Ajker Patrika

যেভাবে কাতার মন জয় করেছে

ফারুক মেহেদী, কাতার থেকে
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১১: ৪৬
যেভাবে কাতার মন জয় করেছে

সব সমালোচনা ও বিতর্কে ছাই দিয়ে রেকর্ডের বিশ্বকাপ ফুটবলের সেরা উৎসব সফলভাবে শেষ করল কাতার। গতকাল আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ফাইনাল দিয়ে মাসব্যাপী বিশ্বকাপের এ মহা আয়োজন শেষ হলো। বিশ্বের লাখো দর্শক-সমর্থক-পর্যটকের সরব উপস্থিতিতে প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে কাতার নিজের ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে কোনো রকম হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা ছাড়াই ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ শেষ করল।

ছোট দেশ কাতারে সফল বিশ্বকাপ আয়োজনের নানা বিষয়ে এখন চলেছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কাতারের রেডিও, টিভিসহ প্রায় সব গণমাধ্যমে বিশ্বসেরা ফুটবলার, ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে একটি সফল আয়োজনের জন্য কাতারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজক সংস্থা ফিফাকেও প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রাজস্ব দিয়েছে, যা আর কোনো বিশ্বকাপে সম্ভব হয়নি। এটিই বিশ্বের একমাত্র বিশ্বকাপ, যেখানে হায়া কার্ডে খেলা দেখতে আসা সব দর্শক বিনা মূল্যে কাতারের মেট্রোরেল ও বাসে বিনা পয়সায় চলাচল করতে পেরেছেন। কাতার শুধু বিশ্বকাপ ফুটবল ঘিরে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যেটা বিশ্বের আর কোনো আয়োজক দেশ করেনি। লোকসান জেনেও কাতার অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। বিলিয়ন ডলার খরচ করে নতুন নতুন স্টেডিয়াম, সড়ক-মহাসড়কসহ লুসাইলের মতো বিলাসবহুল নতুন শহর তৈরি করেছে। সড়ককে যানজটমুক্ত রাখতে মেট্রোরেলকে কাজে লাগানো হয়েছে। বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় ছিল না যে দেশটিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আয়োজন চলছে।

মেট্রোরেলে চলাচলের সময় বিপুলসংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতিতেই শুধুই বিশ্বকাপের মূল আমেজটা বেশি বোঝা গেছে। মুসলিম দেশ হলেও বিদেশি পর্যটকেরা অবাধে চলাচল করেছেন। পোশাকে কড়াকড়ি ছিল না। প্রকাশ্যে মদপানে কড়াকড়ি থাকলেও এতে কেউ অখুশি নয়। বিশৃঙ্খলা বা মারামারির মতো আইনবহির্ভূত কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ সময়ে কাতারে রাত-দিন বলে কিছু ছিল না। নারী-পুরুষ অবাধে নেচে-গেয়ে সময় কাটিয়েছেন। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয় সব জায়গায়। প্রত্যেক পর্যটক নিজেকে নিরাপদ মনে করেছেন। বাইরে থেকে কাতারে যাঁরাই এসেছেন, তাঁরা কাতার সম্পর্কে আগে যা জেনেছিলেন, এবার পুরো ভিন্ন চেহারায় দেখেছেন। কোনো অঘটন ছাড়াই এ আয়োজন শেষ হওয়ায় সবাই কাতারকে বাহবা দিচ্ছে।

খেলা দেখতে মাঠে যাওয়ার পথে কথা হয় মার্কিন নাগরিক জুলিয়ানার সঙ্গে। বলেন, ‘কাতার যা করেছে, তা রীতিমতো বিস্ময়কর। এখানে না এলে কাতারকে এভাবে জানা হতো না।’

কাতারপ্রবাসী ব্যবসায়ী বাংলাদেশি ফরহাদ আহমেদ বলেন, ‘কোনো সমস্যা ছাড়াই একটি বড় আয়োজন সফল হওয়ায় আমরা কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা বাংলাদেশিরা অনেক খুশি।’

গতকাল ফাইনালের আগে পুরো কাতার যেন শেষ উৎসবে মাতে। নারী-পুরুষ ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় নানা সাজে খেলা দেখতে মাঠে যান। যাঁরা স্টেডিয়ামের টিকিট পাননি, তাঁরা বিভিন্ন স্থানের বড় স্ক্রিনে খেলা দেখেন। গতকাল ছিল কাতারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ছুটির আমেজে মানুষ খেলা দেখতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন।

বিশ্বকাপে বিদেশিদের জন্য সবকিছুতে ছাড় থাকলেও স্থানীয় লোকজন এর সুযোগ নেননি। বরং নিজের ধর্ম ও সংস্কৃতি মেনে বিদেশিদের সহায়তা করেছেন। এ ব্যাপারে কাতারের নাগরিক আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল শাওয়ানি বলেন, ‘বিশ্বকাপ সাময়িক উৎসব। তা আবার প্রমাণিত হয়েছে।’

উৎসব শেষ। এবার অতিথিদের ফিরে যাওয়ার পালা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদেশি দর্শক-সমর্থক যাঁরা হায়া কার্ডে কাতার এসেছিলেন, ২৩ ডিসেম্বর থেকে এ কার্ডের কার্যকারিতা শেষ হয়ে যাবে। তবে হায়া কার্ডে আসা পর্যটকেরা আগামী বছরের ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত কাতারে অবস্থান করতে পারবেন। ভবিষ্যতে বিশ্বকাপের অবকাঠামোকে কাজে লাগাতে বড় বড় ইভেন্ট আয়োজন অব্যাহত রাখা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য কাতারে প্রবেশ আরও সহজ করতে চায় কাতার সরকার। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত