২২ বছর দড়িতে বাঁধা জীবন

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬: ৪০

ঘিওরে দীর্ঘ ২২ বছর দড়িতে বাঁধা জীবন কাটছে ৩৪ বছরের এক যুবকের। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবকের নাম হাবিবুর রহমান হাবু। তিনি ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের পয়লা গ্রামের দিনমজুর মঞ্জুর আলীর ছেলে।

তাঁর চিকিৎসায় ইতিমধ্যে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। করতে হয়েছে ধারদেনা। এখন আর সামর্থ্য নেই তাঁর পরিবারের। এ অবস্থায় সরকারি ও দানশীল ব্যক্তিদের সহায়তায় চিকিৎসা করানোর আবেদন জানিয়েছেন তাঁর পরিবার।

হাবুর বাবা মো. মঞ্জুর আলী একজন দরিদ্র দিনমজুর। বয়সের ভারে আর অসুখ-বিসুখে এখন কর্মহীন। মা সামেলা বেগমও নানা অসুখে ভুগছেন। তাঁদের একমাত্র ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। কথাও বলতে পারে না। চোখের আড়াল হলেই অন্যদিকে চলে যায়। তাই বাধ্য হয়েই একমাত্র ছেলেকে দড়ি দিয়ে বেঁধে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন মা সামেলা বেগম।

হাবুর মা সামেলা বেগম বলেন, প্রায় বিশ-বাইশ বছর ধরে হাবুকে বেঁধে রেখেছি। একবার হারিয়ে যায় প্রায় পনেরো দিন পর খুঁজে পাই হাবুকে। এরপর থেকে হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে নিরুপায় হয়ে ছেলেকে বেঁধে রাখি। হাবুকে ছেড়ে দিলে পথচারীদের ধাক্কা দেবে, এতে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ভয়ে বেঁধে রেখেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি বেঁচে থাকতে আল্লাহ যেন আমার ছেলেটা নিয়ে যান। আমি মরে গেলে ওরে দেখার মতো এই দুনিয়ার কেউ নেই।’

সামেলা বেগম আরও বলেন, ‘জন্মের পর থেকে হাবু কিছুটা অস্বাভাবিক আচার-আচরণ করত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাগলামি আরও বেড়ে যায়। তার চিকিৎসায় জমিজমা বিক্রি করে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। অনেক টাকা-পয়সা খরচ হয়েছে। আমি এখন অন্যের বাসায় কাজ করি। হাবু যে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়, তা চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট নয়। সরকারিভাবে সহযোগিতা পাওয়া গেলে হাবুর উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হতো।’

প্রতিবেশী মো. শহীদ মিয়া বলেন, ‘পরিবারটি দরিদ্র ও অসহায়। অভাবের সংসার ছেলেটাকে নিয়ে ওর মা বাবা খুব কষ্টে আছেন।’

১ নম্বর পয়লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পরেই হাবুর নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছি। পরিষদ থেকে সবধরনের সুযোগ-সুবিধাও দিয়েথাকি তাঁকে।’

ঘিওর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘আমি নিজেহাবুর বাড়িতে গিয়ে সর্বশেষ অবস্থা জেনে তাঁর পরিবারের সঙ্গেকথা বলে উন্নত চিকিৎসার চেষ্টা করব। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁর পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত