নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২২, ০৬: ৩৭
আপডেট : ১৯ জুন ২০২২, ১৫: ১৯

বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বাড়িতে পানি ওঠায় অনেক পরিবারে থাকা-খাওয়ার সমস্যা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে এদিন কমেছে তিস্তার পানি। গত শুক্রবার তিস্তা নদীর লালমনিরহাটের ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপরে ও ধরলা নদী বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে রেকর্ড করা হয়। তবে গতকাল বেলা ৩টায় তিস্তা নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ২৫ জুন পর্যন্ত নদ-নদীর পানি বাড়া অব্যাহত থাকতে পারে।

কুড়িগ্রাম: বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার স্বার্থে কাছের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দুর্গতদের বাড়ি থেকে সরে গিয়ে আবাসন কিংবা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। দুর্গতদের সহায়তায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। শুরু হয়েছে খাদ্যসহায়তা বিতরণ।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর পার্বতীপুরের জব্বার আলী জানান, পানি প্রবেশ করায় তিনি পরিবার নিয়ে ঘরের ভেতর থাকতে পারছেন না। বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে নৌকায় ভাসমান জীবন যাপন করছেন। তিন-চার দিন ধরে দুর্ভোগে থাকলেও তাঁর এলাকায় কোনো সহায়তা পৌঁছায়নি।

এদিকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, বন্যাদুর্গতদের জন্য এ পর্যন্ত ২৯৫ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে ১০ লাখ টাকা ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিশুখাদ্যের জন্য ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং গোখাদ্যের জন্য ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন এসব বরাদ্দ দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করবে।

লালমনিরহাট: গত শুক্রবার তিস্তা, ধরলাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ায় নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গতকাল শনিবার নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও মানুষের বাড়িঘর থেকে সরেনি। এতে দুর্ভোগে পড়েছে অনেক পরিবার। অনেকে গরু-ছাগল নিয়ে বিভিন্ন বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় জেলার আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও সদর উপজেলার ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। 
জানা গেছে, গতকাল দুপুরে তিস্তা ও ধরলার পানি বিপৎসীমার নিচে হলেও জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, তাঁতিপাড়া, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজানের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘেরচর, ফকিরপাড়া ইউপির রানীগঞ্জের ৭, ৮ নম্বর ওয়ার্ড, সিংগীমারি ইউনিয়নের ধুবনীসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকির হোসেন জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ক্রমে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, ‘বন্যাসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’রৌমারী: কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ৬টি ইউনিয়নের ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। ধান, পাট, বাদাম, তিল, আখ ও সবজিখেত তলিয়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। রৌমারীর নতুন বন্দর এলসি পোর্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক। এ ছাড়া সড়ক তলিয়ে গেছে।
চিলমারী: কুড়িগ্রামের চিলমারীতে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অষ্টমীরচরের কয়েক দিনের নদীভাঙনে ২০-২৫টি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে শতাধিক পরিবারের বসতঘর। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত