সবখানেই সংকট কারমাইকেল কলেজে

শিপুল ইসলাম, রংপুর
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৮: ২০
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১০: ০১

দেশের উত্তরাঞ্চলের জনপদে শিক্ষার বাতিঘরখ্যাত রংপুরের কারমাইকেল কলেজ। অন্যান্য কলেজের তুলনায় মানে এগিয়ে থাকলেও সংকট পিছু ছাড়ছে না কারমাইকেলের। শিক্ষকসংকট, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আবাসনসংকট, ক্যানটিনে নিম্নমানের খাবার, শিক্ষার্থীদের বাসসংকট, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের মাদকের আড্ডা, জমি বেদখল, নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ১০৫ বছর বয়সী ‘উত্তরবঙ্গের অক্সফোর্ড’খ্যাত এই বিদ্যাপীঠ।

শুধু তা-ই নয়, ২০১৮ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিংয়ে দেশের পঞ্চম সেরা নির্বাচিত হওয়া এই কলেজে শিক্ষার্থীদের পড়ার কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই। পাঠাগার থাকলেও পর্যাপ্ত বই নেই। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নেই কোনো অডিটরিয়াম।

কলেজের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১ হাজার। শিক্ষক ১৯৫ জন। সৃষ্ট পদের বিপরীতে ৫৩ জন শিক্ষক কম। সাতটি হলে মাত্র এক হাজার সিট। বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদের ওসমানী ও কারমাইকেল হল দুটি বন্ধ। নির্মাণকাজ শেষ হলেও সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি আরও দুটি হলে। ছাত্রীদের জন্য ৪টি হল থাকলেও বর্তমানে ৩টিতে মাত্র ৬১০ জন বসবাস করতে পারেন।

আবাসনসংকটের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত পরিবহনব্যবস্থা নেই। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে মাত্র তিনটি বাস। বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, পীরগাছা ও কাউনিয়ার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য আরও চারটি বাস প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন কারমাইকেল কলেজের প্রধান সহকারী হাবিবুর রহমান।

ক্যানটিনের খাবারের মান নিম্ন, আসবাব ভাঙাচোরা। এমনকি শিক্ষকেরাও থাকেন পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে। কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদ হাসান দিপু বলেন, ‘আমরা পরিত্যক্ত আবাসিক ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছি। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ এই আবাসিক ভবন সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।’ সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আনারুল ইসলাম বলেন, ক্যানটিনে খাবারের মান ভালো নয়, অথচ খরচ অনেক বেশি।

২০৩ একর আয়তনের কলেজ ক্যাম্পাসে নির্দিষ্ট কোনো সীমানাপ্রাচীর নেই। ফলে সকাল-সন্ধ্যা বহিরাগতদের আনাগোনা চলে। বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন শিক্ষার্থীরা। অনেক সময় বহিরাগতদের আক্রমণের শিকারও হতে হয়। গত ফেব্রুয়ারিতেই এমন ঘটনা ঘটেছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশি অস্ত্র নিয়ে একটি হলে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বহিরাগতরা। এই ঘটনায় অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হন। এর পর থেকেই কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সীমানাপ্রাচীর ও পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের জোরালো দাবি জানাচ্ছেন।

রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান হোসেন বলেন, ভয়ে ভয়ে চলতে হয়। এত পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এই কলেজে ১০৫ বছরেও কোনো পুলিশ ফাঁড়ি হয়নি, এটা দুঃখজনক।

কারমাইকেল কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও কৃষি কমিটির সদস্য তানজিউর রহমান জানান, ২০৩ একরের মধ্যে দুর্বৃত্তরা দখল করে রেখেছে ২ একর জায়গা। স্থানীয় ব্যবসায়ী দুই একর জায়গা দখলে নিয়েছেন। এগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

সংকট, দখল ও নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে জানতে চাইলে কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. আমজাদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কলেজে নানা সংকট রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষকসংকট, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আবাসনসংকট, অডিটরিয়াম, সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে বাসসংকট রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। হলের খাবারের বিষয়ে খোঁজখবর নেব।’ ক্যাম্পাসে কোনো মাদকের আড্ডা বসে না বলে তিনি দাবি করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত