লাখো মানুষের জ্ঞানতৃষ্ণা মেটায় রামনারায়ণ লাইব্রেরি

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৬: ৪৬

মানুষের ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করে বই। মনের কুসংস্কারকেও দূর করে বই, প্রাণে আনে অনাবিল আনন্দ। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের জ্ঞানতৃষ্ণা মিটিয়ে চলেছে রামনারায়ণ পাবলিক লাইব্রেরি। নবগঙ্গা-চিত্রা পাললিক সমভূমি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্র লোহাগড়া বাজারের পূর্ব দিকে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে দ্বিতল ভবনের ওপর অবস্থিত শতবর্ষীয় রামনারায়ণ পাবলিক লাইব্রেরি।

উপমহাদেশের প্রাচীনতম লাইব্রেরি গুলোর মধ্যে রামনারায়ণ পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার দিক থেকে অষ্টম। প্রায় ৩০ শতক জমির ওপর ১৯০৭ সালে লোহাগড়ার কৃতি সন্তান দার্শনিক ড. মহেন্দ্রনাথ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়।

এই লাইব্রেরিতে দেশি-বিদেশি ২৫ হাজার বই রয়েছে। এর আগে এই প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল শ্রীকৃষ্ণ লাইব্রেরি। ১৮৪৭ সালে সরকার বংশে রামনারায়ণ সরকার জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর নামানুসারেই নামকরণ করা হয় রামনারায়ণ পাবলিক লাইব্রেরি। পরিবর্তনশীল ও দাঙ্গা বিক্ষুব্ধ বিশ্বের নানাবিধ সংঘাত, দেশবিভাগ এবং স্বাধীনতা আন্দোলনের আবর্তন উপেক্ষা করে লোহাগড়ায় আজও গর্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানটি।

বর্তমান লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে এই লাইব্রেরির সদস্য ২ হাজার ৩শ ১০ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ৬০০ জন আজীবন সদস্য। তিনি আরও জানান, আজীবন সদস্য হতে এককালীন ১ হাজার টাকা ও সাধারণ সদস্য হতে ১০০ টাকা লাগে। ছাত্রদের জন্য রয়েছে বিশেষ ছাড়। তাঁরা ইচ্ছে করলে মাত্র ৫০ টাকায় সদস্য হতে পারেন। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় লাইব্রেরি খোলা হয় এবং রাত ৮টায় বন্ধ করা হয়। এখানে জাতীয় ও আঞ্চলিকসহ মোট ১০-১২টি পত্রিকা রাখা হয়।

বই দেওয়ার জন্য আছেন বেতনভোগী লাইব্রেরিয়ান মো. সিদ্দিকুর রহমান ও মিলন। দ্বিতল ভবনের হলরুমে এক সঙ্গে ৮০ থেকে ১০০ জন বসে পড়াশোনা করতে পারে। খবর ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখার জন্য অফিস কক্ষে রয়েছে টেলিভিশন। পাশেই রয়েছে কম্পিউটার কক্ষ। দুইটি কম্পিউটারের মধ্যে একটি অকেজো। সদস্যরা নির্ধারিত সময়ের জন্য বাড়িতেও বই নিয়ে পড়তে পারেন। সদস্যদের চাঁদা ও লাইব্রেরির নিজস্ব ভবনের দোকানঘরের ভাড়ায় কর্মচারীদের বেতনসহ যাবতীয় খরচ চালানো হয়। তা ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা লোহাগড়ার সুধীজনদের আর্থিক সহায়তায় এর অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ পরিচালিত হচ্ছে। তবে অর্থের অভাবে লাইব্রেরিকে ডিজিটালাইজড করা সম্ভব হচ্ছে না।

মরিচ পাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমির হোসেনের বলেন, মানুষের জীবন তো আর বইয়ের দু শ পৃষ্ঠার মতো এত ছোট নয়। জীবনের বাঁকে বাঁকে রয়েছে নানা রকম বিপদ আপদ। আর বিপদ থেকে বাঁচতে দরকার অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান। আর পৃথিবীতে জ্ঞানার্জনের মাত্র দুইটি পথ আছে। একটি ভ্রমণ করা অপরটি বই পড়া।

লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর গ্রামের এস এম আশরাফুল আলম বলেন, বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের গ্রামের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। আজেবাজে আড্ডা না দিয়ে পাঠাগারে সময় দিচ্ছে। যা তাঁদের বিভিন্ন আসক্তি থেকে দূরে রাখছে।

লাইব্রেরির সহসভাপতি আবুল খায়ের বলেন, ভবিষ্যতে এই লাইব্রেরিকে ডিজিটালাইজড করণ, অবশিষ্ট অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং দেশ-বিদেশের নামি-দামি লেখকদের বই দিয়ে সমৃদ্ধ করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত