সারের দামে চাষের খরচ দ্বিগুণ

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২২, ০৭: ১৮
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২২, ১২: ৩৩

রোপা আমনের জন্য প্রস্তুত করা জমি প্রচণ্ড রোদে মাটি ফেটে চৌচির। এতে ধানের চারা লাগানোর খরচ দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণ। সার ও জ্বালানি তেলের (ডিজেল) দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। চাষাবাদে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত খরচ। দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।

জানা গেছে, উপজেলায় ২২ হাজার ৮৪৯ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। এর মধ্যে চলতি আমন মৌসুমে ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত বাংলা মাস আষাঢ় থেকে শ্রাবণের ২০ তারিখের মধ্যে রোপা আমন চাষাবাদ শেষ হয়ে থাকে। আষাঢ়ের শুরুতে জমিতে চার চাষ দিয়ে জমি জাবাড় (প্রস্তুত) দিয়ে রাখা হয়। এরপর দ্বিতীয় সপ্তাহ পর ওই তৈরি জমিতে আবার দুই চাষ দিয়ে মোট ছয় চাষ করে আমন চারা লাগানো হয়। কিন্তু এবার জাবাড় দেওয়া জমি শুকিয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের।

অন্যদিকে এরই মধ্যে বিদ্যুৎ-সংকট আর সারের দাম কেজিতে ৬ টাকা এবং ডিজেল ৩৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে খরচ বেশি হচ্ছে কৃষকের। এবার বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই অনাবৃষ্টিতে উপজেলার মাঠে মাঠে আমন রোপণে সেচ দিয়ে চাষাবাদ শুরু হয়। আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণে দেখা মেলে বৃষ্টির, তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। ডিজেলচালিত পাওয়ার টিলার প্রতি বিঘা (৫০ শতক) দুই চাষ দিতে আগে লাগত ৬০০ টাকা। এখন ডিজেলের দাম বাড়ার পর লাগছে ৮০০ টাকা। এক জমি চারা লাগানোর উপযোগী করতে পাওয়ার টিলার দিয়ে ছয়-আট চাষ লাগে। এবার অনাবৃষ্টির কারণে এই অঞ্চলের প্রায় জমি চার চাষ করে প্রস্তুত করে রেখেছিলেন চাষিরা। খরায় সে চাষ কাজে না লাগায় প্রতি বিঘায় ১ হাজার ২০০ টাকা গচ্চা যায় কৃষকের।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ৯ আগস্ট পর্যন্ত ৭ হাজার হেক্টর জমিতে চারা লাগানো হয়েছে। এদিকে ৫ আগস্টের পর থেকে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পর প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতি একরে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি খরচ হয়।

পৌর বাজারের সার ডিলার মেসার্স পরিতোষ কুমার মল্লিক বলেন, ইউরিয়া সারের মূল্যবৃদ্ধি হলেও চাহিদার তুলনায় পটাশ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না।

মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী খোরশেদুল আলম লালু বলেন, ‘কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী পটাশ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, আমরাও চাহিদামাফিক পটাশ পাচ্ছি না। সাধারণত পটাশ রাশিয়া, ইউক্রেন থেকে আমদানি করে সরকার। আর যুদ্ধের কারণে আমদানি কমে যাওয়া সরবরাহ নগণ্য। কৃষকদের মাঝে পটাশ সারের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করা যাচ্ছে না।’

আলাদিপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমার ৭ বিঘা জমিতে চার চাষ দিয়ে প্রস্তুত করে রেখেছিলাম। এখন সে জমি শুকিয়ে যাওয়ায় আবার বেশি টাকায় চাষ করে জমি লাগাতে হচ্ছে। আগে প্রতি বিঘা চাষ করেছি ৬০০ টাকায়, এখন ডিজেলের দাম বাড়ায় চাষ করতে লাগছে ৮০০ টাকা।’

একই কথা বললেন মহেশপুর গ্রামের শিক্ষক আবদুল মান্নান। তাঁর ১০ বিঘা জমি দুই দফায় প্রস্তুত করতে হয়েছে। ডিজেলের দাম বাড়ার পর এখন চাষের হিসাব তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছে। তার ওপর সারের মূল্যবৃদ্ধি। ছয় চাষ দিলে প্রতি বিঘায় ২০০ টাকা করে ১ হাজার ২০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।

উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের বারাই পাড়া গ্রামের পাওয়ার ট্রিলারচালক রমজান আলী জানান, ডিজেলের দাম বাড়ার আগে প্রতি ১ বিঘা জমি দুই চাষ করে নেওয়া হতো ৬০০ টাকা, তেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় এখন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত