মহিউদ্দিন খান মোহন
আজকাল যাদের ‘কিশোর গ্যাং’ নামে অভিহিত করা হয়, একসময় তাদের বলা হতো ‘বখাটের দল’। সেই সময় এসব বখাটের প্রধান কাজ ছিল গার্লস স্কুলের আশপাশে কিংবা মেয়েদের যাওয়া-আসার পথে নানা রকম উক্তির মাধ্যমে উত্ত্যক্ত করা। তবে সমাজের মুরব্বিদের কারণে এরা বেশি দূর যেতে পারত না।
সহজেই এদের নিবৃত্ত করা যেত। আমি যে সময়টার কথা বলছি সেটা গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশক পর্যন্ত। তখন বখাটেরা অনেক সময় দল বেঁধে ঘুরলেও এখনকার মতো গ্যাংয়ের রূপ ধারণ করেনি। মনে পড়ে, ১৯৭৭ সালে আমি যখন এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তখন একদল কিশোরকে দেখতাম বাজারসংলগ্ন দুই কাঠের ব্রিজের রেলিংয়ে বসে স্কুলগামী মেয়েদের বিব্রত করতে। এদের কাউকে কাউকে চিনতাম।
নিজে এবং বয়োজ্যেষ্ঠ দু-একজনকে দিয়ে বলিয়েও লাভ হলো না। আমি দৈনিক সংবাদের ‘চিঠিপত্র’ কলামে ‘শ্রীনগরে বখাটেদের উপদ্রব’ শিরোনামে একটি চিঠি লিখলাম। চিঠিটি ছাপা হওয়ার পরে এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হলো। যেহেতু আমার অভিযোগে কারও নামোল্লেখ ছিল না, তাই ওই ছেলেগুলো আমাকে কিছু বলে ‘বখাটে’ হিসেবে চিহ্নিত হতে চাইছিল না। তা ছাড়া, ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় আমার পরিচিতিও ছিল।
তারা গিয়ে শ্রীনগর বাজার কমিটির সেক্রেটারি শামসুল আলম খান তোতা মিয়ার কাছে বলল, আমি এই চিঠি লিখে শ্রীনগরের বদনাম ছড়িয়েছি। সেক্রেটারি সাহেব সম্পর্কে আমার মামা। একদিন ডেকে বললেন, ‘এটা করার আগে তো আমাকে বলতে পারতি?’ তাঁকে বললাম, ‘আমার আগে তো এটা আপনার নজরে আসা উচিত ছিল!’ মামা লা জবাব। বললাম, ‘এখন আপনি ওসি সাহেবকে বলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’ ওসি সাহেব কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন জানি না। তবে এরপর আর ওই ছেলেগুলোকে সেই অপরাধকর্মে লিপ্ত হতে দেখা যায়নি।
সেসময়ও কিশোর অপরাধ নিয়ে পত্রিকায় নানান খবর বেরোত। ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন দৈনিক বাংলায় ‘কিশোর অপরাধ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে আমার একটি চিঠি ছাপা হয়। তাতে আমি মন্তব্য করেছিলাম, যেভাবে দিন দিন কিশোরদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে, তা যদি কঠোর হস্তে দমন করা না হয়, তাহলে একসময় ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। যত দূর মনে পড়ে, তাতে আমি কিশোর অপরাধীদের সংশোধনাগারে রেখে সংশোধনের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চরিত্র গঠনের ওপর গুরুত্ব প্রদান, অভিভাবকদের সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়ার কথা বলেছিলাম। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সেই সময়ে আমি নিজেও একজন কিশোর ছিলাম।
ওপরের কথাগুলো কারও কারও কাছে বাহুল্য মনে হতে পারে। কেউ আবার নিজেকে জাহির করার কসরতও মনে করতে পারেন। আসলে তা নয়। মূলত একটি ছোট ঘা সতর্কতা, অবহেলা ও শুরুতে নিরাময়ে তৎপর না হলে যে তা ক্যানসারে রূপ নিতে পারে, সেটা উপলব্ধি করতেই কথাগুলো বলা। বহু আগে থেকেই টঙ্গীতে একটি কিশোর সংশোধনাগার রয়েছে। এখন সেটার কী অবস্থা, জানি না।
সরকারের এই প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত বিপথে যাওয়া কতজন কিশোরকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে, সে পরিসংখ্যানও জানা নেই। হয়তো সে প্রতিষ্ঠানটি এখনো আছে, আছে তার কর্মকর্তা-কর্মচারী, লোক-লস্কর। মাসে মাসে তাঁদের বেতনের টাকা ব্যয় হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। কিন্তু কাজের কাজ কতটা হয় তা বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব থেকেই অনুমান করা যায়।
প্রশ্ন উঠেছে, দেশব্যাপী কিশোর গ্যাংয়ের কেন এই প্রাদুর্ভাব দেখা দিল? এর প্রধান কারণ হিসেবে অনেকেই হয়তো বলবেন, সমাজের সর্বত্র মূল্যবোধের যে অবক্ষয় সৃষ্টি হয়েছে, দেশের কিশোর-তরুণদেরও তা আক্রান্ত করেছে। কথাটা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। আমাদের সমাজে আজ মূলবোধ কতটুকু আছে তা নিয়ে দস্তুরমতো গবেষণা হতে পারে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি, অসাধুতা স্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। সবচেয়ে হাস্যকর হলো, দিনের বেলা যে ব্যক্তিটিকে জনসমাবেশে নীতিবাক্য আওড়াতে দেখা যায়, রাতের অন্ধকারে তিনিই লিপ্ত হন অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে।
যে প্রজন্ম আজ বড় হয়ে উঠছে, তারা তাদের সামনে প্রকৃত দেশপ্রেমিক, সৎ, নীতিমান নেতৃত্ব দেখছে না। তারা দেখছে, সমাজে যে ব্যক্তিটি নেতার আসনে সমাসীন-সমাদৃত, যার সামনের দিকটা আলোয় উদ্ভাসিত, তার পেছনটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। ফলে মানবপ্রেমী, সৎ চরিত্রবান ও দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলার কোনো মডেল তাদের সামনে নেই। আর এরই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাদের অন্ধকারের দিকেই ধাবিত করছে।
একসময়ের বখাটেদের কিশোর গ্যাংয়ে রূপান্তরিত হওয়ার অন্যতম আরেকটি কারণ প্রভাবশালী মহলের প্রশ্রয়। রাজনৈতিক কারণে এসব প্রভাবশালী একশ্রেণির কিশোরকে তাদের স্বার্থসিদ্ধির কাজে ব্যবহার করে থাকে। প্রতিপক্ষের মোকাবিলা, মিছিলে হামলা, সভা-সমাবেশ ভেঙে দেওয়া, জায়গা-জমি দখল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি অনৈতিক কাজে অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এসব কিশোরকে। ‘কচুগাছ কাটতে কাটতে ডাকাত হয়’ বলে একটি প্রবাদ চালু আছে আমাদের দেশে। ঠিক তেমনি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অপকর্মের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে হতে এই বিপথগামী কিশোরেরা একসময় নিজেরাই পরিণত হয় একেক জন গ্যাং লিডারে।
গঠন করে নিজস্ব গ্রুপ। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের সঙ্গে লিপ্ত হয় দ্বন্দ্ব-সংঘাতে। এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখা বা বিস্তার করা কিংবা চাঁদার টাকার ভাগাভাগি নিয়ে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশবিক জিঘাংসায়। ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। যেমনটি অতিসম্প্রতি ঘটে গেল রাজধানীর মিরপুরে। জাতির ভবিষ্যৎ আজকের কিশোর সমাজের এই অধঃপতনে শঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই। কেননা, এরা তো একদিন বড় হবে, সমাজের নেতৃত্ব দিতে শুরু করবে, রাজনীতিতে স্থান করে নেবে। তখন এই সমাজের অবস্থাটা কী দাঁড়াবে ভাবলে গা শিউরে ওঠে।
কিশোরদের একটি অংশের আজকের অধঃপতনের জন্য শুধু কি সমাজ দায়ী? মোটেই নয়। বখে যাওয়া প্রতিটি কিশোরের পরিবারের দায়ও এ ক্ষেত্রে কোনো অংশে কম নয়। পিতা-মাতা যদি তাঁদের সন্তানদের সুশিক্ষা না দেন, সৎপথে চলার উপদেশ না দেন, তাহলে একটি শিশু আলোকিত মানুষ হয়ে উঠবে কীভাবে? চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস বলেছেন, ‘পরিবার হলো একজন মানুষের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।’ কথাটির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
কেননা, একটি শিশু তার পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের যে ধরনের আচরণ করতে দেখবে, সে তা-ই অনুসরণ করবে। পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো শিশুকাল থেকেই সন্তানকে ভালো-মন্দ, নৈতিকতা-অনৈতিকতা, সততা-অসততা সর্বোপরি নিজেকে সত্যিকার মানুষ রূপে গড়ে তোলার জ্ঞান দান করা; যা কিছু সমাজ ও মানুষের জন্য অনিষ্টকর, সেসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য শিশুকে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, বর্তমানে অনেক পিতা-মাতা এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন না। সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েই তাঁদের দায়িত্ব শেষ করেন। সন্তান সুশিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠছে কি না, তারা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, সে খবরও রাখেন না। ফলে অসৎসঙ্গে যখন চূড়ান্ত সর্বনাশ হয়, তখনই তাঁদের টনক নড়ে। কিন্তু তখন আর কিছুই করার থাকে না।
জাতির ভবিষ্যৎ বিনষ্টকারী যে সর্বনাশা কিশোর গ্যাং কালচার আজ সমাজদেহে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছে, এর দায় আমরা কেউই এড়াতে পারব না। এ দায় থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। অন্যথায় জাতির ভবিষ্যৎ গভীর তমসায় ঢাকা পড়তে বাধ্য।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
আজকাল যাদের ‘কিশোর গ্যাং’ নামে অভিহিত করা হয়, একসময় তাদের বলা হতো ‘বখাটের দল’। সেই সময় এসব বখাটের প্রধান কাজ ছিল গার্লস স্কুলের আশপাশে কিংবা মেয়েদের যাওয়া-আসার পথে নানা রকম উক্তির মাধ্যমে উত্ত্যক্ত করা। তবে সমাজের মুরব্বিদের কারণে এরা বেশি দূর যেতে পারত না।
সহজেই এদের নিবৃত্ত করা যেত। আমি যে সময়টার কথা বলছি সেটা গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে আশির দশক পর্যন্ত। তখন বখাটেরা অনেক সময় দল বেঁধে ঘুরলেও এখনকার মতো গ্যাংয়ের রূপ ধারণ করেনি। মনে পড়ে, ১৯৭৭ সালে আমি যখন এইচএসসি পরীক্ষার্থী, তখন একদল কিশোরকে দেখতাম বাজারসংলগ্ন দুই কাঠের ব্রিজের রেলিংয়ে বসে স্কুলগামী মেয়েদের বিব্রত করতে। এদের কাউকে কাউকে চিনতাম।
নিজে এবং বয়োজ্যেষ্ঠ দু-একজনকে দিয়ে বলিয়েও লাভ হলো না। আমি দৈনিক সংবাদের ‘চিঠিপত্র’ কলামে ‘শ্রীনগরে বখাটেদের উপদ্রব’ শিরোনামে একটি চিঠি লিখলাম। চিঠিটি ছাপা হওয়ার পরে এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হলো। যেহেতু আমার অভিযোগে কারও নামোল্লেখ ছিল না, তাই ওই ছেলেগুলো আমাকে কিছু বলে ‘বখাটে’ হিসেবে চিহ্নিত হতে চাইছিল না। তা ছাড়া, ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় আমার পরিচিতিও ছিল।
তারা গিয়ে শ্রীনগর বাজার কমিটির সেক্রেটারি শামসুল আলম খান তোতা মিয়ার কাছে বলল, আমি এই চিঠি লিখে শ্রীনগরের বদনাম ছড়িয়েছি। সেক্রেটারি সাহেব সম্পর্কে আমার মামা। একদিন ডেকে বললেন, ‘এটা করার আগে তো আমাকে বলতে পারতি?’ তাঁকে বললাম, ‘আমার আগে তো এটা আপনার নজরে আসা উচিত ছিল!’ মামা লা জবাব। বললাম, ‘এখন আপনি ওসি সাহেবকে বলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’ ওসি সাহেব কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন জানি না। তবে এরপর আর ওই ছেলেগুলোকে সেই অপরাধকর্মে লিপ্ত হতে দেখা যায়নি।
সেসময়ও কিশোর অপরাধ নিয়ে পত্রিকায় নানান খবর বেরোত। ১৯৭৯ সালের মার্চ মাসে তৎকালীন দৈনিক বাংলায় ‘কিশোর অপরাধ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে আমার একটি চিঠি ছাপা হয়। তাতে আমি মন্তব্য করেছিলাম, যেভাবে দিন দিন কিশোরদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে, তা যদি কঠোর হস্তে দমন করা না হয়, তাহলে একসময় ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে পারে। যত দূর মনে পড়ে, তাতে আমি কিশোর অপরাধীদের সংশোধনাগারে রেখে সংশোধনের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চরিত্র গঠনের ওপর গুরুত্ব প্রদান, অভিভাবকদের সচেতন ও দায়িত্বশীল হওয়ার কথা বলেছিলাম। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সেই সময়ে আমি নিজেও একজন কিশোর ছিলাম।
ওপরের কথাগুলো কারও কারও কাছে বাহুল্য মনে হতে পারে। কেউ আবার নিজেকে জাহির করার কসরতও মনে করতে পারেন। আসলে তা নয়। মূলত একটি ছোট ঘা সতর্কতা, অবহেলা ও শুরুতে নিরাময়ে তৎপর না হলে যে তা ক্যানসারে রূপ নিতে পারে, সেটা উপলব্ধি করতেই কথাগুলো বলা। বহু আগে থেকেই টঙ্গীতে একটি কিশোর সংশোধনাগার রয়েছে। এখন সেটার কী অবস্থা, জানি না।
সরকারের এই প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত বিপথে যাওয়া কতজন কিশোরকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে, সে পরিসংখ্যানও জানা নেই। হয়তো সে প্রতিষ্ঠানটি এখনো আছে, আছে তার কর্মকর্তা-কর্মচারী, লোক-লস্কর। মাসে মাসে তাঁদের বেতনের টাকা ব্যয় হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। কিন্তু কাজের কাজ কতটা হয় তা বর্তমানে কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব থেকেই অনুমান করা যায়।
প্রশ্ন উঠেছে, দেশব্যাপী কিশোর গ্যাংয়ের কেন এই প্রাদুর্ভাব দেখা দিল? এর প্রধান কারণ হিসেবে অনেকেই হয়তো বলবেন, সমাজের সর্বত্র মূল্যবোধের যে অবক্ষয় সৃষ্টি হয়েছে, দেশের কিশোর-তরুণদেরও তা আক্রান্ত করেছে। কথাটা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। আমাদের সমাজে আজ মূলবোধ কতটুকু আছে তা নিয়ে দস্তুরমতো গবেষণা হতে পারে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি, অসাধুতা স্থান পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। সবচেয়ে হাস্যকর হলো, দিনের বেলা যে ব্যক্তিটিকে জনসমাবেশে নীতিবাক্য আওড়াতে দেখা যায়, রাতের অন্ধকারে তিনিই লিপ্ত হন অনৈতিক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে।
যে প্রজন্ম আজ বড় হয়ে উঠছে, তারা তাদের সামনে প্রকৃত দেশপ্রেমিক, সৎ, নীতিমান নেতৃত্ব দেখছে না। তারা দেখছে, সমাজে যে ব্যক্তিটি নেতার আসনে সমাসীন-সমাদৃত, যার সামনের দিকটা আলোয় উদ্ভাসিত, তার পেছনটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। ফলে মানবপ্রেমী, সৎ চরিত্রবান ও দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলার কোনো মডেল তাদের সামনে নেই। আর এরই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তাদের অন্ধকারের দিকেই ধাবিত করছে।
একসময়ের বখাটেদের কিশোর গ্যাংয়ে রূপান্তরিত হওয়ার অন্যতম আরেকটি কারণ প্রভাবশালী মহলের প্রশ্রয়। রাজনৈতিক কারণে এসব প্রভাবশালী একশ্রেণির কিশোরকে তাদের স্বার্থসিদ্ধির কাজে ব্যবহার করে থাকে। প্রতিপক্ষের মোকাবিলা, মিছিলে হামলা, সভা-সমাবেশ ভেঙে দেওয়া, জায়গা-জমি দখল, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি অনৈতিক কাজে অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এসব কিশোরকে। ‘কচুগাছ কাটতে কাটতে ডাকাত হয়’ বলে একটি প্রবাদ চালু আছে আমাদের দেশে। ঠিক তেমনি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অপকর্মের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে হতে এই বিপথগামী কিশোরেরা একসময় নিজেরাই পরিণত হয় একেক জন গ্যাং লিডারে।
গঠন করে নিজস্ব গ্রুপ। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের সঙ্গে লিপ্ত হয় দ্বন্দ্ব-সংঘাতে। এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখা বা বিস্তার করা কিংবা চাঁদার টাকার ভাগাভাগি নিয়ে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশবিক জিঘাংসায়। ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। যেমনটি অতিসম্প্রতি ঘটে গেল রাজধানীর মিরপুরে। জাতির ভবিষ্যৎ আজকের কিশোর সমাজের এই অধঃপতনে শঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই। কেননা, এরা তো একদিন বড় হবে, সমাজের নেতৃত্ব দিতে শুরু করবে, রাজনীতিতে স্থান করে নেবে। তখন এই সমাজের অবস্থাটা কী দাঁড়াবে ভাবলে গা শিউরে ওঠে।
কিশোরদের একটি অংশের আজকের অধঃপতনের জন্য শুধু কি সমাজ দায়ী? মোটেই নয়। বখে যাওয়া প্রতিটি কিশোরের পরিবারের দায়ও এ ক্ষেত্রে কোনো অংশে কম নয়। পিতা-মাতা যদি তাঁদের সন্তানদের সুশিক্ষা না দেন, সৎপথে চলার উপদেশ না দেন, তাহলে একটি শিশু আলোকিত মানুষ হয়ে উঠবে কীভাবে? চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস বলেছেন, ‘পরিবার হলো একজন মানুষের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।’ কথাটির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।
কেননা, একটি শিশু তার পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের যে ধরনের আচরণ করতে দেখবে, সে তা-ই অনুসরণ করবে। পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো শিশুকাল থেকেই সন্তানকে ভালো-মন্দ, নৈতিকতা-অনৈতিকতা, সততা-অসততা সর্বোপরি নিজেকে সত্যিকার মানুষ রূপে গড়ে তোলার জ্ঞান দান করা; যা কিছু সমাজ ও মানুষের জন্য অনিষ্টকর, সেসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য শিশুকে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, বর্তমানে অনেক পিতা-মাতা এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন না। সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েই তাঁদের দায়িত্ব শেষ করেন। সন্তান সুশিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠছে কি না, তারা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, সে খবরও রাখেন না। ফলে অসৎসঙ্গে যখন চূড়ান্ত সর্বনাশ হয়, তখনই তাঁদের টনক নড়ে। কিন্তু তখন আর কিছুই করার থাকে না।
জাতির ভবিষ্যৎ বিনষ্টকারী যে সর্বনাশা কিশোর গ্যাং কালচার আজ সমাজদেহে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছে, এর দায় আমরা কেউই এড়াতে পারব না। এ দায় থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। অন্যথায় জাতির ভবিষ্যৎ গভীর তমসায় ঢাকা পড়তে বাধ্য।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে