ডাব বিক্রি করেও চলে না জুলেখার সংসার

শিপুল ইসলাম, রংপুর
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২২, ০৯: ০৩
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২২, ১১: ৪৮

কাজের সন্ধানে ৩০ বছর আগে রংপুর শহরে স্বামীর সঙ্গে আসেন জুলেখা বেগম। বস্তির ভাড়া বাসায় দিনমজুরির আয়ে পাতেন সুখের সংসার। একে একে তিন সন্তান জন্ম নিলে সংসারের ব্যয় বাড়ে। তাই দিনমজুরি ছেড়ে স্বামী ধরেন কলার ব্যবসা। জুলেখা করেন রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ। কিন্তু সাত বছর আগে স্বামী মারা গেলে সংসারের সব দায়িত্ব পড়ে জুলেখার ওপর। তিনি পথের ধারে শুরু করেন ডাব বিক্রির ব্যবসা। এতে যা আয় হতো তা দিয়ে সাত সদস্যের সংসার ভালোই চলত। কিন্তু ঊর্ধ্বমুখী বাজারদরের কারণে এখন কোনোভাবেই সংসার সামলাতে পারছেন না জুলেখা। আয় থেকে 
ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মূলধন ভাঙিয়ে চলতে হচ্ছে তাঁকে।

সম্প্রতি রংপুরের সুরভি উদ্যানের সামনে কথা হয় জুলেখার সঙ্গে। তিনি জানান, আড়ত থেকে প্রতিটি ডাব ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় কেনেন তিনি। গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করেন ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। আগে প্রতিদিন গড়ে ১২০টি ডাব বিক্রি করতে পারলেও এখন তার অর্ধেকও বিক্রি হয় না। অনেক সময় কেনা দামের কমেও ডাব বিক্রি করতে হয়। প্রতিদিন এ ব্যবসা থেকে তাঁর আয় ৫০০ টাকার মতো। কিন্তু দৈনিক সংসার চালাতে লাগে ৬০০ টাকা। ফলে কমতে শুরু করেছে ব্যবসার মূলধন।

এক দিনের সংসার খরচের হিসাব দিয়ে জুলেখা জানান, সংসারে সাতজন সদস্য এই ডাব বিক্রির আয়ে চলে। আগে এ ব্যবসার আয়ে খেয়েপরে কিছু জমাও করেছিলেন তিনি। সেই টাকায় তিন শতক জমি কিনে শালবন মিস্ত্রিপাড়ায় টিনের ঝুপড়ি বানিয়ে সন্তান, নাতি-নাতনিদের নিয়ে থাকেন। এখন তিন বেলার খাবারের টাকা জোটাতে পারছেন না জুলেখা। মূলধন প্রায় শেষ। মহাজনের কাছে বাকিতে ডাব এনে বিক্রি করছেন।

আগে যে মানুষগুলো তাঁর নিয়মিত গ্রাহক ছিলেন, তাঁরা এখন মাসে দু-এক দিন আসেন। সবারই সংসারের খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় বাড়েনি আয়। তাই কাটছাঁট করে চলছে সবাই। এমনি একজন নগরীর মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা জীবন মিয়া। তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় ১৫ হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকরি করেন। এক সন্তান স্কুলে পড়ে। গত এক বছরে নিত্যপণ্যের দাম, বাসাভাড়া, জ্বালানির দাম বাড়লেও তাঁর বেতন বাড়েনি।

পথের ধারের দোকানে ডাব বিক্রি করছেন জুলেখা বেগমজীবন মিয়া বলেন, ‘আগে সপ্তাহে চাচির (জুলেখা) এখানে দুই দিন ডাব খেতাম। এখন মাসে এক দিনও আসতে পারি না। যেভাবে তরিতরকারি, চাল-ডাল, তেলের দাম বাড়ছে, তাতে একবেলা খেয়ে না খেয়ে বাঁচতে হচ্ছে। বেতনের টাকা বাদেও মাস শেষে বন্ধু, স্বজনদের কাছে ধার করতে হচ্ছে।’

এত কিছুর পরও জুলেখা নিয়মিত খবর শোনেন। তিনি জানতে পেরেছেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশে মন্দা আসবে। সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে মন্দা মোকাবিলায়। তাই এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি পড়ে না থাকে। সবাইকে খাদ্যশস্য ফলাতে হবে। কিন্তু জুলেখার তো খাদ্যশস্য চাষের মতো জায়গা নেই! তাই সামনের দিনগুলো কীভাবে পার করবেন, সে চিন্তাও পেয়ে বসেছে তাঁকে। শুধু জুলেখাই নন। সংসার খরচ চালাতে এখন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো হিমশিম খাচ্ছে। সবচেয়ে কষ্টে আছেন ভূমিহীন দিনমজুরেরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত