কুমিল্লা-৩: আ.লীগে বিভক্তি, বিএনপিতে দ্বিধা

দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ, কুমিল্লা
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৩, ১২: ২৫
আপডেট : ০৮ মে ২০২৩, ১৫: ২৬

একটা সময় মুরাদনগরের ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের তেমন দাপট ছিল না। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতারাই মাঠ কাঁপিয়ে বেড়াতেন। দীর্ঘদিন মাঠ দখলে রেখেছিলেন একসময় জাপাতে থাকা এবং পরে বিএনপিতে যোগ দেওয়া কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ। পাঁচবার সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। এমনকি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও এই আসনে এমপি হন কায়কোবাদ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন কায়কোবাদ। তাঁর দৌড় ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু পরে গ্রেনেড হামলা মামলায় তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি বিদেশে পলাতক। এরপরই বদলে যায় মাঠ। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। এদিকে আসন ফিরে পেতে চাওয়া বিএনপি আছে প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। এক গ্রুপ বর্তমান সংসদ সদস্য এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের সঙ্গে, অপর ভাগের নেতৃত্বে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার।

এক পক্ষের দাবি, এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন ক্ষমতায় আসার পর এই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মামলার শিকার হয়েছেন দলটির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামেও এত মামলা নেই। বিএনপি ও হাইব্রিড আওয়ামী লীগ নিয়ে তিনি রাজনীতি করছেন। তাঁর সময় তিন বছর এখানে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় বন্ধ ছিল। নেই তেমন কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। সাধারণ মানুষ এবং ত্যাগী নেতা-কর্মীরা পরিবর্তন চান।

আরেক অংশের দাবি, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন দুবার এমপি থাকায় এই আসনে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তিনিই জাপা ও বিএনপির কাছ থেকে আসনটি পুনরুদ্ধার করেছেন। দলকে করেছেন সুসংগঠিত।

ক্ষমতায় আসার আগে ও পরে জাহাঙ্গীর আলম সরকার বরাবরই একজন ‘নির্যাতিত নেতা’। মুরাদনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আহসানুল আলম সরকার কিশোর তাঁর ছেলে। বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পেছনে জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ভূমিকা রয়েছে। সব মিলিয়ে ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন ও জাহাঙ্গীর আলম সরকার সম্ভাব্য দুই হেভিওয়েট প্রার্থী।

 তবে স্থানীয়রা বলছেন, বিজয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে দলে ঐক্যের বিকল্প নেই।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, ‘দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে, ঘাম ঝরিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করেছি। অথচ দল ক্ষমতায় আসার পর নেতা-কর্মীরা নির্যাতিত হচ্ছেন। তাই দলের সকল নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই আসনে নির্বাচন করব।’

এ ছাড়া আলোচনায় আছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম রুহুল আমীন, আহসানুল আলম সরকার কিশোর এবং মুরাদনগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুল কাইয়ূম খসরু।

বিএনপি থেকে কায়কোবাদের তিন ভাই কে এম মজিবুল হক, কাজী জুন্নুন বসরি ও কাজী শাহ আরেফিন আলোচনায় রয়েছেন। তিনজনের মধ্যে কে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন তাঁদের পরিবার এবং বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাহিদা রফিকও মনোনয়ন চাইতে পারেন।

স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলছেন, দাদা (মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ) পাঁচবার এমপি ছিলেন। এখনো মুরাদনগরে বিএনপি ও দাদার পরিবারের শক্ত ভিত রয়েছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি বিজয়ী হবে। তবে আরেক পক্ষের দাবি, কায়কোবাদ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। তাই বিএনপির একাংশ পরিবর্তন চাচ্ছে।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে, আর দাদা যদি দেশে আসেন, তাহলে দাদা নির্বাচন করবেন। না হলে উনার ভাইয়েরা নির্বাচন করতে পারেন।’

জাপা থেকে উপজেলা কমিটির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা, সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেন, সদস্য নাজমা আক্তার আলোচনায় আছেন। আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়ে জাপার আগের অবস্থান ফিরিয়ে আনব।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত