আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি বিক্রি

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১৪: ০৩

নীলফামারীর সৈয়দপুরে ভূমিহীন মানুষদের জন্য নির্মিত উত্তরা আবাসন প্রকল্পের বাড়ি অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন অনেক উপকারভোগী। কেউ কেউ ভাড়া দিয়েছেন; আবার কিছু ঘরে বরাদ্দপ্রাপ্তরা না থাকায় বছরের পর বছর তালা ঝুলছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাঁরা সচ্ছল ও যাঁদের জমি আছে, তাঁদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকে বাড়িগুলোকে কেন্দ্র করে মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠে উত্তরা আবাসন প্রকল্প। এতে এক হাজার ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। সেখানে দুই শতক জমিসহ একটি করে বাড়ির মালিকানা দেওয়া হয় বাসিন্দাদের। শর্ত অনুযায়ী বরাদ্দপ্রাপ্তদের অবশ্যই ভূমিহীন হতে হবে এবং বরাদ্দ দেওয়া বাড়ি বিক্রি ও হস্তান্তর করতে পারবেন না। এই শর্ত ভেঙে ২২৪টির মতো বাড়ি বেচে দেওয়া হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে।

আবাসন প্রকল্পে গিয়ে ৩৪/২ নম্বর বাড়িতে কথা হয় আকবর হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, বাড়িটি তাঁর নামে বরাদ্দ নয়। এর মূল মালিক কলিম উদ্দিন। কলিমের কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বাড়িটি কিনেছেন তিনি।

এভাবে রশিদুল হকের ২/৭ নম্বর বাড়িটি কিনে নিয়েছেন আয়াস আলী, ২/৬ নম্বর বাড়িটি মমেনা বেগমের কাছ থেকে কিনে আশরাফুল ইসলাম গুদাম বানিয়েছেন আর ২/৯ নম্বর বাড়িটি জাহানারা বেগম বিক্রি করেছেন মাঝিয়া বেগমের কাছে।

বাসিন্দারা জানান, যাঁরা ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই নিজ নিজ বাড়ি রয়েছে। কয়েকজনের এমনকি চারতলা বাড়ি আছে। তাই আশ্রয়ণের  ২৬টির মতো বাড়িতে তালা ঝুলছে। অনেকে একেকটি বাড়ি ১ থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। যাঁরা বাড়ি কিনেছেন, তাঁদের অনেকে নানা অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। তদন্ত করে অবৈধ ক্রেতাদের উচ্ছেদের দাবি জানান তাঁরা।

প্রকল্পের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা জিকরুল হক বলেন, তাঁর বাড়ির অপর প্রান্তের বাড়িটি যাঁর নামে বরাদ্দ ছিল, তিনি সেটি অন্য একজনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। যিনি কিনেছেন তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িত। গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদকের আখড়া। এতে এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকা দায় হয়ে গেছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে, কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আরেক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, মো. সেলিম হোসেন নামের একজনকে ৬৯/৭ নম্বর বাসাটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেলিম এবং তাঁর এক ছেলে সরকারি চাকরি করেন। তাই আবাসনের বাড়িতে তাঁরা থাকেন না। দীর্ঘদিন ধরে এটি তালাবদ্ধ আছে।

এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফয়সাল রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি উপজেলায় নবাগত। শর্ত ভেঙে আবাসনের বাড়ি বিক্রির বিষয়টি জানা নেই। এটি তদন্ত করে দেখা হবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া যাঁরা অপরাধে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত