সাঙ্গু নদে অবৈধ বালুর জোটে তিন লীগের নেতা

বাসু দাশ, বান্দরবান
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৪, ১০: ০৬
আপডেট : ১৯ মে ২০২৪, ১০: ০৯

বান্দরবানের থানচি উপজেলায় সরকারিভাবে কোনো বালুমহাল নেই। অথচ সাঙ্গু নদ থেকে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। পথ ও মতের ভিন্নতা থাকলেও এ ক্ষেত্রে ‘ঐক্য’ আছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের নেতাদের। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও ঠিকাদারও আছেন এই ‘জোটে’। বালু তোলার প্রতিযোগিতায় ঝুঁকিতে পড়েছে পাড়ের জমি। এতে দিন দিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে সাঙ্গু।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, থানচির বলিপাড়া ইউনিয়নের কনাংজৈ পাড়া-সংলগ্ন থাইংক্ষ্যং মুখ এলাকায় সাঙ্গুর চরে ২৪ হর্স ক্ষমতাসম্পন্ন মেশিনে ১০ ইঞ্চি পাইপ যুক্ত করে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। শ্রমিকেরা তাঁবু গেড়ে দিনরাত বালু তুলছেন। হাজার ফুটের দুটি বালুর স্তূপ করা হয়েছে। প্রতি ট্রাক বালু বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। কনাংজৈ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে গাড়ি চলাচলের রাস্তা করে নেওয়া হচ্ছে বালু। ফলে বর্ষা মৌসুমে স্কুলটির বারান্দা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বালু উত্তোলনের কারণে সাঙ্গুতীরের ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে।

সাঙ্গুর চরের পাশেই ফসলি জমি আপ্রুসে মারমার। তিনি বলেন, ‘প্রথমে উচনু মেম্বার সাঙ্গুতীরে থাকা বালু উত্তোলনের জন্য খুঁজেছিলেন, আমি দিইনি। কয়েক সপ্তাহে পরে উচনু ও বলিপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান জিয়া অং মারমা এসে বালু তোলা শুরু করেন।’

স্থানীয়রা জানান, কোনো ইজারা না থাকলেও উপজেলার বলিপাড়ার কানাজিও পাড়া, ঙাইক্ষ্যং পাড়া ও মংনাই পাড়ায় মেম্বার উচনু, ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া অং ও ঠিকাদার আনোয়ার, বলিপাড়ার নাইন্দারী পাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বাসিং অং মারমা, আমতলী পাড়ায় অনিল, যুবলীগের সভাপতি অনিল ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদক চহাই মারমা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মালিরাম ত্রিপুরা, ঠিকাদার সুজনসহ কয়েকজন এ কাজে জড়িত। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে দীর্ঘদিন ধরে রাতে ট্রাকযোগে বিভিন্ন স্থানে তাঁরা বালু পাচার করে আসছেন।

অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া অং বলেন, ‘সাঙ্গু থেকে বালু উত্তোলন করছি, তা সত্য নয়। শত্রুতাবশত আমার নাম প্রচার করা হচ্ছে।’
এদিকে গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে বালু উত্তোলন করে পাচারের সময় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি অনিল ত্রিপুরা ও সাধারণ সম্পাদক চহাইনু মারমার একটি বালুভর্তি ট্রাক জব্দ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। শুধু ট্রাকটি জব্দ করলেও চালক ও সহকারীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বালুর ট্রাক জব্দের বিষয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চহাইনু মারমা বলেন, ‘আমরা বালু উত্তোলন করি না। এলাকার কিছু অসহায় ছেলেকে আমরা সহযোগিতা করছি।’

স্থানীয়রা জানান, থানচি সদর ইউনিয়নের আমতলী পাড়ার মংচসিং কারবারি ও মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা উহ্লাচিং মারমার খামারঘাট থেকে সাঙ্গুর বালু কিনে তিন মাস ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অনিল ও চহাইনু কয়েক লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করেছেন।

যুবলীগের সভাপতি অনিল ত্রিপুরা বলেন, ‘থানচির সবাই খুব অর্থকষ্টে আছেন। তাই নিজেদের (সরকার দলের) ছেলেদের সহযোগিতা করছি। বালু উত্তোলন না করলে এখানে সরকারি উন্নয়নকাজ কীভাবে হবে?’

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘থানচিতে বালু উত্তোলনের জন্য কোনো বালুমহাল নেই। কাউকে ইজারাও দেওয়া হয়নি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

এ বিষয়ে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বালু উত্তোলনের ব্যাপারে আমার জানা নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত