নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বন্যা: নদী-খালের বাঁধই গলার কাঁটা

লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১: ১৫

দেশের পূর্বাঞ্চলে বন্যার পানি ঢোকে প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। গত কয়েক দিনে সেখানকার কয়েকটি জেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। পরিস্থিতির উন্নতিও হয়েছে কয়েক জেলায়। তবে লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীতে বন্যার পানি কমছে ধীরে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দুই জেলায় অধিকাংশ খাল-নদী দখল হয়ে গেছে। কোনো কোনো নদী ও খালে অপরিকল্পিতভাবে দেওয়া হয়েছে বাঁধ। এতে করে পানি নেমে যেতে পারছে না। দুই জেলায় এখনো মানুষ পানিবন্দী।

চলমান বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল নোয়াখালী সদর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলায়। জেলায় ১০ দিনের বেশি সময় ধরে এখনো পানিবন্দী প্রায় ১৭ লাখ মানুষ। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্যাকবলিত আট উপজেলার খালগুলোর প্রায় বেশির ভাগ অংশই বেদখলে। বিশেষ করে প্রতিটি বাজারের অংশে যে খালগুলো রয়েছে, সেগুলোর ৯০ শতাংশই দখল। খালের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাট, কোথাও কোথাও বাঁধ দিয়েছে অনেকে। খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় বন্ধ হয়েছে পানির গতিপথ।

পুরো জেলায় কয়টি খাল রয়েছে, এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে স্বীকার করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল। তিনি বলেন, নোয়াখালী খাল ও ওয়াপদা খাল তাঁদের রেকর্ডে রয়েছে। যেগুলো প্রায় সময় সংস্কার করে থাকেন তাঁরা। 
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা প্রশাসকের রাজস্ব বিভাগে কাগজে-কলমে অনেক খালের খালের হিসাব থাকলেও বাস্তবে তা নেই। কয়েক বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রভাবশালীরা খালগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে ইজারা দিয়েছেন; নিজেরাও দখল করেছেন। 
প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় জেলার বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনী থেকে এসব খাল হয়ে পণ্যবাহী নৌকা জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং পাশের লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও চাঁদপুরে যেত। এখন নৌকা চলা তো দূরের কথা, এসব খাল দিয়ে পানিও নামে না।

বাঁধের পর বাঁধ
লক্ষ্মীপুরে গত চার দিনে পানি নেমেছে দুই থেকে আড়াই ফুট। তবে এখনো তলিয়ে রয়েছে জেলার ৫৮টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকা। পানিবন্দী রয়েছে ১০ লাখ মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে ছোট-বড় প্রায় ১১০টি খাল রয়েছে। এসব খালে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ বাঁধ রয়েছে। এসব খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করেছেন প্রভাবশালীরা। এতে বন্যার পানি নামতে পারছে না।

ডাকাতিয়া ও ভুলুয়া নদী, রহমতখালী এবং বিরোন্দ্রখাল পানি নিষ্কাশনের অন্যতম পথ। প্রায় ২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এসব নদী বা খাল মিশেছে মেঘনা নদীতে। এই খালগুলো দখল হয়েছে। কোথাও কোথাও হয়েছে দূষণ। খালের ওপর বাঁধ রয়েছে কোথাও কোথাও। এতে করে পানি নামতে পারছে না।

রামগতির বাসিন্দা জাফর আহমদ গনি বলেন, অবৈধভাবে প্রভাবশালীরা ডাকাতি, রহমতখালী খালসহ বিভিন্ন খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দ্রুত পানি সরছে না।

এদিকে লক্ষ্মীপুর অংশের উপকূলীয় অঞ্চলকে বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে প্রায় ৫ যুগ আগে মেঘনা নদীর পাশে নির্মাণ করা হয় ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এই বেড়িবাঁধের আশপাশে রয়েছে ঘরবাড়ি এবং জেগে ওঠা কয়েক হাজার একর ফসলি জমি। গত চার দশকে সেই এলাকা দখল কিংবা ইজারা নিয়ে তৈরি করা হয় মাছের ঘের ও পুকুর। এতে রুদ্ধ হয়েছে পানিপ্রবাহের পথ। ফলে মেঘনার জোয়ার, অতিবৃষ্টি ও বন্যার পানি নামতে না পারায় প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। এসব এলাকায় গত চার দিনে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও তেমন উন্নতি হয়নি। 

এই পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে খালের ওপর নির্মিত বাঁধ অপসারণ শুরু করেছে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত