Ajker Patrika

উপাচার্য-কাহিনি

সম্পাদকীয়
উপাচার্য-কাহিনি

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে প্রায়ই দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে—বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিকসহ সব ধরনের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দায়িত্ব থাকলেও তাঁরা তা যথাযথভাবে পালন করেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাঁরা খেয়ালখুশিমতো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে থাকেন। আজকের পত্রিকায় সোমবার ‘স্বজন-অঞ্চলপ্রীতি দুই উপাচার্যের’ শিরোনামে এমন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্বজন-অঞ্চলপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে বলে খবরটি থেকে জানা যায়। তাঁরা দুজনই বৃহত্তর কুমিল্লার লোক। এই দুই উপাচার্য নিয়োগ থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই তাঁদের নিজ এলাকার লোকদের প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। অন্য জেলার লোকজনকে কোণঠাসা করে রাখেন।

অতীতেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সে রকমই কোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লেখক আহমদ ছফা তাঁর ‘গাভী বিত্তান্ত’ উপন্যাসে লিপিবদ্ধ করেছেন উপাচার্যদের কীর্তিকাহিনি। যদিও তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাহিনিকে এই উপন্যাসে উপজীব্য করেছিলেন, কিন্তু এর কাহিনি যেন দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সত্য। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দৈন্যদশা এবং শিক্ষকরাজনীতির বিভিন্ন নোংরা দিক তুলে ধরেছেন তিনি এই উপন্যাসে। তাই উপাচার্যদের এসব কর্মকাণ্ড নতুন কোনো ঘটনা নয়।

দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারই সরাসরি উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্যের বিষয়টি প্রধান অনুঘটক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এ জন্য সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান না। সমস্যা আসলে সেখানেই। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান কাজ হলো গবেষণা করা; সেই গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন জ্ঞান সৃষ্টির পথ খুলে দেওয়া। কিন্তু সে কাজটিই এসব শিক্ষায়তনে খুব একটা করতে দেখা যায় না। এ কারণে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। আর ব্যর্থ হচ্ছে জনপ্রত্যাশা পূরণে। তাতে উপাচার্যদের অনিয়মের প্রভাবও অস্বীকার করা যায় না।

কোনো উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা কোনো অনিয়মের অভিযোগ ওঠামাত্রই যদি তদন্ত করে তাঁকে অপসারণ করা হতো, তাহলে অন্য উপাচার্যরা অনেক সতর্কতার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতেন। এতে সরকারের ভাবমূর্তি অনেক গুণ বেড়ে যেত। কোনো কোনো উপাচার্য হয়তো মনে করেন, একবার নিয়োগ পেলে সরকার আর চার বছরে তাঁকে অপসারণ করবে না। এই সুযোগে অন্যায়, দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতি করে থাকেন তাঁদের অনেকে।

বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করেছে। কিন্তু অনেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। এসব ঘটনা বাকি উপাচার্যদেরও বেপরোয়া করে তুলছে। তাই এসব বন্ধে কোনো অভিযোগ উপাচার্যদের বিরুদ্ধে এলে তার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। আর উপাচার্য নিয়োগে যা গলদ রয়েছে, তা বন্ধ করতে হবে। লবিং ও তদবিরের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগের পথ ও পন্থা বন্ধ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত