পানির অভাবে দুশ্চিন্তায় কৃষক

মিন্টু মিয়া, নান্দাইল (ময়মনসিংহ)
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২২, ১৩: ৪৮
Thumbnail image

ময়মনসিংহের নান্দাইলে খরায় পুড়ছে আমনের খেত। ভাদ্র মাসের এ সময়ে প্রতিবছর মাঠে বৃষ্টির পানি থাকলেও এবার মাঠ পানিশূন্য। কারণ, এবার আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে আশানুরূপ বৃষ্টি হয়নি। পানির অভাবে আমনের খেত রোদে ফেটে গেছে। পানি না থাকায় কৃষকেরা আশানুরূপ ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায়। কৃষি অফিসও বিষয়টি স্বীকার করেছে। কৃষি অফিস বলছে, কৃষকদের সেচের মাধ্যমে পানি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, যাঁরা আমন ধান রোপণ করেছেন, তাঁরা পড়েছেন বেকায়দায়। বৃষ্টি না হওয়ায় আমন খেতের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

সেচের মাধ্যমে পানি দেওয়ার সুবিধা থাকলেও মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকেরা। ডিজেলচালিত মেশিন দিয়ে একবার সেচের পানি দিতে গেলেও খরচ হয় প্রতি ১০ শতাংশ জমিতে ৩৫০-৪০০ টাকা। ফলে নিরুপায় হয়ে ফসল বাঁচাতে কেউ কেউ বাড়তি খরচে জমিতে সেচের পানি দিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি না থাকায় আমনের খেত নষ্ট হচ্ছে। জমি ফেটে চৌচির হয়েছে। ধানের পাতা শুকিয়ে বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে। জমিতে আগাছা জন্মে আমন ধানের চারা নষ্ট হচ্ছে। চর বেতাগৈর ও বীর বেতাগৈর ইউনিয়নের কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বেলেমাটি থাকায় পানি ধারণক্ষমতা কম। সেচের পানি দিয়েও এক দিনের বেশি জমিতে পানি জমিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এদিকে উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর, খারুয়া, শেরপুর, চণ্ডীপাশা ও সিংরইল ইউনিয়নে একই চিত্র দেখা গেছে।

‘সেচের পানি দিয়ে ধান লাগাইছি। বৃষ্টি নাই, এখন ধানের চারা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় তো সেচ দিয়েও পানি দিতে পারছি না। জমিতে 
ঘাস হয়ে গেছে।’ 

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, মৌসুমি বৃষ্টির পানি দিয়ে জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়। এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টির দেখা মিলছে না। এতে করে কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় দিন পার করেছেন। বৃষ্টি না হলে আমন মৌসুমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না। এতে দেশে খাদ্যসংকট দেখা দেবে। লোডশেডিংয়ের কারণে জমিতে সেচের পানিও দেওয়া যাচ্ছে না।

নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র বলছে, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় এ বছর ২২ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৩ হাজার ৬২৪ মেট্রিক টন। ইতিমধ্যে ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমনের বীজ রোপণ করা হয়েছে।

উপজেলার দত্তপুর গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের গ্রামের প্রতিটি জমি রোদের তাপে নষ্ট হয়ে পড়েছে। সেচের ভরসা থাকলেও দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ লোডশেডিং। গত এক মাস ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩-৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। তাই সেচ দিতে পারছি না। নষ্ট হচ্ছে ফসল। নষ্ট হচ্ছে অন্যান্য সবজির জমি’।

নান্দাইল ইউনিয়নের সাভার গ্রামের কৃষক মো. হানিফ মিয়া বলেন, ‘সেচের পানি দিয়ে ধান লাগাইছি। বৃষ্টি নাই, এখন ধানের চারা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে।’

মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের কৃষক মো. এরশাদ শেখ বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে জমি চাষ করে ধান রোপণ করেছিলাম। জমিগুলো এভাবেই পড়ে আছে। কোনো রকম সার, কীটনাশক দেওয়া সম্ভব হয়নি। ’

নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় আমন ধানের ক্ষতি হচ্ছে। অনেক জায়গায় জমি ফেটে ধানের চারা নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষকদের সেচের মাধ্যমে পানি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে একগুচ্ছ সুপারিশ কমিশনের

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত