Ajker Patrika

বৃষ্টি–জোয়ারে পানিবন্দী ২০ গ্রামের মানুষ

ভোলা প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ১১: ৫৮
বৃষ্টি–জোয়ারে পানিবন্দী ২০ গ্রামের মানুষ

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি এবং মেঘনা নদীর জোয়ারের পানিতে ভোলায় তলিয়ে গেছে কমপক্ষে ২০টি গ্রাম। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বেড়িবাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ। ডুবে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। পানিবন্দী এসব মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। ঘরে পানি ওঠায় রান্নাবান্না করতে পারছে না। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের।

মেঘনার পানি বেড়ে যাওয়ায় উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপ, পূর্ণিমার প্রভাব ও বৃষ্টির পানিতে এসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে গতকাল রোববার দিনব্যাপী মুষলধারে বৃষ্টি ও মেঘনার অতি জোয়ারে বাঁধের বাইরের নতুন নতুন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে চরফ্যাশন উপজেলার চর পাতিলা, ঢালচরসহ উপজেলার প্রায় সাত গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সকাল থেকে জোয়ারের কারণে ভোলার সদর উপজেলার দরিরাম শংকর, গঙ্গাকীর্তি, বলরাম সুরা, রাজাপুর, মাঝের চর, রামদাসপুর, দৌলতখান উপজেলার মদনপুর, মেদুয়া, তজুমদ্দিন উপজেলার চর জহির উদ্দিন, চর মোজাম্মেল, মনপুরা উপজেলার চর নিজাম, কলাতলীর চর, সোনার চর, চর নিজাম, চর যতিন, চর জ্ঞান, দাসেরহাট ও লালমোহন উপজেলার কচুয়াখালির চরসহ অন্তত ২০ গ্রাম ডুবে গেছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।

মনপুরা উপজেলার দায়িত্বে থাকা চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান বলেন, ‘গত সময়ের চেয়ে পানির চাপ এবার কিছুটা বেশি। তবে, বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। আমরা পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রাখছি। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত উপজেলা প্রশাসন।’

মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে মদনপুরের অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ফলে পানিবন্দী এসব মানুষ পরিবার-পরিজন, গবাদিপশু-পাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।’

ভোলা সদর উপজেলার গঙ্গাকীর্তি এলাকার ফাতেমা বেগম ও ইয়াসমিন বেগম জানান, ‘জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় এবং রোববার দিনব্যাপী বৃষ্টির কারণে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। আমরা ঠিকমতো রান্নাবান্না করতে পারছি না। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে।’

ওই এলাকার মো. শরীফ বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর পানির চাপ অনেক বেশি। আমাদের ঘর ডুবে গেছে। কোথায় ঘুমাব, কোথায় রান্নাবান্না করব কিছুই বুঝতে পারছি না।’

মনপুরা উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের আন্দিরপাড় গ্রামের মাকছুদ বলেন, গত ‘শুক্রবার দুপুরের জোয়ারের পানিতে আমাদের বসতঘরে পানি ঢুকে পড়ে। এখন সেই পানি বেড়ে ঘরে হাঁটুসমান হয়েছে। রান্নাঘরের চুলা ডুবে যাওয়ায় দুপুরের রান্না হয়নি। আমরা কিছুই খেতে পারছি না।’

ওই এলাকার পুকুরের মালিক মো. ইউনুস ও নুরন্নবী জানান, জোয়ারের পানি প্রবেশ করে তাঁদের পুকুর ভেসে মাছ বের হয়ে গেছে। এতে প্রায় চার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এ বিষয়ে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিভিশন-১) মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান ও ডিভিশন-২ নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ রোববার আজকের পত্রিকাকে জানান, জোয়ারের পানিতে বাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে, কোথায় থেকে এখনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া আসেনি। গত শনিবার বিকেলে মেঘনার পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর আগের দিন ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।’

এ বিষয়ে ভোলার ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা এস এম দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘আমরা ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে খবর নিয়ে জেনেছি, জেলায় স্থায়ীভাবে কেউ পানিবন্দী অবস্থায় নেই। তবে, পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে বেড়িবাঁধের বাইরের কিছু নিচু এলাকায় পানি ঢুকলেও ভাটায় আবার নেমে যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত