আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ আছে, পরিবার নেই

মুলাদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৪, ১০: ১০
আপডেট : ২৫ জুন ২০২৪, ১০: ৩২

বরিশালের মুলাদীতে মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের বেশির ভাগ ঘরেই তালা ঝুলছে। অভিযোগ রয়েছে, জমি ও বাড়িঘর থাকা সত্ত্বেও বরাদ্দ নেওয়ায় এসব ঘরে কেউ থাকছে না। এ ছাড়া অনেক ঘর দিয়েই বর্ষায় পানি পড়ে। মেঝেতে দেখা দিয়েছে ফাটল। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকটও। এ কারণে ঘরগুলো ফাঁকা পড়ে থাকছে।  

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বরাদ্দ পাওয়ার পরও যাঁরা এসব ঘরে থাকছেন না, তাঁদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। 
উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, মুজিব শতবর্ষের আশ্রয়ণ প্রকল্পে কয়েকটি ধাপে উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৪৫৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়। সরকারি জমিতে নির্মিত প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ভূমিহীনদের ২ শতাংশ জমিসহ ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নে ৪০টি, নাজিরপুর ইউনিয়নের সাহেবের চর এলাকায় ৬০টি ও রামারপোল এলাকায় ৩৯টি, সফিপুর ইউনিয়নে ৬৫টি, চরকালেখান ইউনিয়নে ৮২টি, গাছুয়া ইউনিয়নে ৩৫টি, মুলাদী সদর ইউনিয়নে ৭২টি এবং কাজিরচর ইউনিয়নে ৪১টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, নাজিরপুর ইউনিয়নের সাহেবের চর এলাকায় বরাদ্দ দেওয়া ৬০টি ঘরের মধ্যে মাত্র ৪টিতে ভূমিহীন পরিবার বাস করে। বাকি ঘরে তালা ঝুলছে। বাড়িঘর থাকা ব্যক্তিরা বরাদ্দ নেওয়ায় ঘরগুলো খালি পড়ে আছে। এতে সরকারের কয়েক কোটি টাকার প্রকল্পের তেমন কোনো সুফল আসেনি। 

উপজেলার চরকালেখান ইউনিয়নের মৃধারহাট এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর রয়েছে ৮২টি। ওই প্রকল্পে বরাদ্দপ্রাপ্ত মাত্র ১৪টি পরিবার বাস করছে। আরও ৪টি পরিবারকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌখিকভাবে থাকার অনুমতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সফিপুর ইউনিয়নের ৬৫টি ঘরের মধ্যে ২৩টিতে এবং বাটামারার ৪০টির মধ্যে ১৯টিতে বসবাস করছে ভূমিহীনেরা।

অপর দিকে চরকালেখান ইউনিয়নের নোমরহাট এলাকায় বেগম বিবি (৭০) নামের এক নারী ঝুপড়িঘরে বাস করছেন। তাঁকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন এই নারী। 

মৃধারহাট আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা পারুল বেগম বলেন, তিন বছর ধরে আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকছেন তাঁরা। কিন্তু জমির দলিল হাতে না পাওয়ায় ঘরে বিদ্যুৎ-সংযোগ পাননি। এ ছাড়া বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে, মেঝেতে ফাটল দেখা দিয়েছে, কয়েক দিন পরপর নলকূপ নষ্ট হয়ে যায়। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। 

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হানিফ শিকদার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের তালিকা অনুযায়ী ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মা-বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় সন্তানকে ভূমিহীন দেখিয়ে কয়েকজন ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। এসব ঘরের দলিল হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া চলছে। যাঁরা উপহারের ঘরে থাকেন না, তাঁদের দলিল বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে। 
ইউএনও মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, বরাদ্দের ঘর হস্তান্তরের সুযোগ নেই। যাঁরা বরাদ্দ নিয়ে ঘরে থাকেন না, তাঁদের দলিল বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত