হাজিদের সেবা দিতে চলতি হজ মৌসুমে রাষ্ট্রীয় খরচে অন্তত ৫৭০ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সৌদি আরবে যাবেন। তাঁদের মধ্যে শতাধিক জন ইতিমধ্যে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। তবে হাজিদের সেবা না দিয়ে তাঁরা দায়িত্বে অবহেলা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের অনেকে দল বেঁধে ইচ্ছেমতো কেনাকাটা ও দর্শনীয় স্থানে ঘোরাঘুরি করছেন।

কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে তায়েফ ভ্রমণ করায় ইতিমধ্যে ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সৌদি আরবের বাংলাদেশ হজ অফিস। এ ছাড়া হজযাত্রায় নির্ধারিত পরিমাণের বেশি রিয়াল বহন করায় সৌদি আরবে বাংলাদেশের তিন হজ এজেন্সির দুই মালিককে গ্রেপ্তার করেছে সৌদি পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সৌদি আরবে অবস্থানরত ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মো. মতিউল ইসলাম। তিনি গতকাল শনিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া ৯ জন তায়েফে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এটা তাঁরা করতে পারেন না। এমন যেন আর কেউ না করে, সে জন‍্যই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। হাজিদের সেবার দায়িত্বে অবহেলায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাব সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় খরচে হজযাত্রীদের সেবার জন্য সৌদি আরবে যান, তাঁদের অনেকে দায়িত্ব পালন করেন না। অতীতেও এ ধরনের বহু অভিযোগ রয়েছে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে না। ৯ জনকে শোকজ করাই এর প্রমাণ।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মচারী জানান, অনেক কর্মচারী হাজিদের নয়, প্রশাসনিক দলের সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সেবায় ব্যস্ত থাকেন। মন্ত্রী, এমপি, সচিবসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং ভিআইপি হাজিদের প্রটোকল দিতেই ব্যস্ত থাকেন অনেকে।

জানা গেছে, হজ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা দিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে হজ প্রশাসনিক দল, সহায়তাকারী দল, চিকিৎসক দল, কারিগরি দলসহ বিভিন্ন দল। এসব দলে ভাগ হয়ে তাঁরা যাবেন সৌদিতে। তাঁদের যাবতীয় ব্যয় মেটানো হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেড অনুযায়ী খরচ দেওয়া হলেও গড়ে জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা খরচ হবে। সে হিসাবে এ খাতে সরকারের ব্যয় হবে সাড়ে ২৮ কোটি টাকা।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্লাইট ২১ মে শুরু হয়েছে। শেষ ফ্লাইট ২২ জুন। অন্যদিকে, হজ শেষে দেশে ফেরার ফ্লাইট শুরু হবে আগামী ২ জুলাই। ফিরতি ফ্লাইট শেষ হবে ২ আগস্ট। এ বছর মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশির হজে যাওয়ার অনুমতি আছে।

জানা গেছে, চলতি হজ মৌসুমে হজ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সৌদি আরবে কাউন্সিলরের (হজ) নেতৃত্বে কাজ করতে মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় তিনজন সহকারী হজ অফিসার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তাঁদের অধীনে হজ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অন্তত ৫৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবার সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে হজ প্রশাসনিক দল, সহায়তাকারী দল, চিকিৎসক দল ও কারিগরি দলসহ বিভিন্ন দলের ৫২৩ জন সদস্যের নামে অফিস আদেশ জারি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

এর বাইরে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের হজ প্রতিনিধিদল গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, মাদারীপুর-১ আসনের এমপি তাহমিনা বেগম, ডাক ও টেলিযোগাযোগসচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, সড়কসচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণসচিব মো. আজিজুর রহমান, হাব সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম প্রমুখ। হজ প্রতিনিধিদলের জুনের ২২ তারিখে হজে যাওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে, অতিরিক্ত রিয়াল বহনের অভিযোগে সৌদি আরবে বাংলাদেশের তিনটি হজ এজেন্সির দুই মালিককে গ্রেপ্তার করেছে সৌদি পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও হজের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন এক বিজ্ঞপ্তিতে তাঁদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মক্কায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কোবা এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. মাহমুদুর রহমান এবং তাঁর ছেলে ইউরো এয়ার ইন্টারন্যাশনাল ও আহসানা মালয়েশিয়া হজ মিশনের মালিক সাদ বিন মাহমুদ। বাবা-ছেলে নগদ ৯ লাখ সৌদি রিয়াল বহন করছিলেন, যা সৌদি আইন অনুযায়ী সীমার অতিরিক্ত।

এ বিষয়ে আশকোনা হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁরা এক দিনে যে পরিমাণ নগদ টাকা উত্তোলন করেছেন, তা সন্দেহজনক মনে হয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে। তাই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’