বগুড়ার দই

নুসরাত জাহান শুচি
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৩, ০৮: ৫৬

বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার ঘোষ বাড়ির ঘেটু ঘোষ, প্রায় ২৫০ বছর আগে প্রথম দই তৈরি আরম্ভ করলেন। তিনি প্রথম বানিয়েছিলেন টক দই। পরে তাতে চিনি মিশিয়ে তৈরি হলো চিনিপাতা দই।

ঘেটু ঘোষ কি তখন জানতেন তার এই দই কূটনীতিতে ভূমিকা রাখবে? কে বলতে পারে তিনি হয়তো কূটনীতির মানেও জানতেন না বা হয়তো জানতেন। 
দই দিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক! শুনতে অবাক লাগছে, না? অবাক লাগলেও সত্যি।  এ তো আর যেমন তেমন দই নয়। বগুড়ার দই।

সম্প্রতি আম উপহার হিসেবে পাঠিয়ে নতুন করে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপহার পাঠিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করার দৃষ্টান্ত রাজা-বাদশাহর আমল থেকেই চলে আসছে।

তারই ধারাবাহিকতায় পিছিয়ে ছিলেন না পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান।  তিনি বগুড়ার দই উপহার হিসেবে পাঠিয়ে ব্রিটিশ কর্মকর্তার সহানুভূতি পেতে চেয়েছিলেন।

এর মাধ্যমে কেবল কূটনৈতিক সম্পর্ক যে ভালো হয়েছে তা নয়, বরং বগুড়ার দইয়ের প্রচারণাও হয়েছে। তাই ব্রিটিশ আমলেই ছড়িয়েছে বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি। অর্থাৎ ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ থেকে শুরু করে সবাই মুগ্ধ ছিল এর স্বাদে। সেই ষাটের দশকেই দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মার্কিন মুল্লুকে পৌঁছে গেছে বগুড়ার দই। অর্থাৎ বগুড়ার দইয়ের অঘোষিত ব্র্যান্ডিং কিন্তু আইয়ুব খান করে গেছেন। আর এখন সেই দই বিশ্বে পেয়েছে ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের খ্যাতি।

ঘেটু ঘোষ কি কখনো ভেবেছিলেন তার দই হবে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য?

কোনো দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও মানুষের সৃজনশীলতায় তৈরি পণ্যে তো কেবল তাদেরই অধিকার থাকে, যা নিশ্চিত করে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি। 
তবে কোনো পণ্যের জিআই স্বীকৃতি পেতে আবেদন করতে হয়। বেশ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। প্রমাণ করতে হয় পণ্যটি মৌলিকভাবে শুধু নির্দিষ্ট দেশেরই। তারপর আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের নিয়ম মেনে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

তবে দই-ই প্রথম নয়, বাংলাদেশের প্রথম জিআই পণ্য জামদানি শাড়ি। এরপর ইলিশ মাছ, ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, চিনিগুঁড়া চাল, রাজশাহী সিল্ক, শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ, বিজয়পুরের সাদা মাটি, বাগদা চিংড়ি, রাজশাহীর ফজলি আম, শেরপুরের তুলসীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম।

এসব পণ্য কেবল দেশের পরিচয় তুলে ধরে, এমনটি নয়। বরং ভৌগোলিক নির্দেশক হওয়ায় এসব পণ্য রপ্তানি করে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। যা অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করে। তৈরি করে বিশাল সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। গর্বের চিহ্নস্বরূপ এসব ভৌগোলিক নির্দেশক যেন বাংলাদেশ ও বাংলার মানুষের ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরছে।

লেখক: সাংবাদিক

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত