কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১৩: ১৪

মৌলভীবাজার জেলায় আমন ধানের গাছে মড়ক দেখা দিয়েছে। জমিতে ধানগাছ পচে নষ্ট হচ্ছে। গাছের গোড়া পচা রোগ ও পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক। কৃষি বিভাগ বলছে, জমিতে সালফার ও পটাশের অভাবে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

জেলার রাজনগর, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন জমিতে হঠাৎ ধানগাছে গোড়া পচা ও পাতা মরা রোগ দেখা দিয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, পাকা ধানের মাঠ। আদতে ফলন আসার আগেই গোড়া পচে ধানগাছ খড়ে পরিণত হয়েছে। পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে ধীরে ধীরে ধানগাছ জমিতেই মারা যাচ্ছে। তা ছাড়া নানা জাতের কীটপতঙ্গের আক্রমণ বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। বিশেষ করে কারেন্ট পোকার উৎপাত বেড়েছে বেশি। এতে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

রাজনগর উপজেলার কৃষক ছানু মিয়া বলেন, ‘প্রথমে ব্লাস্ট মনে করে ওষুধ স্প্রে করেছি, কোনো কাজ হয়নি। পরে কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে কারেন্ট পোকার ওষুধ স্প্রে করেছি। দেখা যাক, কী হয়। সমস্যা হচ্ছে, আক্রান্ত জমিতে যেমন স্প্রে করতে হয়, তেমনি পাশের আক্রান্ত নয় এমন জমিতেও স্প্রে করতে হচ্ছে, যাতে নতুন করে সংক্রমণ না হয়।’

পোকা দমনে জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষক। তাতেও সুফল মিলছে না। সংকট সমাধানে বিঘাপ্রতি কৃষকের খরচ বেড়েছে হাজার টাকার ওপরে।

একই এলাকার কৃষক জুয়েল খান বলেন, ‘আমি ১০ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছি। অর্ধেক জমি আক্রান্ত পোকায় ও গোড়া পচায়। অন্য বছর ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা প্রতি বিঘায় খরচ হতো। এ বছর অতিরিক্ত ওষুধসহ প্রতি বিঘায় ৮ হাজার টাকার ওপরে খরচ হচ্ছে।’

কৃষক হান্নান মিয়া বলেন, ‘কৃষি বিভাগ শুধু বড় বড় কৃষককে সহায়তা করে; আমরা ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকেরা সহযোগিতা পাই কম। প্রতি বিঘায় ফলন পাওয়ার কথা ছিল ১৮ থেকে ২০ মণ ধান। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে এখন ১২ থেকে ১৫ মণের বেশি মিলবে না।’

ধানের গোড়া পচার কারণ হিসেবে ছত্রাকের আক্রমণ এবং পাতা মরার পেছনে জমিতে পটাশের অভাবের কথা বলছে কৃষি বিভাগ। পরিমাণমতো কুইকপটাশ ও কীটনাশক জমিতে ছিটানোর পরামর্শ মৌলভীবাজার কৃষি কর্মকর্তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজারের উপপরিচালক মো. সামসুদ্দিন বলেন, ‘জেলার তিনটি উপজেলায় এ সমস্যা একটু বেশি দেখা দিয়েছে। অন্যান্য উপজেলায়ও সমস্যা আছে। তবে এই আক্রমণ ও আক্রান্ত বেশি পরিমাণ জমিতে না, অল্প কিছু জমি ক্ষতির শিকার হবে। তবে ব্যাপকভাবে যেন পোকার আক্রমণ 
না ছড়ায়, এ জন্য আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করছি।’

চলতি মৌসুমে জেলায় আমন আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে, যা গতবারের চেয়ে ২০০ হেক্টর বেশি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত