পরিযায়ী পাখিতে মুখর হাওর

রাজন চন্দ, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৪১
Thumbnail image

সুদূর সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পরিযায়ী পাখির আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘রামসার সাইট’খ্যাত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ হাওর। বিশাল জলরাশির এ হাওরে শীতের শুরু থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটছে। চারদিকে পাখিদের কলকাকলিতে আশপাশের এলাকা যেন উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে।

এসব পরিযায়ী পাখি কখনো জলকেলি, কখনো খুনসুটি কিংবা খাদ্যের সন্ধানে এক হাওর থেকে অন্য হাওরে গলায় স্বর তুলে ঝাঁকে ঝাঁকে আকাশে উড়ছে। এসব পরিযায়ী পাখি দেখতে পাখিপ্রেমীরা প্রতিবছরের মতো এবারও ভিড় করছেন টাঙ্গুয়ার হাওরে। পাখির কলতান আর পর্যটকের আগমনে হাওরের সৌন্দর্য বেড়েছে দ্বিগুণ।

স্থানীয়রা জানান, পরিযায়ী পাখির সঙ্গে আমাদের দেশীয় প্রজাতির পাখি বক, পানকৌড়ি, গাঙচিল, মাছরাঙা যোগ হওয়ায় হাওরাঞ্চলের নান্দনিকতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকমুখে পরিচিত ছয় কুড়ি কান্দা ও নয় কুড়ি বিলের এ বিশাল জলরাশির টাঙ্গুয়ার হাওরে শীতের শুরু থেকে অস্ট্রেলিয়া, সাইবেরিয়াসহ বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করে টাঙ্গুয়ার হাওরে আসে পাখি।

পাশাপাশি শনির হাওর, মাটিয়ান, কানা মিয়াসহ আশপাশের হাওরে এসব অতিথি পাখি অবস্থান নেয়। এদের মধ্যে মৌলভি হাঁস, বালিহাঁস, লেঞ্জা, সরালি, পিয়ারি, কাইম, কালাকুড়া, রামকুড়া, মাথারাঙা, কানিবক, পানকৌড়ি ও অন্যান্য প্রজাতির পাখি খাদ্যের সন্ধানে এক হাওর থেকে অন্য হাওরে ডানা ঝাঁপিয়ে উড়ে বেড়ায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কিছু না কিছু পর্যটক নৌপথে টাঙ্গুয়ার হাওরে এসেছেন। প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য ও পাখির কোলাহল উপভোগ করছেন তাঁরা। কেউ কেউ পাখির কলতান শুনছেন মুগ্ধ হয়ে, কেউবা পাখিদের ক্যামেরাবন্দী করতে ব্যস্ত।

কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক নাদিম কবির বলেন, ‘শীতকালে টাঙ্গুয়ার হাওরে পরিযায়ী পাখির আগমন এক অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। পাখিদের মনোমুগ্ধকর ও কোলাহল উপভোগ করতে এ হাওর ভ্রমণে এসেছি।’

টাঙ্গুয়ার হাওর তীরবর্তী ভবানীপুর গ্রামের শিক্ষক নীহার রঞ্জন তালুকদার বলেন, ‘ছোট থাকতে শীতে টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা পরিযায়ী পাখির কোলাহলে আমাদের ঘুম ভাঙত। তবে কয়েক বছর ধরে আর আগের মতো অতিথি পাখি আসে না। আমরা চাই টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য গড়ে উঠুক।’

টাঙ্গুয়ার হাওর তীরবর্তী দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বজিত সরকার বলেন, প্রতিবছর শীতে টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখি দেখতে অনেক পর্যটক আসেন। এসব পাখিপ্রেমী মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করেন। কিন্তু থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের মারাত্মক বিপাকে পড়তে হয়।

বিশ্বজিত সরকার আরও বলেন, ‘আমরা চাই টাঙ্গুয়ার হাওর পর্যটকবান্ধব হোক। তবে অবশ্যই হাওরের জীববৈচিত্র্যের কোনো ক্ষতি না করে।’

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির বলেন, শীত মৌসুমেও টাঙ্গুয়ার হাওরে অনেক পর্যটকের আগমন দেখা যাচ্ছে। তবে হাওরে প্রয়োজনীয় খাবার বা রাত কাটানোর ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে একটি আবেদন জমা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত