‘চিকিৎসার থাকি হয়রানি বেশি’

শিপুল ইসলাম, রংপুর
Thumbnail image

‘রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের অবস্থা খুবই শোচনীয়। প্রচণ্ড গরম, ফ্যান নষ্ট। শৌচাগার নষ্ট। তার ওপর দালালের খপ্পর। দালাল ছাড়া কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায় না। এসব দেখার যেন কেউ নেই।’ 

কথাগুলো রমেক হাসপাতালে ভর্তি রোগী নাবিউল করিমের। শুধু নাবিউল নয়, এ রকম কষ্ট ও হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানালেন আরও অনেক রোগী ও স্বজন।  

উত্তরের দুই কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ভরসাস্থল রমেক হাসপাতালে দালাল ও বকশিশ আদায়কারী চক্রের তৎপরতা সম্প্রতি আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই চক্রের কাছে জিম্মি চিকিৎসকেরাও। পরিচালক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১২ আগস্ট রমেক হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস আলীসহ ৪ জনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) দেওয়া হয়। ২২ আগস্ট মোহাম্মদ জাফরুল হোসেনকে পরিচালক নিয়োগ করা হলেও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত যোগদান না করায় প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই সুযোগে তৎপর হয়ে উঠেছে বিভিন্ন সময় পুলিশ-র‍্যাবের অভিযানে পালানো দালাল ও বকশিশ আদায়কারীর চক্রের সদস্যরা। তাঁরা নানাভাবে রোগী ও স্বজনদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা। এসবে বাধা দিতে গেলে হুমকি-ধমকির শিকার হচ্ছেন চিকিৎসকেরাও। 

গত সোমবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, গাদাগাদি করে রোগীরা কেউ শয্যায়, কেউ মেঝেতে শুয়ে আছেন। ড্রেস কোড ছাড়াই ওয়ার্ড বয়েরা ট্রলিতে করে রোগী নিয়ে যাচ্ছেন। 

কথা হলে মেডিসিন বিভাগে থাকা রোগী মেরাজুল ইসলাম বলেন, এখানকার ওয়ার্ড বয়, সিস্টার কারও কথা শোনে না। এখানে ওয়ার্ড বয়ের কোনো ড্রেস নেই। কে বাইরের, কে ওয়ার্ড বয় চেনা যায় না। বাইরে নেশাখোরের অবাধ প্রবেশ। যার কারণে এখানে প্রতিনিয়ত রোগীদের জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। 
 

ওই ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর স্বজন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, ‘হাসপাতালের ওয়াশরুম নষ্ট। দুর্গন্ধে যাওয়া যায় না। কেউ ঠিক করছে না। খুব কষ্ট করে এখানে আছি। রোগী ওঠানামা থেকে শুরু করে সবখানে কমপক্ষে ১০০ টাকা বকশিশ দিতে হচ্ছে। এখানে চিকিৎসার চেয়ে হয়রানি বেশি।’ 

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক মো. ইয়াছিন আরাফাত বলেন, এ হাসপাতালে পা দেওয়া থেকে লাশ বের করা পর্যন্ত সার্বক্ষণিক একজন মানুষকে হয়রানি শিকার হতে হয়। বিগত বছরগুলোতে পরিচালক থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে। রোগী ও চিকিৎসক ওই সিন্ডিকেটের শিকার হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর পরিচালক না থাকায় এগুলো আরও ব্যাপকভাবে হচ্ছে। রোগীর পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সুনিশ্চিত করতে পরিচালক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা খুবই দরকার। 

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরেক ইন্টার্ন চিকিৎসক মো. রিয়াজ শরীফ লিমন বলেন, ১২ আগস্টের পর থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক নেই। পরিচালক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে পূর্ববর্তী দালাল ও বকশিশ আদায়কারী চক্র হাসপাতালে আরও শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছে। রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কঠোর হস্তে তাদের দমন করতে হবে। 

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আ ম আখতারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দালাল ও বকশিশ আদায়কারী চক্র ধরতে আমাদের অভিযান চলছে। কয়েক দিন আগেও ধরেছি। তাদের ধরতে পারলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শৌচাগার নষ্টের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত