Ajker Patrika

চামড়ায় শনির দশা কাটবে কি

সম্পাদকীয়
চামড়ায় শনির দশা কাটবে কি

দেশে কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম নিয়ে শনির দশা চলছে। সেই সংকট এ বছরও দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে। কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম থাকলেও চামড়ার দাম পাচ্ছে না দেশের চামড়া বিক্রেতারা। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে।

২০১৪ সালে বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া বেচাকেনা হয়েছিল। এর পরের আট বছর কোরবানির পশুর চামড়ার দাম দফায় দফায় কমেছে।কোনোবারই নির্ধারিত দামে চামড়া বেচাকেনা হয়নি। ২০১৯ সালে কোরবানির চামড়া নিয়ে একধরনের বিপর্যয় ঘটেছিল। দাম না পেয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনাও ঘটে। তখন বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নানামুখী উদ্যোগ নেয়। তার পরেও খুব কম দামে কোরবানির চামড়া বিক্রি হয়েছে।

দেশে চামড়ার দাম কম থাকলেও চামড়াজাত পণ্যের দাম কয়েক বছরে তিন গুণ বেড়েছে। চামড়াজাত পণ্য থেকে গত অর্থবছরে যে পরিমাণ রপ্তানি আয় হয়েছে, তা থেকে বোঝা যায়, অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যার কারণে এই শিল্পে দৈন্যদশার সৃষ্টি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ৩২ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এই খাতে রপ্তানি হয়েছে ১২৪ কোটি মার্কিন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, যা দেশীয় মুদ্রায় ১১ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা।

দূষণমুক্ত ট্যানারি শিল্প গড়ে তুলতে বিদেশিদের আকৃষ্ট করার জন্য ২০১৭ সালে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু কাজটি করা হয়েছিল পুরোপুরি প্রস্তুতি না নিয়ে। গত প্রায় ২০ বছরেও কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) পুরোপুরি প্রস্তুত করা যায়নি। কোরবানির সময় ট্যানারিগুলোতে যে পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদিত হয়, তা প্রক্রিয়াজাত করার সক্ষমতা নেই সিইটিপির। এরপর চামড়া বিক্রির জন্য লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ নিতে হয়। এর জন্য পরিবেশসম্মতভাবে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরীর দূষণ বন্ধ না হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশি চামড়া কিনছে না। আমাদের এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় চীনে কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।

বিশেষজ্ঞদের মতে,  ট্যানারি শিল্প পরিবেশবান্ধব হলে চামড়া ৫০-৬০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব। আমাদের দেশে সব ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আছে। এ থেকে চামড়াশিল্পও মুক্ত নয়। কোরবানির ঈদের আগে ট্যানারির মালিকেরা চামড়া কিনতে বিশেষ সুবিধায় ব্যাংকঋণ নেন, কিন্তু এসব টাকা তাঁদের অন্য খাতে বিনিয়োগের অভিযোগ আছে। কারণ, চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা ট্যানারির মালিকদের হাতে নেই। এ কাজের দায়িত্ব বর্তায় বিসিকের ওপর। তারা যে এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, সেটা ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই।  

সবার আগে চামড়াশিল্প নগরীর দূষণ বন্ধ করতে হবে। পরিবেশ তো বাঁচবেই, কোরবানির পশুর চামড়ার দামও বাড়বে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত