Ajker Patrika

আইনে থাকলেও সুবিধা পান না প্রতিবন্ধীরা

অর্চি হক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৪, ০৯: ৪৫
আইনে থাকলেও সুবিধা পান না প্রতিবন্ধীরা

‘ওই অ্যাক্সিডেন্ট আমার জীবনটা শেষ কইরা দিল’—বলছিলেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জের মিজানুর রহমান। বাসের সুপারভাইজার ছিলেন। পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম মিজানুরকে পঙ্গু করেছে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনা। সংসার কাঁধে থাকলেও স্বাভাবিক চলাফেরার শক্তি হারানোয় কাজও পাননি। কর্মক্ষম থেকে প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়া মিজানুর বলেন, ‘মহাজনরে ধরে সকালের একটা ট্রিপের কাজ পাইছি। ঘণ্টাখানেক কাজ করে এক শ-দেড় শ টাকা পাই। প্রতিবন্ধী কার্ড থাকায় মাসে আসে ৮৫০ টাকা। তা দিয়াই চলে কোনোরকম।’

জরিপ বলছে, দুর্ঘটনায় শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়া বেশির ভাগ মানুষই কর্মহীন হয়ে পড়েন মিজানুরের মতো। তাঁদের পুনর্বাসনে বড় কোনো উদ্যোগও নেই। সবাই প্রতিবন্ধী ভাতাও পান না। আইনে থাকা অধিকারও তাঁরা পাচ্ছেন না। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আজ ১৫ মার্চ পালিত হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ডিজঅ্যাবল্ড ডে। তবে দেশে সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান দিবসটি পালন করে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের জরিপ বলছে, দেশে দুর্ঘটনাজনিত কারণে পঙ্গু (শারীরিক প্রতিবন্ধী) হয়ে যাঁরা ভিক্ষাবৃত্তিতে আছেন, তাঁদের ৮২ দশমিক ৫৩ শতাংশই সড়ক দুর্ঘটনার শিকার। তাঁদের ৩২ দশমিক ৬৯ শতাংশ মোটরযানের (বাস-ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি) শ্রমিক, ১৭ দশমিক ৩০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নছিমন-ভটভটি-চান্দের গাড়ি-রিকশাভ্যান, ঠ্যালাগাড়ি ইত্যাদি) চালক, ৪২ দশমিক ৩০ শতাংশ যানবাহনের যাত্রী এবং ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ ছিলেন পথচারী।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা। অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হওয়া মানুষের পুনর্বাসনে রাষ্ট্র কিছুই করছে না। কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে অনেকে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ সালের জুনে প্রকাশিত জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা ৪৭ লাখ ৪২ হাজার। তাঁরা শারীরিকসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধিতার শিকার। যার মধ্যে জন্মগত প্রতিবন্ধীও আছেন। তবে মোট প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে দুর্ঘটনায় শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া মানুষের সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন হয়েছে। বিধিমালা হয়েছে ২০১৫ সালে। এই আইনের সুফল অনেকে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের।

ক্ষতিপূরণ নেই, ভাতাও সামান্য
জানা যায়, দুর্ঘটনায় শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়া বেশির ভাগ মানুষই কোনো ক্ষতিপূরণ পান না। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী কার্ডধারীরা মাসে ৮৫০ টাকা ভাতা পান। বর্তমান সময়ে এই টাকায় একজনেরই চলে মাত্র কয়েক দিন, সংসার চালানো তো দূরের কথা। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গবেষণা জরিপ বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য ৬৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ পরিবারকেই সম্পত্তি (জমি ও গৃহপালিত পশু) বিক্রি করতে হয়। বাকিদের বিক্রি করার মতো সম্পত্তি থাকে না। কর্মক্ষম ব্যক্তি প্রতিবন্ধী হয়ে পড়লে পুরো পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব খায়রুল আলম সেখ বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে আমাদের অনেক উদ্যোগ আছে। তাঁদের মাসিক ভাতাও দেওয়া হচ্ছে।’

অবহেলার শিকার হচ্ছেন তাঁরা 
প্রতিবন্ধী মানুষ অনেক ক্ষেত্রে অবহেলার শিকার হচ্ছেন। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভবনে প্রবেশের সুবিধার জন্য র‍্যাম্পের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা থাকলেও তা আছে খুব কম ভবনেই। যানবাহনে ওঠানামায়ও তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন।

ডিজঅ্যাবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাসরিন জাহান বলেন, ‘আইনে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সব জায়গায় যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে খুব কম জায়গাতেই সেটা পাই। মেট্রোরেল ছাড়া কোনো গণপরিবহন প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত