমিউনিটি চিকিৎসক কামরুজ্জামানকে আগেও সতর্ক করা হয়েছে। আবারও দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত