পরিবারেও অনিরাপদ অনেক কন্যাশিশু

অর্চি হক, ঢাকা
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ০৯: ৫৩

মাত্র ছয় হাজার টাকা ঋণ শোধ করতে না পেরে নিজ শিশুকন্যাকে পাওনাদারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। শিশুটি প্রায় এক বছরে কয়েকবার ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের আগে তাকে ঘুমের ও জন্মনিরোধক ওষুধ সেবনে বাধ্য করা হতো। ঘটনাটি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের একটি বস্তির।

শুধু বস্তি নয়, অভিজাত এলাকার বিত্তশালী পরিবারের কন্যাশিশুও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। একান্নবর্তী পরিবারে স্বজনের নির্যাতনের ঘটনাও আছে। এমন এক কন্যাশিশুর মা বলেন, মেয়েকে তার চাচার কাছে পড়তে পাঠাতেন। তিনিই তাকে ধর্ষণ করেছেন। মেয়ে ভয়ে কিছু বলেনি। গৃহকর্মীর মাধ্যমে জানলেও পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে এই জঘন্য অনাচার গোপন রাখেন।

মানবাধিকার ও শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, অনেক কন্যাশিশু পরিবারেই অনিরাপদ। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত—সব শ্রেণির পরিবারেই ঘটছে এমন ঘটনা। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৯৩টি কন্যাশিশু। অর্থাৎ দিনে গড়ে দুজনের বেশি। একই সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৩২৯ জন। নিপীড়কদের একটি অংশ পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয়, পরিবারের ঘনিষ্ঠজন ও গৃহকর্তা। নিজ বাসায়ও এমন ঘটনার শিকার হয়েছে কন্যাশিশু। এমন প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের মতো আজ বুধবার বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ইনভেস্ট ইন গার্লস রাইটস: আওয়ার লিডারশিপ, আওয়ার ওয়েল-বিয়িং’। 

২০২২ সালে প্রকাশিত মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা ইনসিডিন ‘বাংলাদেশে শিশুর প্রতি সহিংসতা পরিস্থিতি’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫৫ শতাংশ শিশু নিজের পরিবারেই যৌন হয়রানির শিকার হয়।

মানবাধিকার সংগঠন আমরাই পারি জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, মেয়েশিশুরা নিজের চেনা পরিমণ্ডলেই বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয়। ১৩ থেকে ১৫ বছরের কিশোরীরা বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয়।’

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ধর্ষণের শিকার কন্যাশিশুদের মধ্যে ২৯ জনের বয়স ছয় বছরের নিচে। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম আট মাসে পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে ৩০ কন্যাশিশু।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, কন্যাশিশুদের নিরাপদ রাখতে কঠোর আইনের পাশাপাশি মানুষকে সচেতনও করতে হবে। বাংলাদেশ কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি বলেন, পরিবারেই কন্যাশিশুর ওপর মানসিক নির্যাতন হয় সবচেয়ে বেশি। কন্যাশিশুকে নিরাপদ রাখতে হলে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ছেলেসন্তানদেরও ছোটবেলা থেকে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরই বড় ভূমিকা নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত