Ajker Patrika

ফুলকপির গ্রাম জয়নগর

মিজান মাহী, দুর্গাপুর (রাজশাহী) 
ফুলকপির গ্রাম জয়নগর

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার জয়নগর গ্রাম। এই গ্রামে শীতকালে শুধুই ফুলকপির চাষ হয়। শীতের শুরুতেই এই গ্রামে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফুলকপি কিনতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বাড়ে। ব্যবসায়ীরা অস্থায়ী তাঁবুতে শীতের তিন মাস থাকেন এই গ্রামেই। জমিতেই কিনে নেন কৃষকের উৎপাদিত ফুলকপি।

এই গ্রামের ৯০ ভাগ কৃষকই ফুলকপি চাষ করেন। বছরের পর বছর ফুলকপি চাষ করে এই গ্রামে দারিদ্র্য জয় করেছেন বহু কৃষক। প্রতিদিন এই গ্রাম থেকে ৮-১০ ট্রাক ফুলকপি যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। গ্রামের মোড়ে মোড়ে, আমগাছতলা, ফাঁকা জায়গায় ১০ থেকে ১২টি জায়গায় প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের কাছে ফুলকপি বিক্রি করছেন চাষিরা।

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে জয়নগর গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। এই গ্রামের পথ ধরে গ্রামের ভেতরে যত এগোনো যায়, রাস্তার দুই পাশে শুধু ফুলকপি আর ফুলকপি। কেউ গাছের গোড়ায় নিড়ানি দিচ্ছেন, কেউ-বা সেচ দিচ্ছেন। আবার অনেকে গ্রামের মোড়ে মোড়ে পসরা সাজিয়ে ফুলকপি বিক্রি করছেন।

এমন দৃশ্য এখন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জয়নগর গ্রামে। মার্বেল, হোয়াইট, লিনজাসহ বিভিন্ন উচ্চফলনশীল আগাম জাতের শীতকালীন সবজি ফুলকপির আবাদ করেছেন তাঁরা। এই জাতের ফুলকপি চাষ করে তাঁরা প্রতি বিঘা জমি থেকে লাভ করছেন এক লাখ টাকা।

জয়নগর গ্রামের ফুলকপিচাষি এনামুল হক নাসিম বলেন, এই গ্রামের কৃষকেরা একসময় খুবই দরিদ্র ছিলেন। ১০ থেকে ১২ বছর আগে এখানে শীতকালীন আগাম জাতের ফুলকপি ও নানা ধরনের সবজি চাষ শুরু হয়। তার পর থেকে এই গ্রামের কৃষকেরা শীতকালীন ফুলকপি ও সবজি চাষ করে ভাগ্যবদল করেছেন। এই গ্রামে এখন প্রায় সবার বাড়িতেই দালান। এখন কৃষকেরা ঘুরে বেড়ান দামি মোটরসাইকেলে চড়ে। শীতকালীন সবজি এই গ্রামের চাষিদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে।

নাসিম আরও বলেন, ‘আমি এবার দুই বিঘা জমিতে মার্বেল জাতের ফুলকপি চাষ করেছি। এ পর্যন্ত দুই লাখ টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছি। খরচ হয়েছে দুই বিঘায় ৪০ হাজার টাকার মতো। প্রথম দিকে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি করেছি। এখন দাম কমে গেছে। আমাদের এই গ্রামের ফুলকপি নিয়ে বাজারে যেতে হয় না।

প্রতিদিন গ্রামের ১০ থেকে ১২ জায়গায় বিক্রি হয় ফুলকপি।’

আরেক কৃষক ছাতাহার আলী জানান, আগাম ফুলকপির ফলন ও দাম ভালো পাচ্ছেন। প্রথমে ৯০ টাকা কেজি দরে পাইকারি বিক্রি করেছেন। এখন ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে ৮০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি হয়ে গেছে।

পাইকারি ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, আমি একাই প্রতিদিন দুই ট্রাক ফুলকপি কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ ও সিলেটে পাঠাই। এখানকার মাটি ফুলকপি চাষের উপযোগী। বিভিন্ন জেলায় এখানকার ফুলকপির চাহিদা রয়েছে অনেক।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এস এম শাহজামাল বলেন, নিরাপদ সবজি উৎপাদনের জন্য জয়নগর ইউনিয়ন বিখ্যাত। এখন কৃষকেরা জমিতে জৈব সার, গোবর, জৈব কীটনাশক, সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ, হলুদ ট্র্যাপ ও বিষটোপ ব্যবহার করেন।

দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমি শুরুতেই জয়নগর গ্রামের ফুলকপির মাঠ পরিদর্শন করেছি। শীতকালীন সবজি ফুলকপি চাষ করে সেখানকার কৃষকেরা ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত