পাহাড়ি ময়না বিপন্ন

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ৫৮
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ৪৮

সুন্দর পাখি পাহাড়ি ময়না। কথা বলতে পারে বলে এ পাখির চাহিদা অনেক। সে কারণে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ময়না এখন বিপন্ন প্রায়। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় পাহাড়ি ময়না অন্যতম আশঙ্কাযুক্ত প্রাণী হিসেবেও অন্তর্ভুক্ত। ২০১২ সালে বাংলাদেশের বন্য প্রাণী আইনেও এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

পাহাড়ি ময়না বা ময়না স্টার্নিডি (Sturnidae) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত গ্রাকুলাদের (Gracula) অন্তর্গত এক প্রজাতির মাঝারি আকারের ‘কথা বলা’ পাখি। সুন্দর পাখি পাহাড়ি ময়নার রং একনজরে চকচকে নীলচে-কালো, ডানার গোড়ায় এক টিপ সাদা রং, কমলা রঙের ঠোঁটটির অগ্রভাগ হলুদ। পা-ও হলুদ। এদের মূল সৌন্দর্য ঘাড়ের ওপরের টকটকে হলুদ রঙের লতিকাটায় মনে হয় মাথার পেছন দিকে হলুদ ইমিটেশনের গয়না পরেছে পাখিটি। চোখের নিচের এক টিপ হলুদ ও চোখের পাশ দিয়ে বয়ে আসা হলুদ রেখাটা মিশেছে ঘাড়ের হলুদে, তারপরে ঠোঁটও কমলা, এ এক আশ্চর্য সুন্দর কম্বিনেশন।

ময়নার ইংরেজি নাম কমন হিল ময়না। বৈজ্ঞানিক নাম গ্রাকুলা রিলিজিওসা (Gracula religiosa)। দৈর্ঘ্য ২৫ থেকে ২৯ সেন্টিমিটার। ওজন ২১০ গ্রাম। দেশের বিভিন্ন চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কে থাকা ময়নাদের অনেকগুলোই ‘ময়না ময়না’ জাতীয় শব্দ করতে পারে। আরও কিছু মুখস্থ বুলিও আওড়ায়। এরা পাহাড়-জঙ্গলের অনেক পাখির ডাক নকল করে ডাকতে পারে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ময়নার সংখ্যা কত, সে বিষয়ে কোনো শুমারি না থাকলেও বন বিভাগ বলছে পাহাড়ি ময়নার সংখ্যা কমেছে। খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, ‘বন্য প্রাণী নিরাপত্তা আইন ২০১২ অনুযায়ী পাহাড়ি ময়না হত্যা ও শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ ময়না শিকার করলে এক বছরের জেল ও এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কেউ পুনরায় একই অপরাধ করলে দুই বছরের জেল এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।’ময়নার ছানা পার্বত্য এলাকা থেকে সুকৌশলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার হয়। দামও চড়া। প্রতি জোড়া ময়না বয়স ভেদে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

খাগড়াছড়িতে প্রায় তিন বছর ধরে বন্য প্রাণীর ছবি তুলছেন সবুজ চাকমা। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে যেসব বন্য প্রাণী মানুষের শিকারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে হরিণ ও হিল ময়না। শৌখিন পাখি প্রেমিকদের কাছে ময়নার কদরও বেশি।’ খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, মহালছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, পানছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলার পাহাড়ি অরণ্যে হিল ময়না শিকারের তৎপরতা বেশি। পানছড়ির পাখি শিকারি ইলিয়াস মোল্লা বলেন, ‘বর্ষা ছাড়া বছরের অন্য সময়ে পাখি শিকার করি। প্রতি জোড়া ময়না ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করি। এসব ময়না ঢাকা ও চট্টগ্রামে বেশি যায়। তবে এখন গাছপালা কমে যাওয়ায় পাখির সংখ্যাও কমে গেছে।’

খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ন কবির বলেন, ‘গত বছরের অক্টোবরে খাগড়াছড়িতে শিকার হওয়া দুটি পাহাড়ি ময়না আলুটিলা পাহাড়ে অবমুক্ত করা হয়। খাগড়াছড়ি বন বিভাগ পাহাড়ি ময়না পাচার ও শিকার রোধে তৎপর রয়েছে। আমাদের কাছে খবর এলেই আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিই।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত