নাব্যসংকটে তীব্র নৌজট

সুনামগঞ্জ ও জামালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৭: ৫২
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ৩০

ন্যাবসংকটে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের বেহলীতে তীব্র নৌজটের সৃষ্টি হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে জেলার বৌলাই ও রক্তি নদীতে পলি জমে নৌজটের সৃষ্টি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নৌ-শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা।

জামালগঞ্জের বেহলী ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার নিয়ামতপুর এলাকায় গত এক সপ্তাহে ৪ শতাধিক বালু ও পাথরবাহী ট্রলার একই স্থানে আটকা পড়ে। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ট্রলারের শ্রমিকেরা।

স্থানীয়রা জানান, নদীর তলদেশ ভরাট ও নৌযান শ্রমিকদের প্রতিযোগিতায় প্রতিবছরই একাধিকবার এই নৌজটের সৃষ্টি হয়।

জামালগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুরের বৌলাই এবং রক্তি নদীতে আটকা পড়া নৌযানগুলো বালু ও পাথর নিয়ে তাহিরপুর উপজেলার ফাজিলপুর ও বড়ছড়া থেকে ছেড়ে আসে। গেল বছর বিশ্বম্ভরপুরের রক্তি নদী খনন করা হলেও ন্যাবসংকট না কাটায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নৌযান শ্রমিক ও স্থানীয়রা।

নিয়ামতপুর গ্রামের সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর নদী খনন করা হয়। তবুও ন্যাবসংকট কাটেনি।’

জামালগঞ্জের বৌলাই নদীর বেহলী পয়েন্টে আটকা দুই শতাধিক পণ্যবাহী নৌকার শ্রমিকেরা নৌকাতেই অবস্থান করছেন। এমন অবস্থায় তাঁরা খাদ্যসংকটে পড়েছেন।

নৌশ্রমিক হেলিম আহমদ বলেন, ‘সাত দিন ধইরা নৌকায় আছি। আমাদের কাছে যা খাবার ছিল তা শেষ হইয়া গেছে। নৌকার মালিকেরা তো এটা বুঝবে না। সব মিলিয়ে আমরা বড় কষ্টে আছি।’

জামালগঞ্জের বেহলী ইউনিয়নের বৌলাই ও আবুয়া নদীর, হিজলা, হাওরিয়া আলীপুর, বদরপুর ও বেহলীসহ প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাল্কহেড, স্টিল বডি ও বিভিন্ন মালবাহী নৌযান আটকা পড়েছে। ফলে জামালগঞ্জের এসব এলাকায় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

দীর্ঘ ৮ থেকে ১০ বছর ধরে বৌলাই নদী ও আবুয়া নদীতে বছরের এ সময় নাব্যসংকট দেখা দেয় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। ফাজিলপুর বালু পাথরমহাল থেকে বালু, পাথর উত্তোলন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয় এ নদী দিয়ে।

বাল্কহেডের শ্রমিক বাদশা মিয়া বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে বসে আছি, নৌকা চলে না। সারিবদ্ধভাবে ট্রলার চললে ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। সঙ্গে যে টাকা ছিল তা ফুরিয়ে গেছে। এভাবে আর কিছুদিন গেলে না খেয়ে থাকতে হবে।’

নরসিংদী থেকে আসা বালুভর্তি নৌকার শ্রমিক মো. কাশেম মিয়া বলেন, ‘সময়মতো মাল না পৌঁছাতে পারলে ঠিকাদারদের বালু সরবরাহ করা যাবে না। এতে তাঁদের নির্মাণকাজও বন্ধ রয়েছে।’

পণ্যবাহী নৌকাগুলো এভাবে আটকা থাকার ফলে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বালু ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘নাব্যসংকটের কারণে সময়মতো মাল পরিবহন করা যায় না। এতে পরিবহন ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে যায়। পরিবহনে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে বিরক্ত হয়ে ক্রেতাদের অনেকেই তাঁদের অর্ডার বাতিল করে দেন।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন যেসব নদী এখনো খননের বাকি আছে সেসব নদী খননের জন্য ডিপিপি আকারে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক (পূর্ব) ফজলুর রশিদ বলেন, সুনামগঞ্জে নদী খননের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ অচিরেই শুরু হবে। এটি শুরু হলে নাব্যসংকট আর থাকবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত