চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি

মুনতাসির সিয়াম
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০: ১৮

উচ্চশিক্ষা গ্রহণে অনেক শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তাঁদের মধ্যে আবার পছন্দের ক্যাম্পাস ও পছন্দের বিষয়ে পড়তে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পড়তে চান অনেকে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা। বেশ কিছু ইউনিটে বিভক্ত হয়ে পরিচালিত হয় চবির ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রম। আজ চবির ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ তুলে ধরছি। 

বাংলা
চবির ‘ডি’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা প্রশ্নে বাংলা বিষয়টি সবার আগে দেওয়া থাকে। সচরাচর সাহিত্য নির্ভর প্রশ্ন ও ব্যাকরণ বিভাগ মিলিয়ে মোট ৩০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। বাংলায় ভালো করার জন্য পাঠ্য বই দুটির বিকল্প নেই। বাংলা প্রথম পাঠের গদ্য ও পদ্য অংশের লেখক পরিচিতি, শব্দের অর্থ, কবিতার মাত্রা-ছন্দসহ খুঁটিনাটি বিষয়গুলোতে জানার স্বচ্ছতা থাকা ভীষণ জরুরি। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে মো. আবু বকর সিদ্দিক স্যারের লেখা ‘অভিযাত্রী বাংলা’ এবং মুখস্থ অংশের জন্য ‘অভিযাত্রী এটিএম’ বই দুটি অনুসরণ করে বেশ ভালো ফল পেয়েছিলাম। এ বইয়ের টপিক সাজানোর ধরনটা খুব সাবলীল। বাংলা বিষয়ের টপিকগুলো বুঝতে সহায়ক। 

ইংরেজি
ইংরেজির জন্য মেধাবী হওয়ার পরও অনেক শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন থেমে যায় বা ভর্তি হতে পারলেও পছন্দের বিষয় পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে যায়। ভর্তির সুযোগের ক্ষেত্রে ইংরেজি দক্ষতা শিক্ষার্থীদের অনেকটাই এগিয়ে দেয়। বাংলার মতো ইংরেজি বিষয়ে প্রশ্নের পূর্ণমান ৩০ নম্বর। এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে বেসিক ভালো থাকা জরুরি। সত্যিকার অর্থে, অ্যাডভান্স ইংরেজি প্রশ্ন প্যাটার্ন বুঝে উত্তর করা সম্ভব নয়। বেসিক ক্লিয়ার করার পর শিক্ষার্থীদের উচিত অ্যাডভান্স ইংরেজি গ্রামারের প্রশ্নগুলো বারবার অনুশীলন করে যাওয়া। বেসিক টু অ্যাডভান্স যাত্রায় জাহাঙ্গীর আলম স্যারের লেখা ‘মাস্টার ইংলিশ’ বইটি খুব সহায়তা করেছে আমার ইংরেজি বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য। এ বিষয়ে আরও বড় একটি সমস্যা মনে করা হয় ভোকাবুলারি অংশটি। ভোকাবুলারির জন্য বিগত বছরের বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় আসা ভোকাবুলারিগুলো পড়লে মোটামুটি কভার করা সম্ভব, মাস্টার ইংলিশ নামের বইটিতে তা গোছানো পেয়েছিলাম। সেই সঙ্গে জয়কলির ‘Barron’s & Cliffs TOEFL’ বইও বেশ সহায়ক। অনুশীলনের জন্য এ দুটি বই বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া Quora অনলাইন আ্যপের গ্রামারের উদাহরণগুলোও বেশ কার্যকর। 

অপশনাল বিষয়
বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞানমূলক প্রশ্নেরও উত্তর দেওয়ার নিয়ম। তবে সাধারণ জ্ঞানের বদলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা উচ্চতর গণিত এবং মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা অর্থনীতি বিষয়ের প্রশ্নে উত্তর দেওয়ার সুযোগ পায়। সহজভাবে বললে, তিনটি বিষয়ের মধ্যে যে কোনো একটি বিষয় বেছে উত্তর দেওয়ার সুযোগ রয়েছে; যা মোট ২০ নম্বর নির্ধারণ করে। আমি সাধারণ জ্ঞান অপশন বেছে নিয়েছিলাম। সাধারণ জ্ঞানের পরিধি বিশাল হওয়ায় অপ্রাসঙ্গিক টপিকগুলো বাদ দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এ বিষয়ে প্রস্তুতির জন্য জয়কলির সাধারণ জ্ঞানের বই অনুসরণ কার্যকর হয়েছে আমার বেলায়। সেই সঙ্গে অনলাইন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে সাধারণ জ্ঞান চর্চা ও পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। সাধারণ জ্ঞানের সাম্প্রতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে জোবায়ের আহমেদ স্যারের লেখা ‘জুবায়ের’স জিকে’ নামের তিন খণ্ডের ক্যাপসুল বইও খুব সহযোগী ছিল। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের বদলে সাম্প্রতিক বিষয়ের জন্য ক্যাপসুল বই তিনটি অনেকটাই সময় বাঁচায়। 

বিগত বছরের প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা
প্রশ্নব্যাংক বিশ্লেষণ না করে একজন শিক্ষার্থীর জন্য প্রশ্নের প্যাটার্ন বোঝা সম্ভব নয়। প্রশ্নব্যাংক পড়ার মাধ্যমে বোঝা যায় যে, কোন কোন টপিক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রশ্ন হওয়ার জন্য সম্ভাবনাময়; আর কোন টপিকগুলো বাদ দিলেও, ক্ষতি নেই—সেটা জানা যায়। বলে রাখা জরুরি, বিগত বছরের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো থেকে কম বেশি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেই পুনরাবৃত্তি হয়। সব মিলিয়ে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতির জন্যই প্রশ্নব্যাংক অনুসরণ আবশ্যক। 

পাঠ্যবই পড়ার গুরুত্ব
অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতির সময় পাঠ্যবইগুলো এড়িয়ে চলে। আসল রহস্য হচ্ছে, পাঠ্যবইয়ের ওপর ভিত্তি করেই প্রশ্নপত্র সাজানো হয়। পরীক্ষায় টিকতে চাইলে পাঠ্যবই অনুশীলনের বিকল্প নেই। 

পত্রিকা পড়া
নিজের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বুঝতে পেরেছি, সাধারণ জ্ঞান অংশের প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া জরুরি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ঘটমান সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর ওপর। এ জন্য নিয়মিত পত্রিকা পড়ার মধ্য দিয়েই সাম্প্রতিক বিশ্বের বিপুল তথ্য জানা সম্ভব। 

মানসিক প্রস্তুতি
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে শুরু হয় হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। এর জন্য অবশ্য পরিশ্রম ও অধ্যবসায় প্রয়োজন। ভর্তি যুদ্ধের লড়াইয়ে চবি ছিল আমার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়, যার জন্য এ যাত্রায় সফল হওয়ার উদ্দেশ্যে শুরু থেকেই সিরিয়াস ছিলাম এবং বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ার পরো বিজ্ঞানভিত্তিক ইউনিটের জন্য ভালো প্রস্তুতি না থাকায় টার্গেট ছিল ‘ডি’ ইউনিটে ভর্তির সুযোগ অর্জন। টার্গেট রাখলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ইউনিটে পরীক্ষা দেব আগে থেকেই ঠিক থাকলে, ভর্তি যুদ্ধ যাত্রার সফরটা সহজ হয়ে ওঠে। জীবনে সামনে কী নিয়ে এগোব এবং কোন ইউনিটে পরীক্ষা দিলে গোছানো প্রস্তুতি হবে—এ দিকগুলো মাথায় রেখে নিজেকে শুরু থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে। 

সময় ব্যবস্থাপনা
প্রস্তুতি ভালো হওয়ার পরও অনেকের ক্ষেত্রে মানসিক চাপে বা ঘাবড়ে গিয়ে সময় ব্যবস্থাপনা গুলিয়ে ফেলে কিংবা ব্যবস্থাপনার অভাবে পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই ফুরিয়ে যায় সময়, যার জন্য সময় ব্যবস্থাপনা জরুরি। তবে এ বিষয়টি নির্ভর করে মূলত শিক্ষার্থীর ওপরেই। নিজেকে বুঝে এবং নিজের দক্ষতা যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজের মতো করে সময় ব্যবস্থাপনার ছক সাজাতে হবে, যার মাধ্যমে সঠিক সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে পারবে। এর ফলে ভর্তির সুযোগ অর্জনের যুদ্ধে আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। 

অনুলিখন: মুনতাসির সিয়াম

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত