Ajker Patrika

‘হামাগোর পেডের দায়ে দেশ-বিদেশ ঘুরি’

মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ৫৩
‘হামাগোর পেডের দায়ে দেশ-বিদেশ ঘুরি’

পশ্চিম আকাশে রক্তিম সূর্যের আলোকছটা তখন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। এ সময় চোখ যায় অস্থায়ী ‘বাইদ্যাপল্লির’ দিকে। মূলত বেদেদের আঞ্চলিক ভাষায় বাইদ্যা বলা হয় থাকে। পরিত্যক্ত ফসলি মাঠে ছোট-ছোট বাঁশের খুঁটির ওপর দড়ি টানা দিয়ে টাঙানো হয়েছে কালো প্লাস্টিকের ছাউনি। ওই ছাউনিগুলোই বেদে সম্প্রদায়ের আবাসস্থল। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নে দেখা মেলে এমন দৃশ্যের।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে গ্রামগঞ্জে পরিভ্রমণ বা গাওয়াল শেষে দলে দলে বেদেপল্লিতে ফিরছেন বেদে নারীরা। আবার কিছু নারী রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আর বেদে পুরুষেরা কেউ শিশু কোলে নিয়ে বসে আছেন, আবার কেউ রান্নার উপকরণ হিসেবে লাকড়ি কাটছেন। ছোট ছেলেমেয়েরা মেতে আছে খেলাধুলায়।

ইসকিলিম বিবি নামক এক বেদে নারী বলেন, ‘হামাগোর বাপের বাড়িও যা, সোয়ামির (স্বামী) বাড়িও তা। জীবন চলি যাইচ্ছে পেডের দায়ে দেশ-বিদেশ ঘুরি ঘুরি।’

বেদেদের সূত্রে জানা যায়, ৩৬টি পরিবারে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫০ জন সদস্য নিয়ে ওখানে অস্থায়ী বাসস্থান গড়ে তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা সাভার। বছরের ছয় মাস তাঁরা নিজেদের স্থায়ী ঠিকানা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এইভাবেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দলবদ্ধভাবে যান বলে জানান মো. দুলাল সাপুড়িয়া।

দুলাল জানান, তাঁরা যেখানেই যান আগে থেকেই সেখানকার খোঁজখবর নেন। পরে সেখানকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় থাকার ব্যবস্থা করেন। বেদেরা জানান, বেদে পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি কর্মঠ। পুরুষেরা ঘরের ও সাংসারিক কাজকর্ম করেন, আর নারীরা বের হন গাওয়ালে। কেউ সাপের খেলা দেখান। কেউ আবার নিজেদের তৈরি বিভিন্ন ওষুধ বিক্রি করেন।

মোছা. চাঁদনী নামে আরেক বেদে নারী বলেন, ‘শ্বশুর-শাশুড়িসহ চারজন এখানে আছি আমরা। আমি এবং আমার শাশুড়ি দুজনই ভোর হতে বিকেল অবধি সাপের খেলা দেখাই এবং গাওয়াল করি। শ্বশুর এবং স্বামী তাঁরা তাঁবুতে থাকেন। তাঁরা টুকটাক সাংসারিক কাজকর্ম করেন।’

মো. মইনা মিয়া নামের এক ষাটোর্ধ্ব বেদে বলেন, ‘আমি একসময় সাপের খেলা দেখাতাম। এখন মাথা ও কোমরের ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগের গাছন্ত ওষুধ দিই। আগে গ্রামগঞ্জে আমার তৈরি ওষুধের বিরাট কদর ছিল। এখনকার মানুষ একটু কিছু হলেই ডাক্তারের কাছে দৌড় শুরু করে। এ কারণে বেদে কবিরাজদের রোজগার কমে যাচ্ছে।’

বেদেবহরের দলপতি সর্দার মো. লস্কর মিয়া বলেন, ‘আমরা এখানে ৩৬টি পরিবারে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫০ জনের মতো এসেছি। এর আগে ফুলপুর উপজেলায় মাসখানেক ছিলাম। এখানেও মাসখানেক থাকার পর পরে কোথায় যাব, এটা এখনো ঠিক হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বনশ্রীতে স্বর্ণ ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার আমিনুল ছাত্রলীগের, সুমন শ্রমিক দলের নেতা

মুসলিম ছেলে বিয়ে করে পরিবারহারা, স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে ঢাকায় এসে ধর্ষণের শিকার

সামরিক বাহিনীর ৮ সংস্থা ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন

মসজিদে লুকিয়েও রক্ষা পেলেন না স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও তাঁর ভাই, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিল প্রতিপক্ষ

মাদারীপুরে ৩ খুন: ঘটনার পেছনে পা ভাঙার প্রতিশোধসহ ৩ কারণ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত