অরুণ কর্মকার
১৯৭৫ সালে আমি ছিলাম এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তার বাইরে ছিলাম একজন পুরোদস্তুর রাজনৈতিক কর্মী। যদ্দুর মনে পড়ে, পরীক্ষা ছিল ডিসেম্বরের দিকে।
তাই প্রতিদিন সকাল-বিকেল পড়াশোনার একটা নিয়মিত রুটিনের মধ্যে ছিলাম।
আর একটা কাজ ছিল জীবিকার প্রয়োজনে কিছু ছাত্র পড়ানো।
দেশে রাজনৈতিক ডামাডোল তখন তুঙ্গে। একদিকে জাসদকে ঘিরে সমবেত স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন মত ও পথের সব অশুভ শক্তি। এই শক্তি দেশে যে প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল, তার সুযোগ নেওয়ার জন্য তৎপর বাংলাদেশবিরোধী সব আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রী মহল। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত সর্বদলীয় (স্বাধীনতাবিরোধী দল, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগুলো ছাড়া) শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠার সময় সেটা। অনেক রকম রাজনৈতিক-সাংগঠনিক সংস্কারের সময় চলছে। সে আরেক যুদ্ধই বটে। আমরা নিশ্চিত ছিলাম, এই যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু হেরে গেলে বাংলাদেশ হেরে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশ আর থাকবে না। শেষ পর্যন্ত তা-ই হলো।
’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে দৈনন্দিন পড়াশোনার পাট সেরে রাজনৈতিক কাজে বের হব। কয়েকজন একত্রিত হয়েছি, ঠিক তখন গ্রামের এক কিশোর দৌড়াতে দৌড়াতে আমাদের দিকে আসছে আর চিৎকার করে বলছে, ‘বঙ্গবন্ধুরে মাইরা ফালাইছে। বঙ্গবন্ধু নাই। বঙ্গবন্ধুরে মাইরা ফালাইছে।’ সেই মুহূর্তে আমরা কেউই যেন কিছু বুঝতে পারছিলাম না। আমাদের সমস্ত বোধ-বুদ্ধি যেন হারিয়ে গেছে। সমগ্র পৃথিবীটা যেন এক অসীম শূন্যতায় ভরে গেছে। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে কিশোরের কাছে জানতে চাইলাম, সে কোথায় খবরটা শুনেছে। কী শুনেছে। এর মধ্যে আরও খবর আসতে থাকল। আমরা নিশ্চিত হলাম, বঙ্গবন্ধু নেই। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ হেরে গেছে।
আমাদের দলপতি তপন মুখার্জী স্বগতোক্তির মতো বলে উঠলেন, ‘আবার যুদ্ধে যাইতে হবে।’ মুক্তিযুদ্ধে তপন মুখার্জী ছিলেন একজন নৌ কমান্ডো। রশীদ দা-ও বোধ হয় তাই। শাহজাহান দা মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আমাদের অগ্রজ আরও অনেকে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। আমি আর রতন (মোবারক) মল্লিকসহ কয়েকজন শুরুতে এলাকায় সর্বহারা পার্টির নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনীতে ঢুকে পড়েছিলাম। পরে একপ্রকার পালিয়ে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিই। কাজেই যুদ্ধে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের দলের অধিকাংশেরই ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আমরা সবাই পড়াশোনায় ফিরে যাই। লঙ্গরখানায় পালাক্রমে কাজ করি। রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কাজের চাপও বাড়ে। সেই সময় বাংলাদেশবিরোধী যে রাজনৈতিক কোলাহল সৃষ্টি করা হয়েছিল, তার মধ্যে সর্বহারা পার্টিও সক্রিয় ছিল। আমাদের এলাকায় (ঝালকাঠী-কীর্তিপাশা ও সন্নিহিত অঞ্চল) তাদের একটি শাখা রাজনৈতিক প্রতিপত্তি বিস্তারের পথে বাধা হিসেবে গণ্য করে আমাদের ওপর আক্রমণের পাঁয়তারা করছিল। তাদের আক্রমণের আগে আমরাই সরকারি প্রশাসনের সহায়তায় তাদের অস্ত্রসহ ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করি। সব মিলে আমাদের জন্য এলাকা হয়ে ওঠে এক অগ্নিগর্ভ। এই অবস্থায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলো।
এই হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই মিলে বসা হলো। আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, যুদ্ধে যাওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিতে হবে। টাকা-পয়সা যার কাছে যা আছে, গুছিয়ে রাখতে হবে। চেষ্টা করতে হবে আরও কিছু অর্থকড়ি সংগ্রহ করার। অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ একটি ছোট ব্যাগ গুছিয়ে রাখতে হবে। এমনভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে, যেন যেকোনো সময় আমরা যুদ্ধযাত্রা শুরু করতে পারি। তবে তার আগে পার্টির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হবে। আমরা সবাই তখন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সঙ্গে যুক্ত। যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ। প্রস্তুতি শুরু হলো।
আমাদের সিদ্ধান্ত-সভার দুই দিন
পরে পার্টির একজন সংবাদবাহক এলেন। কী খবর জানার জন্য আমরা সবাই
উন্মুখ। পার্টির বার্তা জানালেন তিনি—তড়িঘড়ি করে স্থানীয়ভাবে কেউ যেন কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়। পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সম্ভাব্য সব পর্যায়ে যোগাযোগ রেখে চলেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা সময়-সময় সবাইকে জানানো হবে। সে অনুযায়ী সবাইকে কাজ করতে হবে। এই খবরে আমরা মর্মাহত হলাম। কিন্তু পার্টির সিদ্ধান্ত কিংবা নির্দেশ অমান্য বা উপেক্ষা করা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে ছিল না।
তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল, পার্টি শিগগিরই খবর পাঠাবে যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। আমাদের আরও বিশ্বাস ছিল, ভারত এবারও নিশ্চয়ই আমাদের ঠেলে ফেলে দেবে না। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ এবং দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার যুদ্ধে বিজয়ী হব। শুরু হলো আমাদের অপেক্ষার পালা। পড়াশোনা, পরীক্ষা—এসব বিষয় তখন মাথা থেকে উধাও হয়ে গেছে। শুধু অপেক্ষা আর খবরাখবর রাখা। এরই মধ্যে জনান্তিকে খবর পাই, কাদের সিদ্দিকী ভারতে চলে গেছেন। তাঁর বাহিনী সংগঠিত হচ্ছে যুদ্ধের জন্য। শুনে আমাদের উন্মুখতা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত খবর আর আসে না।
এভাবে সময় বয়ে যায়। নিত্য নতুন গুজব ডালপালা মেলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। চিহ্নিত ও ছদ্মবেশী স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্ফালন বাড়তে থাকে ক্রমাগতভাবে। মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার সপক্ষশক্তি কোণঠাসা হতে থাকে। এরই মধ্যে একদিন খবর পাওয়া গেল মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থানের। আরও খবর পাই ঢাকার রাজপথে দীর্ঘ মিছিলের, যার পুরোভাগে খালেদ মোশাররফের মা-ও ছিলেন। আমরা আশান্বিত হই। সন্ধ্যায় আমরাও বিক্ষোভ মিছিল বের করি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে, হত্যার বিচার দাবি করে।
এর পরদিনই আবার খবর আসে, খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। তাঁকেসহ অনেককে হত্যা করা হয়েছে। জেলখানায় ঘটে যাওয়া জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের খবরও পাই। এসব ঘটনা আমাদের মধ্যে একটি বিশ্বাস বদ্ধমূল করে তোলে যে যুদ্ধ অনিবার্য। আরেকটি যুদ্ধজয় ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। কিন্তু আমাদের আর সেই যুদ্ধে যাওয়া হলো না। তাই সেই বাংলাদেশকেও আর পাওয়া গেল না। আজকের বাংলাদেশ সেই বাংলাদেশ থেকে যোজন যোজন দূরবর্তী এক দেশ।
তবে ’৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে নির্বাসিত করা হয়েছিল, সেখান থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনা গেছে। আজকের বাংলাদেশে শত্রু-মিত্রনির্বিশেষে সবার ভাবনায় পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব বিরাজমান। আমি বলি, বঙ্গবন্ধু দৃশ্যমানও বটে। প্রতিদিনই তাঁকে দেখা যায় বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে ও প্রান্তরে। বঙ্গবন্ধুকে দেখতে না পেলে কি বাংলাদেশকে দেখতে পাওয়া যায়?
১৯৭৫ সালে আমি ছিলাম এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তার বাইরে ছিলাম একজন পুরোদস্তুর রাজনৈতিক কর্মী। যদ্দুর মনে পড়ে, পরীক্ষা ছিল ডিসেম্বরের দিকে।
তাই প্রতিদিন সকাল-বিকেল পড়াশোনার একটা নিয়মিত রুটিনের মধ্যে ছিলাম।
আর একটা কাজ ছিল জীবিকার প্রয়োজনে কিছু ছাত্র পড়ানো।
দেশে রাজনৈতিক ডামাডোল তখন তুঙ্গে। একদিকে জাসদকে ঘিরে সমবেত স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন মত ও পথের সব অশুভ শক্তি। এই শক্তি দেশে যে প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল, তার সুযোগ নেওয়ার জন্য তৎপর বাংলাদেশবিরোধী সব আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রী মহল। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত সর্বদলীয় (স্বাধীনতাবিরোধী দল, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগুলো ছাড়া) শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠার সময় সেটা। অনেক রকম রাজনৈতিক-সাংগঠনিক সংস্কারের সময় চলছে। সে আরেক যুদ্ধই বটে। আমরা নিশ্চিত ছিলাম, এই যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু হেরে গেলে বাংলাদেশ হেরে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশ আর থাকবে না। শেষ পর্যন্ত তা-ই হলো।
’৭৫-এর ১৫ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে দৈনন্দিন পড়াশোনার পাট সেরে রাজনৈতিক কাজে বের হব। কয়েকজন একত্রিত হয়েছি, ঠিক তখন গ্রামের এক কিশোর দৌড়াতে দৌড়াতে আমাদের দিকে আসছে আর চিৎকার করে বলছে, ‘বঙ্গবন্ধুরে মাইরা ফালাইছে। বঙ্গবন্ধু নাই। বঙ্গবন্ধুরে মাইরা ফালাইছে।’ সেই মুহূর্তে আমরা কেউই যেন কিছু বুঝতে পারছিলাম না। আমাদের সমস্ত বোধ-বুদ্ধি যেন হারিয়ে গেছে। সমগ্র পৃথিবীটা যেন এক অসীম শূন্যতায় ভরে গেছে। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে কিশোরের কাছে জানতে চাইলাম, সে কোথায় খবরটা শুনেছে। কী শুনেছে। এর মধ্যে আরও খবর আসতে থাকল। আমরা নিশ্চিত হলাম, বঙ্গবন্ধু নেই। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ হেরে গেছে।
আমাদের দলপতি তপন মুখার্জী স্বগতোক্তির মতো বলে উঠলেন, ‘আবার যুদ্ধে যাইতে হবে।’ মুক্তিযুদ্ধে তপন মুখার্জী ছিলেন একজন নৌ কমান্ডো। রশীদ দা-ও বোধ হয় তাই। শাহজাহান দা মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। আমাদের অগ্রজ আরও অনেকে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। আমি আর রতন (মোবারক) মল্লিকসহ কয়েকজন শুরুতে এলাকায় সর্বহারা পার্টির নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনীতে ঢুকে পড়েছিলাম। পরে একপ্রকার পালিয়ে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিই। কাজেই যুদ্ধে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের দলের অধিকাংশেরই ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে আমরা সবাই পড়াশোনায় ফিরে যাই। লঙ্গরখানায় পালাক্রমে কাজ করি। রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কাজের চাপও বাড়ে। সেই সময় বাংলাদেশবিরোধী যে রাজনৈতিক কোলাহল সৃষ্টি করা হয়েছিল, তার মধ্যে সর্বহারা পার্টিও সক্রিয় ছিল। আমাদের এলাকায় (ঝালকাঠী-কীর্তিপাশা ও সন্নিহিত অঞ্চল) তাদের একটি শাখা রাজনৈতিক প্রতিপত্তি বিস্তারের পথে বাধা হিসেবে গণ্য করে আমাদের ওপর আক্রমণের পাঁয়তারা করছিল। তাদের আক্রমণের আগে আমরাই সরকারি প্রশাসনের সহায়তায় তাদের অস্ত্রসহ ধরে আইনের হাতে সোপর্দ করি। সব মিলে আমাদের জন্য এলাকা হয়ে ওঠে এক অগ্নিগর্ভ। এই অবস্থায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলো।
এই হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই মিলে বসা হলো। আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, যুদ্ধে যাওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিতে হবে। টাকা-পয়সা যার কাছে যা আছে, গুছিয়ে রাখতে হবে। চেষ্টা করতে হবে আরও কিছু অর্থকড়ি সংগ্রহ করার। অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ একটি ছোট ব্যাগ গুছিয়ে রাখতে হবে। এমনভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে, যেন যেকোনো সময় আমরা যুদ্ধযাত্রা শুরু করতে পারি। তবে তার আগে পার্টির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হবে। আমরা সবাই তখন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সঙ্গে যুক্ত। যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ। প্রস্তুতি শুরু হলো।
আমাদের সিদ্ধান্ত-সভার দুই দিন
পরে পার্টির একজন সংবাদবাহক এলেন। কী খবর জানার জন্য আমরা সবাই
উন্মুখ। পার্টির বার্তা জানালেন তিনি—তড়িঘড়ি করে স্থানীয়ভাবে কেউ যেন কোনো সিদ্ধান্ত না নেয়। পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সম্ভাব্য সব পর্যায়ে যোগাযোগ রেখে চলেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা সময়-সময় সবাইকে জানানো হবে। সে অনুযায়ী সবাইকে কাজ করতে হবে। এই খবরে আমরা মর্মাহত হলাম। কিন্তু পার্টির সিদ্ধান্ত কিংবা নির্দেশ অমান্য বা উপেক্ষা করা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে ছিল না।
তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল, পার্টি শিগগিরই খবর পাঠাবে যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। আমাদের আরও বিশ্বাস ছিল, ভারত এবারও নিশ্চয়ই আমাদের ঠেলে ফেলে দেবে না। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ এবং দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় ফিরিয়ে আনার যুদ্ধে বিজয়ী হব। শুরু হলো আমাদের অপেক্ষার পালা। পড়াশোনা, পরীক্ষা—এসব বিষয় তখন মাথা থেকে উধাও হয়ে গেছে। শুধু অপেক্ষা আর খবরাখবর রাখা। এরই মধ্যে জনান্তিকে খবর পাই, কাদের সিদ্দিকী ভারতে চলে গেছেন। তাঁর বাহিনী সংগঠিত হচ্ছে যুদ্ধের জন্য। শুনে আমাদের উন্মুখতা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত খবর আর আসে না।
এভাবে সময় বয়ে যায়। নিত্য নতুন গুজব ডালপালা মেলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। চিহ্নিত ও ছদ্মবেশী স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্ফালন বাড়তে থাকে ক্রমাগতভাবে। মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার সপক্ষশক্তি কোণঠাসা হতে থাকে। এরই মধ্যে একদিন খবর পাওয়া গেল মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থানের। আরও খবর পাই ঢাকার রাজপথে দীর্ঘ মিছিলের, যার পুরোভাগে খালেদ মোশাররফের মা-ও ছিলেন। আমরা আশান্বিত হই। সন্ধ্যায় আমরাও বিক্ষোভ মিছিল বের করি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে, হত্যার বিচার দাবি করে।
এর পরদিনই আবার খবর আসে, খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। তাঁকেসহ অনেককে হত্যা করা হয়েছে। জেলখানায় ঘটে যাওয়া জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের খবরও পাই। এসব ঘটনা আমাদের মধ্যে একটি বিশ্বাস বদ্ধমূল করে তোলে যে যুদ্ধ অনিবার্য। আরেকটি যুদ্ধজয় ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। কিন্তু আমাদের আর সেই যুদ্ধে যাওয়া হলো না। তাই সেই বাংলাদেশকেও আর পাওয়া গেল না। আজকের বাংলাদেশ সেই বাংলাদেশ থেকে যোজন যোজন দূরবর্তী এক দেশ।
তবে ’৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুকে যেভাবে নির্বাসিত করা হয়েছিল, সেখান থেকে তাঁকে ফিরিয়ে আনা গেছে। আজকের বাংলাদেশে শত্রু-মিত্রনির্বিশেষে সবার ভাবনায় পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব বিরাজমান। আমি বলি, বঙ্গবন্ধু দৃশ্যমানও বটে। প্রতিদিনই তাঁকে দেখা যায় বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে ও প্রান্তরে। বঙ্গবন্ধুকে দেখতে না পেলে কি বাংলাদেশকে দেখতে পাওয়া যায়?
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে