সচিবদের ৩৪ নির্দেশনা: আমলাতন্ত্র ছেড়ে হতে হবে জনমুখী

উবায়দুল্লাহ বাদল, ঢাকা
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৯: ০০

রাজশাহীর উদ্যোক্তা মো. ইফতেখারুল হক ২০২২ সালে সফলভাবে পচনশীল শপিং ব্যাগ উৎপাদন শুরু করেন। বেশ কিছু পরিবেশসচেতন ব্যক্তি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাঁর পচনশীল ব্যাগ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারও করেছেন। চাহিদা আছে বিদেশেও। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এই ব্যাগের বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারছেন না এই উদ্যোক্তা। এ ধরনের অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় আটকে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরেও আছে এসব বিষয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ‘সচিব সভা’য় এ বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছেড়ে সংবেদনশীল ও জনমুখী প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। সরকারি সব সেবা অনলাইনভিত্তিক করতে হবে।’ ওই সভায় ৩৪টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ৭ মার্চ সব মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ডিও লেটার (আধাসরকারি পত্র) দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘গত ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সচিব সভায় প্রধানমন্ত্রী সচিবদের উদ্দেশে ৩৪টি দিক-নির্দেশনা দেন। এসব নির্দেশনা ও সিদ্ধান্তসমূহের প্রতি আপনার ব্যক্তিগত মনোযোগ আকর্ষণ করছি।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে তাঁকে অবহিত করতে অনুরোধ জানান।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি মনে করিয়ে দিয়ে দুর্নীতি দমনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘মনে রাখবেন, দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) না। দুর্নীতি নিরসন ও প্রতিরোধের দায়িত্ব প্রতিটি মন্ত্রণালয়েরও। নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কার্যক্রম চিহ্নিত করে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ গঠন করতে হবে। মূল্যস্ফীতি হ্রাসে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে। মূল্যস্ফীতির হার যেন প্রবৃদ্ধির হারের নিচে থাকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও বাজারব্যবস্থা নিয়মিত নজরদারি করতে হবে। পণ্য পরিবহনের পথে চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

চিঠিতে বলা হয়, রাজস্ব আদায় বাড়াতে করজাল সম্প্রসারণ করতে হবে। কেউ যেন কর ফাঁকি দিতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। স্থল ও সমুদ্রবন্দরগুলোকে অটোমেশন করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেন সহযোগিতার অভাবে ফিরে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে এবং কোনো প্রতিকূলতা থাকলে দূর করতে হবে। সরকারি ব্যয়ে মিতব্যয়ী হতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রা যেন অযথা ব্যয় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেসব প্রকল্প অল্প ব্যয় করলেই শেষ হবে, সেগুলোতে দ্রুত বরাদ্দ দিয়ে বাস্তবায়ন সম্পন্ন করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ পরিহার করতে হবে। অহেতুক ব্যয়বহুল প্রকল্প নেওয়া যাবে না। অতিদারিদ্র্যের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে আসবাব, পাটজাত দ্রব্য, চামড়া, হস্ত বা কারুশিল্পকে গার্মেন্টসের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।

রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও নতুন বাজার খোঁজার তাগিদ দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ, জাপান, কোরিয়া ইত্যাদি অঞ্চল বা দেশে রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। জুট জেনোম আবিষ্কার হওয়ায় পাটের বহুমুখী ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটি কাজে লাগিয়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনতে হবে। উৎপাদন বাড়িয়ে ভোজ্যতেলের আমদানি কমাতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে তিলের ব্যাপক চাহিদা আছে। তিল চাষ বাড়ালে রপ্তানির সুযোগ পাওয়া যেতে পারে। কোনো অবস্থায়ই তিন ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। খাদ্য, সবজি ও অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে। সেচযন্ত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানায় সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে। কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা ও ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নিতে হবে। শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে।  

গত বছরের ১২ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি চাই, কাজের ক্ষেত্রে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য যেন আর না থাকে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত