১২৭ ঘরে মাটি ভরাটের নামে অনিয়মের অভিযোগ

রানা আহমেদ, নলডাঙ্গা (নাটোর)
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২২, ০৬: ৩৪
আপডেট : ১৪ জুন ২০২২, ১৫: ১৭

নাটোরের নলডাঙ্গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১২৭টি ঘরে মাটি ভরাটের নামে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে পুকুর খননের মাটি দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি ভরাট করে প্রশাসন। এ জন্য মাটি সরবরাহকারীদের কোনো বিল পরিশোধ করা হয়নি।

জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাটি ভরাটের জন্য পৃথক পাঁচটি প্রকল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মোট ৫ লাখ ১৯ হাজার ৭৮৩ টাকা বরাদ্দ দেয় উপজেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে প্রকল্প কমিটির সভাপতিরা মাটি ভরাটের খরচ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে বরাদ্দ দেওয়া টাকা ইউএনও ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় বলছে, প্রকল্প সভাপতিরা টাকা উত্তোলন করে জমা দেননি। এদিকে, প্রশাসনের কাছ থেকে পুকুর খননের অনুমতির শর্তে শত শত ট্রাক মাটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িঘরে দান করা হয়েছে বলে দাবি করছে মাটি সরবরাহকারীরা।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় (পিআইও) সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ব্রহ্মপুর ইউনিয়নের চকসরকুতিয়ায় ছয়টি, মাধনগর ইউনিয়নে ২২ টি, পিপরুল ইউনিয়নে ৮০টি ও বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়নে ১৪ টিসহ মোট ১২৭টি গৃহহীন পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের সেমিপাকা বাড়ি নির্মাণ করছে উপজেলা প্রশাসন। চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল ৯৭টি বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ করে গৃহহীনদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। ৩০টি বাড়ির নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। প্রতিটি বাড়ির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা করে।

সরেজমিন দেখা গেছে, পিপরুল ইউনিয়নের ঠাকুরলহ্মীকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প, কুমুদবার্টি আশ্রয়ণ প্রকল্প, বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়নের চকপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িঘরে মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। তবে ব্রহ্মপুর ইউনিয়নের চকসরকুতিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ির সামনে এখনো মাটি ভরাট হয়নি।

পিপরুল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি মজিবর রহমান মজি বলেন, ‘বিল উত্তোলন করে মাটি ভরাটের কাজ শেষ করেছি।’ তবে কোন জায়গা থেকে মাটি আনা হয়েছে ও কাকে কত টাকা বিল দিয়েছেন-এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাটি সরবরাহকারী আচঁড়াখালির সোহাগ আলী বলেন, ‘পিপরুল ইউনিয়নের ঠাকুরলহ্মীকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে মোট ৫৫ ট্রলি মাটি দিয়েছি। কিন্ত কোনো বিল পাইনি। পুকুর খননের অনুমতির শর্তে বিনা মূল্যে দেওয়া হয়েছে।’

বাঁশভাগ গ্রামের মাটি সরবরাহকারী খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘ঠাকুরলহ্মীকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩০ ট্রাক ও বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়নের চকপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৭২ গাড়ি মাটি দিয়েছি বিনা মূল্যে।’

পশ্চিম মাধনগরের কাউছার হাজী বলেন, ‘পুকুর খননের অনুমতি নিতে ইউএনও’র কাছে গেলে তিনি পিপরুল ইউনিয়নের কুমুদবাটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাটি নিজ খরচে সরবরাহ করতে বলেন। আমি পুকুর খননের অনুমতির শর্তে অন্তত ২০০ ট্রাক মাটি ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরবরাহ করেছি। কোনো বিল পরিশোধ করা হয়নি।’

পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য ও কুমুদবাটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি ভরাট প্রকল্পের সভাপতি মমতাজ বেগম পপি বলেন, ‘প্রকল্পের সভাপতি হলেও আমি কোনো কাজ করিনি। টিআর প্রকল্প থেকে তিন লাখ টাকা উত্তোলন করে পিআইও অফিসের অফিস সহকারী জহুরুল ইসলামের হাতে দিয়েছি।’ একই কথা বলেন ব্রহ্মপুর ইউপির সংরক্ষিত নারী সদস্য ও চকসরকুতিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাটি ভরাট প্রকল্পের সভাপতি আফরোজা বেগম।

তবে, টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পিআইও অফিসের অফিস সহকারী জহুরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও সুখময় সরকার প্রকল্পের বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে বলেন, ‘এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যানের বক্তব্য নিন।’

নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘প্রকল্প পরিদর্শন করে মাটি ভরাটের কাজ বুঝে পেয়েছি।’ তবে মাটি ভরাটে অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত