মাসুদ রানা
আজকের পত্রিকা: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তনে এর অপপ্রয়োগ রোধ হবে কি?
তানজীব উল আলম: আমার কাছে মনে হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ক্ষেত্রে মূল যে অভিযোগের জায়গাটা, তাতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন করা হয়েছে। সেই পরিবর্তনটা হচ্ছে, মূলত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটাকে অপব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা সাংবাদিকেরা কোনো রিপোর্ট যখন করেন, সেই বক্তব্য সরকারের পছন্দ না হলে এই আইনে মামলা করে তাঁদের হয়রানি করা হয়েছে। তিনটি ধারার অধীনে মামলাগুলো করা হয়। এক. মানহানিকর কোনো বক্তব্য রাখা হলে; দুই. কোনো বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয় এবং তিন. কোনো বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা দেখা দেয়। আসলে এই তিনটি ধারায় মামলা করে মানুষকে হয়রানি করার কথা বলা হয়।
এই তিনটি ধারায় যদি পরিবর্তন করা হয়, তাহলে তো হয়রানি করার সুযোগ থাকল না, তাহলে কি আপনি বলবেন না, সেটাতে মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে? কারণ বাকি যে বিধানগুলো আছে, সেগুলোতে মানুষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়নি। আমরা সব সময় দেখেছি, এই তিনটি ধারায় বারবার মামলা হয়েছে। তিনটি ধারার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে, মানহানিকর বক্তব্য রাখার জন্য। সেই মামলায় তো এখন জেল দেওয়ার বিধান উঠে গেছে। এখন শুধু জরিমানা করা হবে। যাঁরা বলছেন, মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়নি, তাঁদের পরিষ্কার করতে হবে, মৌলিক পরিবর্তন আসলে কী? মৌলিক পরিবর্তন বলতে যদি
বোঝায় আপনি যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারবেন, কখনোই আপনার বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেওয়া হবে না, সেটা তো কখনো হতে পারে না। কারণ আমাদের সংবিধানে বলা আছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এ রকম নয় যে অন্যের বদনাম কিংবা মানহানি করা যায়।
আজকের পত্রিকা: জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা বাতিলের সুপারিশ করেছিল। সম্পাদক পরিষদ ৯টি ধারার মৌলিক কিছু ত্রুটি চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে ২১ নম্বর ধারাটি অজামিনযোগ্য রয়ে গেছে। অন্য ধারাগুলোতে শাস্তি কমানো ছাড়া মৌলিক কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। এখন তাহলে কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
তানজীব উল আলম: প্রথমত, ২১ ধারার কথা বলা হচ্ছে। সেটা হচ্ছে মূলত মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং বঙ্গবন্ধুর অবমাননা বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয় ডিজিটাল মাধ্যমে, তাহলে এর জন্য শাস্তি হবে। এখন খেয়াল করলে দেখা যাবে, এই কয়েকটি বিষয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং একটি জাতির গড়ে ওঠার যে কাঠামো, তার মৌল ভিত্তি। এ বিষয়গুলো নিয়ে আপত্তিকর চর্চা অবশ্যই বন্ধ করা উচিত বলে সরকার মনে করে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সরকার মনে করছে এ ক্ষেত্রে তারা কোনো ছাড় দেবে না। এটা তো সরকারের পলিসির ব্যাপার। এখন কথা হলো, যারা এ কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনী চায়, তারা আসলে এ কয়েকটি বিষয়ে কী বলতে চায়? আমার জানা মতে, ২১ ধারায় এখনো কোনো মামলা বা কারও কোনো শাস্তিও হয়নি। যে ধারার অধীনে কোনো মামলা হয়নি, সেই ধারা কীভাবে আপত্তিকর হতে পারে? আর এই ধারায় যে কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ আছে, তা বাঙালি জাতির পরিচয়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পলিসিগতভাবে সরকারের যে সিদ্ধান্ত, সেটার কোনো ব্যত্যয় আমি দেখি না।
বাকি যেসব ধারায় শাস্তি কমানোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোতে জামিন অযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এখন কথা হলো, কেউ কোনো অপরাধ করলে, তাকে কেন শাস্তি দেওয়া যাবে না? সেটা তো করা সম্ভব নয়। কারণ, প্রচলিত আইনের কোথাও বলা হয়নি, আপনি অপরাধ করে পার পেয়ে যাবেন। আর শাস্তির বিধানের বিষয়টি প্রয়োগের ওপর নির্ভর করবে। এর যদি অব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাহলে আমি বলব, মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। কেউ যদি অপরাধ করে শাস্তি পায়, তাহলে তো মৌলিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে না। অপরাধ রোধ করা বেশি জরুরি। যদি অপরাধগুলো রোধ করা যায়, তাহলে আমার মনে হয় না নতুন আইনটাকে ড্রাকোনিয়ান আইন বলার সুযোগ থাকবে।
আজকের পত্রিকা: অনেকে বলছেন, ডিজিটাল আর সাইবার নিরাপত্তা আইন পুরোনো বোতলে নতুন মদের মতো। আপনার বক্তব্য কী?
তানজীব উল আলম: এ কথা আসলে বাজারি টাইপের হয়ে গেছে। আপনি যখন মন্তব্য করবেন, তখন তার সারমর্মটা কী? বাস্তব ক্ষেত্রে সেটা কতটুকু প্রয়োগ হচ্ছে, এর বিচার করতে হবে। এমনিতেই পুরো আইনের কাঠামোটা যদি দেখেন, তাহলে দেখা যাবে সেখানে দুটি আইনের কোথাও কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। তাহলে পরিবর্তনটা কোথায় হলো?
আগেরটার সঙ্গে যদি কোনো পরিবর্তন না থাকে, তাহলে এ কথা বলা ঠিক হবে না। এই আইনের মূল জায়গাটা হচ্ছে, অভিযোগগুলো কী ছিল? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মূল অভিযোগ ছিল, এই আইনের ধারাগুলো ড্রাকোনিয়ান, কোনো ধরনের জামিনের ব্যবস্থা নেই, কিংবা কথায় কথায় মামলা দিয়ে জেলে ঢোকানো হয়। সেই সুযোগগুলো আর নেই। কারণ আপনি মামলা করে কাউকে জেলে নিতে পারবেন না। তাহলে আপনি কি বলবেন না, এখানে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন করা হয়েছে? আর আপনি যদি স্বীকার করেন, এখানে একটা পরিবর্তন আছে, তাহলে আপনি এ কথা কীভাবে বলতে পারেন নতুন বোতলে পুরোনো মদ? যাঁরা এ ধরনের কথা বলছেন, তাঁরা আদৌ আইনটি পড়েছেন কি না, আমার সন্দেহ।
আজকের পত্রিকা: ডিজিটাল আইনের অনেক মামলায় বিচারের আগে অনেকে কারাভোগ করেছেন। পরে বিচারে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। কিন্তু এই হয়রানির কোনো প্রতিকার নেই। মিথ্যা মামলার বাদীর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তির বিধান নেই। এ ক্ষেত্রে কী করা উচিত?
তানজীব উল আলম: যেকোনো আইনের সবচেয়ে বড় সমালোচনার জায়গা বিচারের আগে আটক থাকা। কেউ যদি বিদ্বেষবশত কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে বলে আদালতে প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করার বিধান থাকা উচিত। এটা পেনাল কোডে আছে। একই বিধান দেখতে পাবেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। আইনের অপব্যবহার ঠেকানোর জন্য এটা করতে হবে। অপব্যবহার রোধে এমন একটি ধারা সাইবার নিরাপত্তা আইনেও যুক্ত করা যেতে পারে। প্রতিটি সিভিল মামলার বাদী থাকে রাষ্ট্র। এই মামলায়ও ক্ষতিগ্রস্তের পক্ষে রাষ্ট্র বাদী হবে। মিথ্যা মামলা করে রাষ্ট্রের আইন ভঙ্গের কারণে তাকে শাস্তি পেতে হবে।
আজকের পত্রিকা: একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করতে এ ধরনের আইন থাকা কতটুকু যৌক্তিক?
তানজীব উল আলম: একটা আইনের অস্তিত্ব সম্পর্কে যখন আপনি বিশ্লেষণ করবেন, তখন সেই আইনের বিশ্লেষণটা সব সময় পূর্ণাঙ্গ হওয়া উচিত। যাঁরা অংশীজন আছেন, তাঁদের উভয়ের স্বার্থ দেখা আইনের কাজ। যখন আমরা বলি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার। সেই মৌলিক বিষয়ের চর্চাটা করব। আবার কেউ না কেউ তো সেই চর্চার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টা তো খেয়াল রাখতে হবে। এই আইনের যে কয়েকটা ধারা আছে তার মধ্যে অধিকাংশজন কথা বলছেন সপ্তম অধ্যায় নিয়ে। এ অধ্যায়টা হচ্ছে, অফেনস-সম্পর্কিত। এই অধ্যায়ের আগে যে আরও ছয়টা অধ্যায় আছে, আপনি কি বলতে পারেন যে সেগুলোর দরকার নেই বা সেগুলো অপ্রয়োজনীয়? ওই ছয়টা অধ্যায়ে বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ায় যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে বা রিস্কগুলো আছে, তা নিরাময়ের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
এখন আর একটা রাষ্ট্রকে হামলা করার জন্য কামান, গোলা বা যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। বোমা দিয়ে আঘাতের চেয়েও সহজ হলো সাইবার আঘাত হানা। সুতরাং সাইবারের যে নিরাপত্তা, সেটা নিশ্চিত করা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যুদ্ধটা এখন আর সম্মুখ সমরে নেই। সুতরাং সাইবার আঘাত ঠেকানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেব না, তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, ফরেনসিক ল্যাবও তৈরি করব না—তাহলে এ আইনের দরকার নেই। আমরা যদি স্বীকার করি, এ ধরনের সব আঘাত থেকে বাঁচার জন্য এ ধরনের পরিকাঠামো খুবই দরকার, তাহলে এ আইনটিরও দরকার আছে।
দ্বিতীয়ত, ভিকটিমের জায়গা থেকে দেখেন, তাহলে আমরা যদি এ রকম একটা আইন না করি, ফেসবুকে আপনি যদি কারও মানহানি করেন, তাহলে যিনি ভিকটিম, তাঁর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাহলে কি আপনি বলতে পারবেন, একজন নাগরিকের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পেরেছি। সুতরাং আইনের প্রয়োগ কিংবা অস্তিত্ব বিচারে সব সময় উভয় পক্ষের স্বার্থটা চিন্তা করতে হয়। এটা সরকার ও জাতীয় সংসদেরও দায়িত্ব। যে জায়গায়টায় জোর দেওয়া উচিত, আইনটা যখন করা হয়ে যাবে, তখন এই আইনের অপব্যবহার যেন বন্ধ করা যায়। আইনের অপব্যবহার রোধ করা গেলে, নাগরিকের অধিকার খর্ব হওয়ার সুযোগ নেই।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
তানজীব উল আলম: আপনাকে এবং আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তনে এর অপপ্রয়োগ রোধ হবে কি?
তানজীব উল আলম: আমার কাছে মনে হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ক্ষেত্রে মূল যে অভিযোগের জায়গাটা, তাতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন করা হয়েছে। সেই পরিবর্তনটা হচ্ছে, মূলত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটাকে অপব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা সাংবাদিকেরা কোনো রিপোর্ট যখন করেন, সেই বক্তব্য সরকারের পছন্দ না হলে এই আইনে মামলা করে তাঁদের হয়রানি করা হয়েছে। তিনটি ধারার অধীনে মামলাগুলো করা হয়। এক. মানহানিকর কোনো বক্তব্য রাখা হলে; দুই. কোনো বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয় এবং তিন. কোনো বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা দেখা দেয়। আসলে এই তিনটি ধারায় মামলা করে মানুষকে হয়রানি করার কথা বলা হয়।
এই তিনটি ধারায় যদি পরিবর্তন করা হয়, তাহলে তো হয়রানি করার সুযোগ থাকল না, তাহলে কি আপনি বলবেন না, সেটাতে মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে? কারণ বাকি যে বিধানগুলো আছে, সেগুলোতে মানুষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়নি। আমরা সব সময় দেখেছি, এই তিনটি ধারায় বারবার মামলা হয়েছে। তিনটি ধারার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে, মানহানিকর বক্তব্য রাখার জন্য। সেই মামলায় তো এখন জেল দেওয়ার বিধান উঠে গেছে। এখন শুধু জরিমানা করা হবে। যাঁরা বলছেন, মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়নি, তাঁদের পরিষ্কার করতে হবে, মৌলিক পরিবর্তন আসলে কী? মৌলিক পরিবর্তন বলতে যদি
বোঝায় আপনি যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারবেন, কখনোই আপনার বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেওয়া হবে না, সেটা তো কখনো হতে পারে না। কারণ আমাদের সংবিধানে বলা আছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এ রকম নয় যে অন্যের বদনাম কিংবা মানহানি করা যায়।
আজকের পত্রিকা: জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা বাতিলের সুপারিশ করেছিল। সম্পাদক পরিষদ ৯টি ধারার মৌলিক কিছু ত্রুটি চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে ২১ নম্বর ধারাটি অজামিনযোগ্য রয়ে গেছে। অন্য ধারাগুলোতে শাস্তি কমানো ছাড়া মৌলিক কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। এখন তাহলে কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
তানজীব উল আলম: প্রথমত, ২১ ধারার কথা বলা হচ্ছে। সেটা হচ্ছে মূলত মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এবং বঙ্গবন্ধুর অবমাননা বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয় ডিজিটাল মাধ্যমে, তাহলে এর জন্য শাস্তি হবে। এখন খেয়াল করলে দেখা যাবে, এই কয়েকটি বিষয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং একটি জাতির গড়ে ওঠার যে কাঠামো, তার মৌল ভিত্তি। এ বিষয়গুলো নিয়ে আপত্তিকর চর্চা অবশ্যই বন্ধ করা উচিত বলে সরকার মনে করে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সরকার মনে করছে এ ক্ষেত্রে তারা কোনো ছাড় দেবে না। এটা তো সরকারের পলিসির ব্যাপার। এখন কথা হলো, যারা এ কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনী চায়, তারা আসলে এ কয়েকটি বিষয়ে কী বলতে চায়? আমার জানা মতে, ২১ ধারায় এখনো কোনো মামলা বা কারও কোনো শাস্তিও হয়নি। যে ধারার অধীনে কোনো মামলা হয়নি, সেই ধারা কীভাবে আপত্তিকর হতে পারে? আর এই ধারায় যে কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ আছে, তা বাঙালি জাতির পরিচয়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পলিসিগতভাবে সরকারের যে সিদ্ধান্ত, সেটার কোনো ব্যত্যয় আমি দেখি না।
বাকি যেসব ধারায় শাস্তি কমানোর কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোতে জামিন অযোগ্য থেকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। এখন কথা হলো, কেউ কোনো অপরাধ করলে, তাকে কেন শাস্তি দেওয়া যাবে না? সেটা তো করা সম্ভব নয়। কারণ, প্রচলিত আইনের কোথাও বলা হয়নি, আপনি অপরাধ করে পার পেয়ে যাবেন। আর শাস্তির বিধানের বিষয়টি প্রয়োগের ওপর নির্ভর করবে। এর যদি অব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাহলে আমি বলব, মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। কেউ যদি অপরাধ করে শাস্তি পায়, তাহলে তো মৌলিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে না। অপরাধ রোধ করা বেশি জরুরি। যদি অপরাধগুলো রোধ করা যায়, তাহলে আমার মনে হয় না নতুন আইনটাকে ড্রাকোনিয়ান আইন বলার সুযোগ থাকবে।
আজকের পত্রিকা: অনেকে বলছেন, ডিজিটাল আর সাইবার নিরাপত্তা আইন পুরোনো বোতলে নতুন মদের মতো। আপনার বক্তব্য কী?
তানজীব উল আলম: এ কথা আসলে বাজারি টাইপের হয়ে গেছে। আপনি যখন মন্তব্য করবেন, তখন তার সারমর্মটা কী? বাস্তব ক্ষেত্রে সেটা কতটুকু প্রয়োগ হচ্ছে, এর বিচার করতে হবে। এমনিতেই পুরো আইনের কাঠামোটা যদি দেখেন, তাহলে দেখা যাবে সেখানে দুটি আইনের কোথাও কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। তাহলে পরিবর্তনটা কোথায় হলো?
আগেরটার সঙ্গে যদি কোনো পরিবর্তন না থাকে, তাহলে এ কথা বলা ঠিক হবে না। এই আইনের মূল জায়গাটা হচ্ছে, অভিযোগগুলো কী ছিল? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মূল অভিযোগ ছিল, এই আইনের ধারাগুলো ড্রাকোনিয়ান, কোনো ধরনের জামিনের ব্যবস্থা নেই, কিংবা কথায় কথায় মামলা দিয়ে জেলে ঢোকানো হয়। সেই সুযোগগুলো আর নেই। কারণ আপনি মামলা করে কাউকে জেলে নিতে পারবেন না। তাহলে আপনি কি বলবেন না, এখানে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন করা হয়েছে? আর আপনি যদি স্বীকার করেন, এখানে একটা পরিবর্তন আছে, তাহলে আপনি এ কথা কীভাবে বলতে পারেন নতুন বোতলে পুরোনো মদ? যাঁরা এ ধরনের কথা বলছেন, তাঁরা আদৌ আইনটি পড়েছেন কি না, আমার সন্দেহ।
আজকের পত্রিকা: ডিজিটাল আইনের অনেক মামলায় বিচারের আগে অনেকে কারাভোগ করেছেন। পরে বিচারে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। কিন্তু এই হয়রানির কোনো প্রতিকার নেই। মিথ্যা মামলার বাদীর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তির বিধান নেই। এ ক্ষেত্রে কী করা উচিত?
তানজীব উল আলম: যেকোনো আইনের সবচেয়ে বড় সমালোচনার জায়গা বিচারের আগে আটক থাকা। কেউ যদি বিদ্বেষবশত কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে বলে আদালতে প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করার বিধান থাকা উচিত। এটা পেনাল কোডে আছে। একই বিধান দেখতে পাবেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। আইনের অপব্যবহার ঠেকানোর জন্য এটা করতে হবে। অপব্যবহার রোধে এমন একটি ধারা সাইবার নিরাপত্তা আইনেও যুক্ত করা যেতে পারে। প্রতিটি সিভিল মামলার বাদী থাকে রাষ্ট্র। এই মামলায়ও ক্ষতিগ্রস্তের পক্ষে রাষ্ট্র বাদী হবে। মিথ্যা মামলা করে রাষ্ট্রের আইন ভঙ্গের কারণে তাকে শাস্তি পেতে হবে।
আজকের পত্রিকা: একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রোধ করতে এ ধরনের আইন থাকা কতটুকু যৌক্তিক?
তানজীব উল আলম: একটা আইনের অস্তিত্ব সম্পর্কে যখন আপনি বিশ্লেষণ করবেন, তখন সেই আইনের বিশ্লেষণটা সব সময় পূর্ণাঙ্গ হওয়া উচিত। যাঁরা অংশীজন আছেন, তাঁদের উভয়ের স্বার্থ দেখা আইনের কাজ। যখন আমরা বলি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার। সেই মৌলিক বিষয়ের চর্চাটা করব। আবার কেউ না কেউ তো সেই চর্চার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টা তো খেয়াল রাখতে হবে। এই আইনের যে কয়েকটা ধারা আছে তার মধ্যে অধিকাংশজন কথা বলছেন সপ্তম অধ্যায় নিয়ে। এ অধ্যায়টা হচ্ছে, অফেনস-সম্পর্কিত। এই অধ্যায়ের আগে যে আরও ছয়টা অধ্যায় আছে, আপনি কি বলতে পারেন যে সেগুলোর দরকার নেই বা সেগুলো অপ্রয়োজনীয়? ওই ছয়টা অধ্যায়ে বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়ায় যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে বা রিস্কগুলো আছে, তা নিরাময়ের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
এখন আর একটা রাষ্ট্রকে হামলা করার জন্য কামান, গোলা বা যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। বোমা দিয়ে আঘাতের চেয়েও সহজ হলো সাইবার আঘাত হানা। সুতরাং সাইবারের যে নিরাপত্তা, সেটা নিশ্চিত করা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যুদ্ধটা এখন আর সম্মুখ সমরে নেই। সুতরাং সাইবার আঘাত ঠেকানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেব না, তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, ফরেনসিক ল্যাবও তৈরি করব না—তাহলে এ আইনের দরকার নেই। আমরা যদি স্বীকার করি, এ ধরনের সব আঘাত থেকে বাঁচার জন্য এ ধরনের পরিকাঠামো খুবই দরকার, তাহলে এ আইনটিরও দরকার আছে।
দ্বিতীয়ত, ভিকটিমের জায়গা থেকে দেখেন, তাহলে আমরা যদি এ রকম একটা আইন না করি, ফেসবুকে আপনি যদি কারও মানহানি করেন, তাহলে যিনি ভিকটিম, তাঁর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাহলে কি আপনি বলতে পারবেন, একজন নাগরিকের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পেরেছি। সুতরাং আইনের প্রয়োগ কিংবা অস্তিত্ব বিচারে সব সময় উভয় পক্ষের স্বার্থটা চিন্তা করতে হয়। এটা সরকার ও জাতীয় সংসদেরও দায়িত্ব। যে জায়গায়টায় জোর দেওয়া উচিত, আইনটা যখন করা হয়ে যাবে, তখন এই আইনের অপব্যবহার যেন বন্ধ করা যায়। আইনের অপব্যবহার রোধ করা গেলে, নাগরিকের অধিকার খর্ব হওয়ার সুযোগ নেই।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
তানজীব উল আলম: আপনাকে এবং আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১২ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে