বান্দরবানের আলীকদমে চার ইউপির তিনটিতেই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের উপজেলা নেতারা। আরেকটিতে বিএনপিদলীয় নেতা প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কার করা হলেও তাঁদের প্রচারের মুখে অস্বস্তিতে আছে আওয়ামী লীগ। তৃতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আগামী ২৮ নভেম্বর এসব ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে।

নির্বাচনে আলীকদম সদর ইউপিতে প্রার্থী হয়েছে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আনোয়ার জিহাদ চৌধুরী, নয়াপাড়া ইউপিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কফিল উদ্দীন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এতে গত শুক্রবার বহিষ্কার আদেশ দিয়েছে বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্যশৈহ্লা ও জেলা আওয়ামী যুবলীগ আহ্বায়ক কেলু মং মারমার স্বাক্ষরিত পত্রে তাঁদের বহিষ্কারাদেশ দেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে আলীকদম সদর ইউপিতে মো. নাছির উদ্দীন, চৈক্ষ্যং ইউপিতে ফেরদৌস রহমান, নয়াপাড়া ইউপিতে ফোগ্য মারমা ও কুরুকপাতা ইউপিতে ক্রাতপুং ম্রোকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আলীকদম সদর ইউপিতে উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আনোয়ার জিহাদ চৌধুরী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বাদশা মিয়া দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। একইভাবে নয়াপাড়া ইউপিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কফিল উদ্দীন ও কুরুকপাতা ইউপিতে উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামলাই ম্রো নিজেদের প্রার্থিতা বহাল রেখেছেন।

এদিকে শুরুতে কুরুকপাতা ইউপিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কানপুং ম্রো মনোনয়নপত্র জমা দিলেও গত ১১ নভেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন নেন। তবে দলে গুরুত্ব বিবেচনায় উপজেলা শ্রমিক লীগ নেতা কামলাই ম্রো ও আওয়ামী লীগ নেতা বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি আওয়ামী লীগ।

এদিকে শুরুতে বিএনপি সমর্থিত কেউ নির্বাচন যোগ দেবে না জানা গেলেও দলের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদিন এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে থাকছেন।

এদিকে এত দিন বহিষ্কারের শঙ্কা মাথায় নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় আওয়ামী লীগ মনোনীত ৪ প্রার্থীকে কোণঠাসা করতে জোরালো প্রচার চলাচ্ছেন। এ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।

দলীয় শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে অবস্থান নেওয়ায় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানান উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামাল উদ্দীন। বহিষ্কারাদেশের সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুংড়িমং মারমা বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে আওয়ামী লীগ বিচলিত নয়। তাদের নির্বাচনী প্রচারে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী কোনো ধরনের হস্তক্ষেপে করবে না বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।

এদিকে গত ৪ নভেম্বর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ার জিহাদ চৌধুরীকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে না নিলে জনসম্মুখে বহিষ্কারের হুঁশিয়ারি দেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মংব্রাচিং মারমা। সদর ইউপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মো. নাছির উদ্দীনের জনসভায় বিদ্রোহী প্রার্থীকে প্রতিহত করার ডাক দেন তিনি। তবে চৈক্ষ্যং ইউপিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে ভোট না দিতে প্রচারণা চালানোর অভিযোগে গত ১১ নভেম্বর মংব্রাচিং মারমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এতে আলীকদম উপজেলা আওয়ামী লীগ বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে বলে মনে করছে এলাকার প্রবীণ রাজনীতিকেরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের এক প্রবীণ নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিনি মনে করেন দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া মানে দলকে সংকটের দিকে ঠেলে দেওয়া। তাঁদের দেখাদেখিতে সামনে আরও বিদ্রোহী প্রার্থী জন্ম নিতে পারে।

এদিকে নয়াপাড়া ইউপিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কফিল উদ্দীন নিজের প্রার্থিতা বহাল রেখেছেন। দলীয় বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চায়নি তিনি। সদর ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আনোয়ার জিহাদ চৌধুরী বলেন, ‘দল যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে তাঁর অতীত কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে জনগণ আমাকে নির্বাচিত করবে, সে বিষয়ে আমি শতভাগ নিশ্চিত।’