শিক্ষকদের ভুলে পরীক্ষা দিতে পারেনি ৭ শিক্ষার্থী

লক্ষ্মীপুর ও রামগতি (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২২, ১৩: ১৫

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে মাদ্রাসাশিক্ষকদের ভুলের জন্য দাখিলের জীববিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি সাত শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ের পরীক্ষা হলেও পরীক্ষা থাকা না থাকার বিভ্রান্তিতে তারা এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।

এদিকে এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে কেন্দ্র সচিব ও আলেকজান্ডার কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা তৈয়ব আলীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে চরআব্দুল্যাহ মাদ্রাসাতুল জামিয়াতুল ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আবদুল হাকিমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জীববিজ্ঞান বিষয়ে ওই ৭ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে না পারলেও অন্য বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে তারা। তবে ওই বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ আর নেই। যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারেনি, তাদেরও গাফিলতি ছিল।  নিয়মিত তাদের মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া না থাকায় এ সমস্যা হয়েছে। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা ওই সাত শিক্ষার্থী হচ্ছে উপজেলার চরআব্দুল্যাহ মাদ্রাসাতুল জামিয়াতুল ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন, আকিব হোসেন, তাজরিন জাহান, আরমান হোসেন অনিক, রুমানা আক্তার, শরীফুল ইসলাম ও নুশরাত জাহান ইতি।

শিক্ষার্থীরা জানায়, নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনের সময় তারা ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে কৃষিশিক্ষা এবং অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে জীববিজ্ঞান বিষয় নেয়। সে হিসেবে অতিরিক্ত বিষয়ের পরীক্ষা হবে না ধরে দুই বছরে তাদের জীববিজ্ঞান বিষয়ের একটি ক্লাসও হয়নি। এমনকি মাদ্রাসার অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় শিক্ষকেরা ওই বিষয়ের পরীক্ষাও নেননি; কিন্তু দাখিল পরীক্ষার প্রবেশপত্রে ৯ শিক্ষার্থীর ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে কৃষি শিক্ষার পরিবর্তে জীববিজ্ঞান উল্লেখ করা হয়।

বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের জানালেও তাঁরা ওই বিষয়ের পরীক্ষা হবে না বলে জানিয়ে দেন। এজন্য তারা গতকাল পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে যাননি; কিন্তু বেলা ১১টার দিকে আলেকজান্ডার কামিল মাদ্রাসাকেন্দ্র থেকে জানানো হয়; তাদের পরীক্ষা রয়েছে।

তড়িঘড়ি করে ৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন ১১টা ১৫ মিনিটের সময় কেন্দ্রে প্রবেশ করে পরীক্ষায় অংশ নেয়। অন্য সাত শিক্ষার্থী পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা পর কেন্দ্রে পৌঁছালে কেন্দ্রসচিব তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেননি। যে কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে না পেরে তারা এখন চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি পরীক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছে।

অব্যাহতি পাওয়া আলেকজান্ডার কামিল মাদ্রাসাকেন্দ্রের সচিব ও আলেকজান্ডার কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা তৈয়ব আলী বলেন, পরীক্ষা শুরুর পর ৯ শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি দেখে তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর তাদের মধ্যে দুজন পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পর এলে তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করেন।

অন্য সাত শিক্ষার্থী পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা পর আসায় তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া যায়নি। এর বেশি কিছু তিনি জানেন না। এখানে তাঁর কোনো অবহেলা ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চর আব্দুল্যাহ মাদ্রাসাতুল জামিয়াতুল ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল হাকিমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম শান্তনু চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। পাবলিক পরীক্ষাসংক্রান্ত নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে না পারায় কেন্দ্রসচিব তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে পারেননি। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

বিষয়টি তদন্ত করে এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত