কনকনে ঠান্ডায় শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ চরমে

শিপুল ইসলাম (রংপুর) ও আশরাফুল আলম আপন (বদরগঞ্জ)
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩: ২৭

রংপুরে বইছে শীতের হিমেল হাওয়া। কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে পুরো জনপদ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। তারপরও পেটের দায়ে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে খেতখামারে কাজ করছেন তাঁরা। গতকাল শুক্রবার কুয়াশা ও ঠান্ডার মাত্রা ছিল কয়েক দিনের চেয়ে অনেক বেশি। দুপুর ১২টা পর্যন্ত চারপাশ ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল। দূরপাল্লার বাসসহ অন্যান্য যানবাহনকে আলো জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। এমন পরিবেশও দমাতে পারেনি দিনমজুরদের।

বেলা দুইটার দিকে সদর উপজেলার পশ্চিম গোপীনাথপুর গ্রামের মোস্তাকিম ও আলম মিয়াকে আলুখেতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ দেখা যায়। তাঁদের ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে মনের আক্ষেপ প্রকাশ করে আলম মিয়া বলেন, ‘সচোখে দ্যাখোচেন তো হামরা কত কষ্ট করি ফসল ফলাই। কিন্তু ফসলের ন্যায্য দাম পাই না। তোমরা একনা হামার কষ্টোগুলো পেপারোত তুলি ধরেন, সরকার যেন দ্যাখে।’

তারাগঞ্জ উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফ হোসেন সরিষাখেতে পানি দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এবার ঠান্ডাও যেমন, কুয়াশাও সেই রকম। কিন্তু এই সব দেখি হামার হাত-পাও গুটি বাড়িত থাকিলে কি চলবে? সময় মতো খেতের যত্ন নিতে না পারলে আবাদ ভালো হবার নেয়। তাই ঠান্ডাক হামরা কিছুই মনে করি না।’

বদরগঞ্জের বুড়িপুকুর গ্রামের দিনমজুর আব্দুর রহিম ও আবু তালেব আলুখেত নিড়ানি দিতে দিতে জানান, একদিন কাজ না করলে চুলায় হাঁড়ি ওঠে না। তাই পেটের দায়ে এই ঠান্ডায়ও কাজে এসেছেন।

মধুপুর ইউনিয়নের নাওপাড়া গ্রামের গুলসানা বেগম বলেন, ‘আইজ খুব ঠান্ডা নাগচে। বাড়ির থালি খোরা মানজিতে গিয়ে হাত-পাও কোকরা হয়য়া আইসোচে। মনে হওচে আকাশটা উন্দাও হয়য়া গেইচে।’

রামনাথপুর ইউনিয়নের মোকসেদপুর গ্রামের দুলালী বেগম জানান, গরম কাপড়ের অভাবে তিনটি সন্তান নিয়ে তিনি খুব কষ্টে আছেন। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো কম্বল সহায়তা দেয়নি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত রংপুরের জন্য ৫৫ হাজার কম্বল বরাদ্দ হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রতি ইউনিয়নে ৪৯০টি করে বিভিন্ন উপজেলায় ৩৮ হাজার ৭১০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য রয়েছে ১৬ হাজার ২৯০টি কম্বল।

রংপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গতকাল দেশের সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তেঁতুলিয়ায়। রংপুরে ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখনই তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা নেই। আরও কমতে পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত