Ajker Patrika

শব্দদূষণে অতিষ্ঠ নগরবাসী

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ৫৩
শব্দদূষণে অতিষ্ঠ নগরবাসী

শব্দদূষণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দারা। দিন-রাত বিকট শব্দে যানবাহনের হর্ন, মাইকে নানা কর্মসূচির প্রচারে ব্যাঘাত ঘটছে ঘুমের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। ঘুমের ব্যাঘাতের কারণে দুশ্চিন্তা, উচ্চরক্তচাপসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।

বিধিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৫৫ ডেসিবেল থাকার কথা। রাতের অন্য সময়ে এই মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের এই মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৭০ ও ৬০ ডেসিবেল। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের জরিপে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। চট্টগ্রাম নগরীর আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় নির্ধারিত এই মান মাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নগরীর প্রায় প্রত্যেক এলাকায় নির্ধারিতের চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দদূষণ ঘটছে। আইনে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সে সব স্থানে উল্টো দ্বিগুণ মাত্রায় শব্দদূষণ ঘটছে।

নগরীর মেহেদীবাগ এলাকার বাসিন্দা শাফায়েত জামিল বলেন, নগরীতে এখন যে হারে শব্দদূষণ বাড়ছে, এতে বাসায় থাকাও দায় হয়ে পড়েছে। সড়কে বের হলে শুনতে হয় বাস-ট্রাকের মাত্রাতিরিক্ত হর্ন। শীতকাল আসলে এই দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এসব কারণে রাতেও ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়। বাসায় বৃদ্ধ অথবা রোগী থাকলে তাঁদের অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে ওঠে।

শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো নেওয়া হচ্ছে না—এমন অভিযোগ এনে জামিল বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মধ্যে হাইড্রোলিক হর্নের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা চালায়। তবে আবাসিক এলাকার শব্দদূষণ নিয়ে তাদের কখনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি।’

গত সেপ্টেম্বরে নগরীর ৩০টি স্থানে জরিপ চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। এতে দেখা গেছে, ‘নীরব এলাকা’ শ্রেণিভুক্ত ১৫টি স্থানে শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে ৬৭ দশমিক ৬ থেকে ৮১ দশমিক ৫ ডেসিবেল পর্যন্ত। অন্যদিকে ৭টি আবাসিক এলাকায় ৬৭ দশমিক ৫ থেকে ৭৩ দশমিক ৫ ডেসিবেল পর্যন্ত। অপরদিকে ৫টি বাণিজ্যিক এলাকায় ৭৯ দশমিক ৫ থেকে ৯৪ দশমিক ৫ ডেসিবেল পর্যন্ত পাওয়া গেছে।

অক্টোবর মাসেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। ওই মাসে পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, এসব পয়েন্টে আগের মতোই শব্দদূষণের ঘটনা ঘটছে। জরিপে নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও হাসপাতাল এলাকায় শব্দের মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭৯ দশমিক ৫ ডেসিবেল। যেখানে শব্দের এই মানমাত্রা থাকার কথা ছিল ৪৫ ডেসিবেল।

একই অবস্থা নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল, ফয়’স লেক এলাকার ইউএসটিসি হাসপাতাল, আন্দরকিল্লার জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, লালখান বাজারের মমতা ক্লিনিক, একে খান এলাকার আল আমিন হাসপাতাল, পাঁচলাইশ এলাকার সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, মুরাদপুরের একুশে হাসপাতাল, মেহেদীবাগ এলাকার ম্যাক্স হাসপাতাল সামনেও। এসব এলাকায় গড়ে ৭০ ডেসিবেল শব্দের রেকর্ড করা হয়েছে।

নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ও বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১০০ ডেসিবেলের বেশি মাত্রার শব্দদূষণে মানুষের শ্রবণশক্তি হারানোর আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। যে কারণে আমরা সব সময় স্কুল-হাসপাতালের সামনে হর্ন না দেওয়ার পরামর্শ দিই। শূন্য থেকে ৫০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ করা যাবে। কিন্তু এর চেয়ে উচ্চমাত্রায় শব্দ করে কথা বললেও সেটি ছোট ছেলে-মেয়ে, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। অ্যাম্বুলেন্স যে সাউন্ড করে যায়, এটাও অনেক বেশি শব্দদূষণ করে।’

নগরীর চান্দগাঁও, হালিশহর, কল্পলোক, হিলভিউ আবাসিক এলাকায়ও শব্দের দূষণ অনেক বেশি। জরিপে দেখায় এসব এলাকায় সর্বনিম্ন ৬৯ দশমিক ৫ ডেসিবেল থেকে সর্বোচ্চ ৭৮ দশমিক ৫ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দের মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। অক্সিজেন মোড়, সিইপিজেড, আগ্রাবাদ মোড়, বহদ্দারহাট মোড়সহ ৫টি বাণিজ্যিক এলাকায় শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে ৮৩ দশমিক ৫ থেকে ৯২ দশমিক ৫ ডেসিবেল পর্যন্ত।

আবাসিক এলাকায় শব্দদূষণ আরও মারাত্মক রকমের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে বলেও জানান মুজিবুল হক খান। তিনি বলেন, ‘একজন লোকের দিনে কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। কিন্তু আবাসিক এলাকায় যদি রাতেও শব্দদূষণ হয় তখন মানুষের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে। যে কারণে দুশ্চিন্তা, উচ্চরক্তচাপসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগবেন তাঁরা। যা পরবর্তীতে হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগারের পরিচালক ইশরাত রেজা বলেন, ‘শব্দদূষণ রোধে আমরা মাঝেমধ্যে অভিযান চালাই। জরিমানাও করা হয়, কিন্তু হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার রোধ করা যাচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত