Ajker Patrika

বুয়েটের ২০ ছাত্রের ফাঁসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ০৬
বুয়েটের ২০ ছাত্রের ফাঁসি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার দায়ে ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার বিভিন্ন স্তরের ২০ নেতা-কর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বাকি ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আরও এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়।

রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেছেন, নৃশংস হত্যার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আপাতদৃষ্টে মনে হয়েছে যে এ মামলায় প্রকৃত ও ন্যায়বিচার করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পেরেছে, দেশে আইনের শাসন আছে। এ বিচার উচ্চ আদালতে বিলম্বিত হবে না।  

রায় শুনে আদালতে উপস্থিত আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, যেদিন আসামিদের ফাঁসি কার্যকর হবে, সেদিন তিনি সন্তুষ্ট থাকবেন। বুয়েটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বুয়েটের উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেছেন, রায়ে শাস্তি যা হয়েছে, তা যথেষ্ট।

এই রায়ে সাজাপ্রাপ্ত সবাই দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বুয়েটের ছাত্র। এদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেষ তিনজন পলাতক রয়েছেন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিতরা হলেন আকাশ হোসেন, মোয়াজ আবু হুরায়রা, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা ও মুহতাসিম ফুয়াদ।

রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে পরিকল্পনা করে একই উদ্দেশ্য ও একই অভিপ্রায়ে আবরার ফাহাদকে হত্যা করেছেন। আসামিরা নির্মমভাবে একজন মেধাবী ছাত্রকে হত্যা করেছেন বলে তাঁদের প্রতি কোনো সহানুভূতি দেখানোর সুযোগ নেই। এই কারণে তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করাই যুক্তিযুক্ত।

ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, আবরার ফাহাদের মর্মান্তিক মৃত্যু বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যথিত করেছে। এ ধরনের মর্মান্তিক এবং নৃশংস ঘটনা আর যাতে না ঘটে, তা রোধকল্পে সকল আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের সংশ্লিষ্ট থানায় অবিলম্বে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

গতকাল রায় ঘোষণার সময় এজলাসকক্ষে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। ট্রাইব্যুনালের বাইরে এবং আদালত এলাকায় শত শত লোকের ভিড়। রায় ঘোষণার সময় কয়েকজন আসামিকে হাসতেও দেখা যায়।

গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এই তারিখ ধার্য করা হয়। বিচার চলাকালে মামলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান। অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি ১৯ জন। এ ছাড়া তদন্তে আরও ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

ঘটনার বিবরণে বলা হয়, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এ মামলায় আট আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁরা স্বীকার করেন, বেধড়ক পিটুনির ফলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আবরার।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অপরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এই মামলার প্রধান কৌঁসুলি মোশারফ হোসেন কাজল, আবু আবদুল্লাহ ভূঞা, আব্দুস সোবহান তরফদার, মিজানুর রহমান খান প্রমুখ। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মাহবুব আহমেদ, শহিদুল ইসলাম সর্দার, আজিজুর রহমান দুলু, শ্রী প্রাণনাথ।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিতে দেশ কলঙ্কমুক্ত হলো।

তবে রায় ঘোষণার পর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মেদ বলেন, যারা মাস্টারমাইন্ড ছিল, তাদের এ মামলায় আনা হয়নি। অনেক সাক্ষীর বক্তব্য সেভাবে শোনা হয়নি।

এদিকে গতকাল রায়ের পর দুপুর থেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। এ রায়ে বুয়েটের শিক্ষার্থী ও আবরারের সহপাঠীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে তাঁরা দাবি জানিয়েছেন, এ রায় যেন পরবর্তী সময়ে বহাল রেখে দ্রুত তা কার্যকর করা হয়।

পাশাপাশি বুয়েট উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদারও রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, অল্প সময়ে সুষ্ঠুভাবে বিচার হয়েছে এবং বিচার বিভাগ সঠিকভাবে বিচার করেছে।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএসএমএমইউতে হেনস্তার ঘটনা নিয়ে যা বললেন প্রাণ গোপালের মেয়ে ডা. অনিন্দিতা

বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব: গ্রেপ্তার ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী

জামিনে বেরিয়েই ছদ্মনামে হাসপাতালে ভর্তি হন ‘ডিবি হেফাজতে’ মৃত এজাজ

স্বাধীনতা দিবসে এবার কুচকাওয়াজ হচ্ছে না

থমথমে খামারবাড়ি: সড়ক অবরোধ করে চলছে অবস্থান কর্মসূচি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত