সাবান–পাউডারে কারারক্ষীদের শান্ত করার চেষ্টা

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
Thumbnail image

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন কারাগারে কারারক্ষীরা নানা দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাঁদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত পদোন্নতি, বেতনবৈষম্য দূর করা, অন্যান্য বাহিনীর মতো আজীবন রেশন সুবিধা এবং কারাগারের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্যের লভ্যাংশ দেওয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে কারা অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্যের লভ্যাংশের অর্থ দিয়ে রক্ষীদের প্রতি মাসে ৭টি পণ্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা অধিদপ্তর।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেশের ৬৮টি কারাগারের কারারক্ষীরা তাঁদের বিভিন্ন দাবির পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় সহায়তাসহ কর্মকর্তাদের কথিত অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন। তাঁরা কোথাও কোথাও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কারা অধিদপ্তর সব কারাগারের জেলার ও জেল সুপারদের রক্ষীদের দাবিগুলো লিখিতভাবে জানাতে বলে। তখন কারারক্ষীদের দাবিগুলো সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বাছাই করে ১০টি দাবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন।

কারারক্ষীদের দাবিগুলোর একটি হচ্ছে, কারাক্যানটিন ও কারাবেকারিতে উৎপাদিত পণ্য থেকে পাওয়া লভ্যাংশ তাঁদেরকেও দিতে হবে। ওই লাভের অর্থ জেলার ও জেল সুপার ইচ্ছেমতো খরচ করেন বলে অভিযোগ কারারক্ষীদের। তাঁদের দাবি, জেল সুপার হিসেবে তাঁদের মাসে একবার যে ‘বড়খানা’ দেওয়া হয়, তাতেই সব টাকা খরচ হয়ে যায়।

কারারক্ষীদের দাবির মুখে কারা অধিদপ্তর কারাক্যানটিন ও কারাবেকারি থেকে পাওয়া লভ্যাংশ দিয়ে রক্ষীদের সাতটি পণ্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল সুজাউর রহমান এক আদেশে কারাগারগুলোতে এসব পণ্য সরবরাহের নির্দেশ দেন। নির্দেশনায় যে সাতটি পণ্য দিতে বলা হয়েছে, সেগুলো হলো ৫০০ গ্রাম ডিটারজেন্ট, ১০০ গ্রামের গায়ে মাখা সাবান, ২৫০ গ্রাম ডিশ ওয়াশিং বার, ২০০ গ্রাম গুঁড়া দুধ, ২০০ গ্রাম চা-পাতা, চার প্যাকেট ইনস্ট্যান্ট নুডলস এবং এক কেজি আয়োডিনযুক্ত লবণ।

জানা গেছে, রাজধানীর মহাখালীর এনআরএস ১৩ নামে একটি প্রতিষ্ঠান কারারক্ষীদের এসব পণ্য সরবরাহ করবে। চলতি মাস থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে। ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চলতি মাসের পণ্য সব কারাগারে পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরের পণ্য প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে কারাগারগুলোতে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। রক্ষীদের জন্য মাসিক বরাদ্দ পণ্য ৭টির দাম ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা। 

দুর্নীতির তথ্য জানানোর ব্যবস্থা
এ ছাড়া ১০ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল সুজাউর রহমান স্বাক্ষরিত আরেক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য জানাতে নবনিযুক্ত কারা মহাপরিদর্শক একটি বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার চালু করেছেন। এই নম্বরে সারা দেশ থেকে কারারক্ষীরা তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার কথা কারা মহাপরিদর্শককে জানাতে পারবেন। আদেশে বলা হয়েছে, যেসব কারারক্ষী ও কর্মকর্তা সুপারিশ বা অভিযোগ জানাবেন, তাঁদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। কারাগারের সমস্যার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতেও নিষেধ করা হয়েছে আদেশে।

কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘কারারক্ষীদের কিছু দাবি ছিল। আমরা কিছু দাবি সমন্বয় বা পূরণ করেছি। আর অন্যান্য বাহিনীর মতো আজীবন রেশন দেওয়ার দাবির মতো বড় সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত