ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনী বিধিমালায় বলা আছে, প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার ও ফেস্টুন লাগানো যাবে না। করা যাবে না শোভাযাত্রা, মিছিল ও সভা। কিন্তু ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউপিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র অনেক প্রার্থীই এই বিধি লঙ্ঘন করছেন। দেয়ালে পোস্টার লাগানো ছাড়াও সভা-সমাবেশ করে তাঁরা প্রচার চালাচ্ছেন। এক প্রার্থী অপর প্রার্থীকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।

বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তাঁদের প্রচার অনেকটাই বেশি। তবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত রোববার ১০ নম্বর ভান্ডারপাড়া ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী গোপাল চন্দ্র দে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে উসকানিমূলক বক্তব্য ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিমাংশু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

দ্বিতীয় দফায় ইউপি নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। এর আগে গণসংযোগ, নির্বাচনী সভা ও প্রচার চালানো নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। একটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে আচরণবিধির সুষ্ঠু প্রতিপালন একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকদের কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। বিধিনিষেধও থাকে তাঁদের কার্যক্রমে। সীমারেখা টেনে দেওয়া হয় প্রচারসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে। এগুলো যথাযথভাবে অনুশীলন করা না হলে নির্বাচনের ফলাফলে অনভিপ্রেত প্রভাব পড়ে ।

ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন দলের ১৪ জনসহ মোট ৭৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ৫৪৫ জন, সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৬১ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। গতকাল ২৬ অক্টোবর ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। আজ ২৭ অক্টোবর চূড়ান্ত প্রার্থীদের মাঝে রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ দেবেন।

দলীয় প্রার্থীরা ইতিমধ্যে নিজ দলের প্রতীক নিশ্চিত হয়েছেন। তাই তাঁরা আগেভাগেই নির্বাচনী প্রতীক দিয়ে ব্যানার লাগিয়েছেন। আবার কেউ কেউ দলীয় প্রতীকের পক্ষে পথসভা, ঘরোয়া সভা ও শোভাযাত্রা সহকারে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

শুধু তা-ই নয়, এসব প্রার্থীর পক্ষে ঘরোয়া সভায় বিপক্ষের প্রার্থীদের মাঠে না নামতে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া ঘরোয়া সভা ও পথসভা করতে নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে সভার স্থান নির্ধারণ ও সময় চেয়ে পুলিশকে অবহিত করতে হবে। কিন্তু সেটাও করা হচ্ছে না। সভার স্থান ও অতিথিদের নাম এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নাম, প্রতীকসহ মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছে।

সবচেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও হুমকি-ধমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটছে ডুমুরিয়া, গুটুদিয়া, শোভনা, আটলিয়া, খর্নিয়া, রুদাঘরা, শরাফপুর, মাগুরখালী ও সাহস ইউনিয়নে। এ ছাড়া ভান্ডারপাড়া, রঘুনাথপুর, রংপুর এবং ধামালিয়া ইউনিয়নেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।

এ বিষয়ে বিভিন্ন ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘সরকারদলীয় প্রার্থীদের প্রতীক যেহেতু নিশ্চিত, তাই তাঁরা প্রচার শুরু করেছেন। কিন্তু আমাদের প্রতীক তো এখনো চূড়ান্ত নয়। তাই প্রচারের জন্য প্রতীকের কথা উল্লেখ করতে পারছি না। অথচ দলীয় প্রতীক দিয়ে ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। স্বতন্ত্র অনেক প্রার্থীও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। নির্বাচন অফিসের এ ব্যাপারে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। আইনে বলা আছে, কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে শাস্তি হিসেবে তাঁর সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ছয় মাসের জেল অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।’

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কল্লোল বিশ্বাস জানান, নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে লঙ্ঘিত না হয়; সে ব্যাপারে নির্বাচন অফিস যথেষ্ট তৎপর। প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রতীক দিয়ে বা প্রতীকের সমর্থনে কোনো সভা ও সমাবেশ করা যাবে না। তা ছাড়া ঘরোয়া সভা করতে হলেও নির্ধারিত সময়ের ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওবাইদুর রহমান জানান, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর দলীয় বা প্রার্থীর সমর্থনে কোনো সভা ও পথসভা করতে হলে পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষ থেকে অবহিত করা হচ্ছে না।