ধুঁকছে কমিউনিটি ক্লিনিক ৪০টির ভবনে ফাটল

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১২: ৪৭

সাতক্ষীরার ২৩১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ৪০টির ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া, এসব ক্লিনিকের বেশির ভাগই ধুঁকছে আরও নানা সংকটে। এর মধ্যে নারী স্বাস্থ্যকর্মীর অপ্রতুলতা, ওষুধ স্বল্পতা, স্বাস্থ্যকর্মীদের দুর্ব্যবহারসহ নানাবিধ সংকট রয়েছে। তাতে তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না ক্লিনিকগুলো।

জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার ২৩১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিটিতে একজন সিএইচসিপি (হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) ও একজন এফডব্লিউএ (ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট) রয়েছেন। গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যসেবা, জ্বর, সর্দি-কাশির মতো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো খোলা রাখার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ক্লিনিক দুপুর ১২টার আগে খোলা পাওয়া যায় না। আবার একটার পর খোলা পাওয়া যায় না অনেক ক্লিনিক।

সদর উপজেলার আখড়াখোলা ক্লিনিকে সম্প্রতি দুপুর ১২টায় গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে তড়িঘড়ি করে এলেন হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার শামীম হোসেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্ত্রী বাইরে আছেন। তাই বাচ্চা সামলিয়ে আসতে দেরি হয়েছে।

দেরি করে ক্লিনিক খোলা ও তাড়াতাড়ি বন্ধ করা নিয়মিত কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের। হাজীপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে বেলা একটার মধ্যে বাড়ি গেছেন প্রোভাইডার আমিনুল ইসলাম। মুকুন্দপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে ভ্যান রাখতে দেওয়ার বিনিময়ে ক্লিনিক খোলা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখেন ভ্যানমালিক কামাল হোসেন।

গর্ভবতী মা ও শিশুদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য প্রতি ক্লিনিকে একজন করে রয়েছেন এফডব্লিউএ। অথচ অধিকাংশ ক্লিনিকে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় না বললেই চলে।

সিএইচসিপির রোগীদের ওষুধ না দেওয়াসহ দুর্ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে। ফিংড়ি ইউপি সদস্য আবু সালেক জানান, স্বাস্থ্যকর্মী আরেফিন শরাফীর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তিনি ওষুধ বিক্রি করে দেন। খেয়ালখুশিমতো চলেন।

তিনি মাদকাসক্ত। সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফরহাদ জামিল বলেন, আরেফিন শরাফীর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলাব্যাপী কমপক্ষে ৪০টি ভবনের ছাদ ধসে পড়ছে। শতাধিক ক্লিনিকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। এ বিষয়ে ফিংড়ির স্বাস্থ্যকর্মী আব্দুল আলিম বলেন, ‘আমি বহুবার ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি।

এখানে বসে রোগীদের ওষুধ দিতে ভয় লাগে। কখন যে ভেঙে পড়ে, তার ঠিক নেই।’

ক্লিনিকগুলোতে রয়েছে ওষুধের সংকট। চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক রোগী।

ফিংড়ি গ্রামের গোলাম রসুল বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে আমাশয়ে ভুগছি। এ ছাড়া জ্বরও রয়েছে। ওষুধ নিতে এসে জানতে পারলাম, আমাশয়ের ওষুধ নেই।’

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন সবিজুর রহমান বলেন, ‘পুরোনো কিছু ভবন সংস্কার করা হচ্ছে। বাকিগুলোর তালিকা করে সংস্কার করা হবে। এ ছাড়া ওষুধের সংকট সমাধান করা হবে। আমি কিছুদিন হলো যোগদান করেছি। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে যা যা করার, আমি করব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত