দুই পদে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ

খান রফিক, বরিশাল
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮: ৩৪
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮: ৩৭

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ ‘রেজিস্ট্রার’ ও ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক’। রেজিস্ট্রার ভবনের এই দুটি পদেই প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ দিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ জন্য কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। উপাচার্যের তৎপরতায় যেনতেনভাবে একটি সার্চ কমিটি গঠন করে এক বছরের চুক্তিতে ‘রেজিস্ট্রার’ ও ‘পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক’ নিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।

ইউজিসি বলছে, এ ধরনের নিয়োগ বন্ধে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারপরেও থামছে না। জানতে চাইলে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সচিব ফেরদৌস জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সার্কুলার দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলেছি নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান মানার জন্য। নিয়োগবিধিতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেন তারা (বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়) সার্চ কমিটি করে দুই পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করল, এটা আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযোগ উঠেছে, মেয়াদের শেষ বছরে বিভিন্ন পদে নিজের পছন্দের লোক বসাতে তৎপর হয়ে উঠেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. ছাদেকুল আরেফিন। এরই অংশ হিসেবে ১৪ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার পদে ড. মো. নওয়াব আলীকে এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে স ম ইমানুল হাকিমকে এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৬’ অনুযায়ী এই দুটি পদে নিয়োগের জন্য পাঁচ সদস্যের বাছাই বোর্ড গঠন করার কথা থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। তবে নিয়োগ নিয়ে যাতে প্রশ্ন না ওঠে সে জন্য তিন সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়, যাতে ছিলেন উপাচার্যসহ তিনজন সিন্ডিকেট সদস্য। 

এই সার্চ কমিটি রেজিস্ট্রার পদে শুধু একজন প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করে এবং সিন্ডিকেট তাঁকেই নিয়োগ দেয়। একই ঘটনা ঘটেছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিয়োগের ক্ষেত্রেও। ফলে পুরো নিয়োগ-প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ সিন্ডিকেট সদস্যরাই।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক সদস্য বলেন, গত ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় কোনো কোনো সদস্য এই নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পর্কে আগে কেন জানানো হয়নি, সে প্রশ্ন তুলেছিলেন। দুটি পদেই সার্চ কমিটি মাত্র একজন করে নাম প্রস্তাব করায় অধিকতর যাচাই-বাছাই দরকার বলেও মত দেন তাঁরা। কিন্তু উপাচার্য সার্চ কমিটির দোহাই দিয়ে তা আমলে নেননি।

বিষয়টি নিয়ে আজকের পত্রিকার ঢাকা অফিস থেকে যোগাযোগ করা হলে উপাচার্য ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘ফোনে আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। আপনি বরিশালে এসে সরাসরি দেখা করেন।’ আপাতত বরিশালে যাওয়া সম্ভব নয় জানালে তিনি বলেন, ‘তাহলে আপনি প্রশ্ন লিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা বরাবর আবেদন দেন, তারপর দেখা যাবে।’

জানা গেছে, রেজিস্ট্রার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ড. মো. নওয়াব আলী কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ছাদেকুল আরেফিনের বাড়িও কুষ্টিয়ায়। যে কারণে এ পদে ড. নওয়াবকে নিয়োগ দেওয়ার পথ খুঁজছিলেন তিনি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বরখাস্ত হওয়া প্রথম রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের করা মামলা উচ্চ আদালতে চলমান রয়েছে এখনো।

এদিকে নতুন নিয়োগ পাওয়া রেজিস্ট্রার নওয়াব আলী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও উঁচু পদে দায়িত্ব পাওয়ায় তাঁর বরিশালে আসা অনিশ্চিত বলে জানা গেছে। অপরদিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে নিয়োগ পাওয়া ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক স ম ইমানুল হাকিম যোগদানের দিনই ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোয় এ নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। জানা গেছে, ইমানুল হাকিম ১৮ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পাওয়ার দিনই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়া বিএম কলেজের সাবেক এই অধ্যক্ষের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাও নেই।

গুরুত্বপূর্ণ দুই পদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কেন—জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. মুহসীন উদ্দীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উপাচার্যের ইচ্ছায় নয়, সিন্ডিকেট তাঁদের নিয়োগ দিয়েছে। নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্নই আসে না।’ তিনি বলেন, সার্চ কমিটির কাজ খুঁজে বের করা। তারা সার্চ করে একজন করে প্রার্থী খুঁজে পেয়েছে। নতুন রেজিস্ট্রার ড. নওয়াব আলী যোগদানের জন্য মৌখিকভাবে এক মাস সময় চেয়েছেন বলে তিনি জানান।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিয়োগের বিষয়ে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিয়োগে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা দরকার। আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কোনো অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপককে নিয়োগ দেওয়া যায়। এ জন্য সার্চ কমিটি সিভি আহ্বান করেছিল। এই সিভি আহ্বান প্রক্রিয়া কী করে হলো, তা অবশ্য তিনি বলেননি।

এ নিয়োগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল মান্নান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ ধরনের নিয়োগে জনগণের টাকা যাবে। তাই নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া অবশ্যই অনৈতিক কাজ। একটা বিশ্ববিদ্যালয় যদি এ ধরনের অনৈতিক কাজ করে, তাহলে শিক্ষার্থীরা এখান থেকে কী শিখবে?’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত