Ajker Patrika

চোরাই বিদ্যুতে দোকানে আলো

জহিরুল আলম পিলু, কদমতলী
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ২১
চোরাই বিদ্যুতে দোকানে আলো

সন্ধ্যা নামলেই শত শত বাতি জ্বলে ওঠে। ফুটপাত ও মূল রাস্তার একটি অংশ দখল করে বসা প্রায় তিন শ দোকানের বাতি। রাস্তার পাশে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে এসব দোকানে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার সামাদ সুপার মার্কেট থেকে শহীদ ফারুক রোডের খানকা শরিফ মসজিদ পর্যন্ত রাস্তায় এই রমরমা অবৈধ কারবার। যার নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় একটি শক্তিশালী চক্র। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ দিয়ে প্রতি মাসে প্রায় তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। এতে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব থেকে। 

 অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ চক্রের মূল হোতা আওলাদ হোসেন নামের একজন। যাত্রাবাড়ীর স্বামীবাগ কার্যালয়ের ডিপিডিসির একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে তিনি এসব করে যাচ্ছেন। আওলাদের সঙ্গে চক্রের অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করছেন ফায়েম ওরফে অস্ত্র ফায়েম, শাকিল ওরফে চাঁদাবাজ শাকিল, শফি ওরফে বাবা শফি ও শামু ওরফে বোম শামু। এরা একসময় বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ সংযোগের বিনিময়ে চক্রটি ফুটপাতের প্রতি দোকান থেকে দৈনিক ৩০ থেকে ৪০ টাকা করে নিচ্ছে। এতে সব মিলিয়ে মাসে প্রায় তিন লাখ টাকা চাঁদা উঠছে। যার একটি অংশ চলে যায় বিদ্যুৎ অফিসে কর্মরত কিছু অসাধু ব্যক্তির পকেটে। অবৈধ সংযোগ নিতে তাঁরা স্থানীয় হকারদের ধোঁকাও দিচ্ছে। 
দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ১০৪/এ শহীদ ফারুক সড়ক। যে বাড়ির বিদ্যুতের মিটার দেখিয়ে চক্রটি হকারদের সংযোগ নিতে বলছে। এমনকি লোক দেখিয়ে কয়েকটি সংযোগ সেখান থেকেই দেওয়া হচ্ছে। মুন্না নামের স্থানীয় এই বাড়ির মালিকের অভিযোগ, চক্রের সদস্যরা নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁর বাড়ি থেকে কয়েকটি সংযোগ নিয়েছে। তা ছাড়া, বেশির ভাগই রাস্তার খুঁটি থেকে নেওয়া অবৈধ সংযোগ।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগে কয়েকটি দোকানে সংযোগ দেওয়া হতো স্থানীয় ইয়াছিন মিঠুর বাড়ি থেকে। ইয়াছিন এমন অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করলে চক্রের সদস্যরা তাঁর বাড়ির সংযোগ দুবার কেটে দেয়। মিঠু অভিযোগ করে বলেন, ‘তাদের কাজে বাধা দেওয়ায় দেড় মাস আগে তারা আমার ছোট ভাই ও আমাকে মারধর করেছিল। এ বিষয়ে আমি থানায় একটি জিডিও করেছি।’

এদিকে ফুটপাতের হকার বাবুল বলেন, ‘আমরা তো সংযোগের বিষয়ে খুব একটা জানি না। তবে কিছুটা বুঝতে পারি। কারণ, সাধারণ একটা লাইটের জন্য আমাদের কাছ থেকে ৩০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আর আমরা গরিব মানুষ। কোনোরকমে পেট চালাই। তাই বাধ্য হয়ে এদের কাছ থেকেই সংযোগ নিই।’  এদিকে ২৬ জানুয়ারি বিকেলে স্বামীবাগ ডিপিডিসির একটি টিম যাত্রাবাড়ীতে তাদের বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে নেওয়া অবৈধ সংযোগগুলো বন্ধ করে দেয়। সেদিন রাতেই চক্রটি ডিপিডিসির কাউকে না জানিয়েই রাতের অন্ধকারে ফের বিদ্যুৎ-সংযোগ নিয়ে নেয়। অভিযোগ বিষয়ে জানতে আওলাদকে ফোন দেওয়া হলে তাঁর স্ত্রী ফোন ধরেন। আওলাদের স্ত্রী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার স্বামীর নামে একটি মহল নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি এসব কাজের সঙ্গে জড়িত নন। হকাররা অবৈধ হতে পারে কিন্তু দোকানের সংযোগগুলো বৈধ।’  

অভিযোগ নিয়ে স্বামীবাগ ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কোনো কর্মকর্তা এসবের সঙ্গে জড়িত নন। তারপরও আমরা তদন্ত করব। যদি কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তবে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। তা ছাড়া, কেউ অবৈধ সংযোগ দিলে আমরা তা তদারকি করে খবর পাওয়ামাত্র কেটে দিচ্ছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি।’    

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত