Ajker Patrika

ঢাকা রিজেন্সিতে অনুমোদন অফিসের, ব্যবসা হোটেলের

তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, ঢাকা
ঢাকা রিজেন্সিতে অনুমোদন অফিসের, ব্যবসা হোটেলের

ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের নিকুঞ্জ এলাকায় চার তারকা হোটেল ‘ঢাকা রিজেন্সি’। বড় আকারের কনভেনশন হল, বার, স্পাসহ সব অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে হোটেলটিতে। বিমানবন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় বিপুলসংখ্যক বিদেশি নাগরিকও অবস্থান করেন সেখানে। দীর্ঘদিন খ্যাতির সঙ্গে ব্যবসা করে আসা এই হোটেলটির শুরুটাই হয়েছে অনিয়মের মধ্য দিয়ে।

অনুসন্ধানে নেমে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে রাজউকের কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ফ্ল্যাট কিনে চার তারকা মানের এ হোটেলটি নির্মাণ ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারি বিধিবিধানের তোয়াক্কাই করেননি মালিকেরা। ব্যবসা আবাসিক হোটেলের হলেও সেটির নকশায় অনুমোদন ছিল অফিসের। এ ছাড়া ছোট আকারের আবদ্ধ সিঁড়ি, রাস্তার দখল করে প্রধান ফটক নির্মাণসহ পদে পদে ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে এখানে।

সম্প্রতি বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর আলোচনায় আসে ঢাকা রিজেন্সি হোটেলের ছাদে থাকা প্রায় ২২ হাজার বর্গফুটের ঝুঁকিপূর্ণ রেস্তোরাঁটি। গত শনিবার রাত ৮টার দিকে হোটেলটির প্রধান ফটকে গিয়ে কিছুটা হোঁচট খেতে হলো। হোটেল ভবনটিতে দুই দিক দিয়ে প্রবেশ করা যায়।

পেছনের অংশে লিফট দিয়ে ১৫ তলা ওপরে ওঠার পর সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল ছাদজুড়ে চেয়ার পেতে রেস্তোরাঁ সাজানো। পূর্ব পাশে সুইমিংপুল আর পশ্চিম-দক্ষিণ অংশে বড় আকারের ইমারত করে রান্নাঘর তৈরি করা হয়েছে। সেখানে উন্মুক্তভাবে বারবিকিউর জন্য আলাদা চুলা বসানো হয়েছে। সবচেয়ে বড় ঝুঁকির বিষয় হলো, ছাদ থেকে যে সিঁড়িটি নিচে নামার, তা বন্ধ করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ভবনের ১৫ তলায় রয়েছে বিশাল আকারে বার। সেখানে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমে শত শত মানুষের আড্ডা।

এ আড্ডার বড় একটি অংশ গিয়ে ঠেকে আকর্ষণীয় জোন ছাদে। সেখানে রাতভর চলে নানা আয়োজন। হোটেলটির পেছনের অংশে থাকা প্রবেশপথ দিয়ে ৬-৭ জন ওঠানামা করতে পারে, এমন ছোট আকারের দুটি লিফট রয়েছে। সেখানে আর কোনো সিঁড়ি চোখে পড়েনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অফিস হিসেবে নকশা নিয়ে সেখানে হোটেল করা ইমারত নির্মাণ আইন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি), ফায়ার সার্ভিস আইন ও বাংলাদেশ হোটেল-রেস্তোরাঁ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে চলা এ হোটেলে কোনো ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সেখানে থাকা মানুষের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। ছাদগুলো মূলত যেকোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যেন মানুষ আশ্রয় নিতে পারে, সে জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। কিন্তু সেই ছাদে যদি এমন রেস্তোরাঁ থাকে, তাহলে মহাবিপদ হয়ে যাবে।

রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা গতকাল রোববার নিজ দপ্তরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঢাকা রিজেন্সি হোটেলের বিষয়ে আমরা অভিযান শুরু করতে যাচ্ছি। এখানে নকশার বাইরে গিয়ে স্থাপনা ব্যবহার ও সিঁড়িসহ অন্যান্য বিষয়ও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেব।’

এরপর বিকেলে জানা যায়, ঢাকা রিজেন্সি হোটেলের এই রেস্তোরাঁ গতকাল অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাজউক। সংস্থাটি বলছে, হোটেলের ছাদে নির্মিত রেস্তোরাঁটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ছাড়া বেসমেন্টে নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধ দোকান। ভবনে প্রবেশের একমাত্র সিঁড়িটিও বন্ধ। এসব অপসারণের জন্য গত বছর ২৮ মার্চ রিজেন্সি হোটেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিল রাজউক।

রাজউকের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজউকের তৎকালীন কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম মিল্কী নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক প্লট নম্বর ৪, ৬, ৩১ ও ৩৩ নম্বর প্লটের ওপর বাণিজ্যিক ভবন (রাজউক ট্রেড সেন্টার) ফ্ল্যাটগুলো বিক্রির চুক্তি করেন।

এরপর মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৭১ বর্গফুট ফ্ল্যাট নির্মাণসহ এর মূল্য ধরা হয় ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ঢাকা রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আরিফ মোতাহার স্বাক্ষর করেন। যদিও বর্তমানে এ হোটেলের সার্বিক বিষয় দেখভাল করেন কবির রেজা নামের একজন। মূলত এ কল্যাণ ট্রাস্টের দায়িত্বে থাকার সময় সেখানে বিপুলসংখ্যক দোকান ও অর্থের বিনিময়ে তা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ফ্ল্যাট আকারে বিক্রি করা হয়। আর সেখান থেকে সমিতির নেতা হিসেবে সংশ্লিষ্টরা আর্থিকভাবে লাভবান হন। এরপর এ এলাকার দায়িত্বে থাকা অথরাইজড অফিসার, সহকারী অথরাইজড অফিসার ও ইমারত পরিদর্শকেরা সেখান থেকে নানা সুবিধা নেন। এভাবেই চলছে হোটেলটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মোহাম্মদ আবদুল আহাদ গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিকুঞ্জ এলাকায় কিছু এমন হোটেলের তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। আমরা মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছি, তারা সেখানে রোববার বিকেলে অভিযানে চালিয়েছে।’

এ বিষয়ে কথা বলতে রাজউক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম মিল্কীর ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত