ভাসছে আশ্রয়ণের গ্রাম, ঘর ছাড়ছেন বাসিন্দারা

কামাল হোসেন, কয়রা (খুলনা)
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১: ২২

খুলনার কয়রায় প্রায় দুই কোটি টাকায় নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের শেওড়াপাড়া গুচ্ছগ্রামটি তিন মাস ধরে কপোতাক্ষ নদের জোয়ারে ভাসছে। এ ছাড়া সেখানে যাতায়াতের ভালো রাস্তা নেই; সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই, নেই বিদ্যুৎ-সংযোগও।

ইতিমধ্যে আশ্রয়ণের ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে দুই-তৃতীয়াংশ উপকারভোগী। দীর্ঘদিনের এসব সমস্যা সমাধানে দাবি করে এলেও আজও কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারীদের।

গত সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের শেওড়াপাড়া গ্রামের কপোতাক্ষ নদের চরে গড়ে তোলা ৬০টি জরাজীর্ণ বাসগৃহ এবং সুন্দর একটি অফিসকক্ষ রয়েছে। চারটি অগভীর নলকূপের সব কটিই নষ্ট। বৈদ্যুতিক পিলার ও তার থাকলেও নেই বিদ্যুৎ-সংযোগ।

চরম নাজুক অবস্থায় রয়েছে নদীর পানি রক্ষার তিন পাশের বাঁধ। বাঁধের উত্তর ও পশ্চিম পাশের বেশ বড় দুটি ভাঙন দিয়ে ভেতরে পানি ঢুকছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পানিতে তলিয়ে যেতে দেখা যায় গুচ্ছগ্রামের তিনটি পুকুর, চলাচলের রাস্তা ও আঙিনা। উল্লেখযোগ্য কোনো বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি বাড়লে এমনিভাবে বাড়িঘর তলিয়ে যায় বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানান।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় ৬০টি ঘর নির্মাণের জন্য ৯০ লাখ, ৪টি নলকূপ স্থাপনের জন্য ৩ লাখ ২০ হাজার, কমিউনিটি ভবন তৈরির জন্য ৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা ভরাটের জন্য ২৫১ দশমিক ৪০১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।

গুচ্ছগ্রামের উপকারভোগী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের বসবাসের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৬০টি ঘরের ব্যবস্থা করায় আমরা খুব খুশি। তবে ঘরের মেঝে মাটি দিয়ে তৈরি হওয়ায় নদীর পানিতে ধসে যায়। বারবার মেরামত করেও লাভ হয় না। ঘরগুলো দুর্বল হওয়ায় সামান্য ঝড়েই ঘটে দুর্ঘটনা।’

ইতিমধ্যে আশ্রয়ণের ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে দুই-তৃতীয়াংশ উপকারভোগী। দীর্ঘদিনের এসব সমস্যা সমাধানে দাবি করে এলেও আজও কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বালু দিয়ে ঘরের আঙিনা ভরাট করার ফলে ও মিঠাপানির সংকটে গাছ কিংবা সবজি চাষ ভালো হয় না। যা হয় সেটাও লোনাপানিতে ডুবে মারা যায়। বসতি রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় হাঁস-মুরগির ফার্ম কিংবা ছাগল-গরু পালন করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। এ ছাড়া তিনটি পুকুরে মাছ চাষও করা যাচ্ছে না।’

শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিনের এসব সমস্যা সমাধানের দাবি করে এলেও অদ্যাবধি কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি বর্তমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত দেখতেও আসেননি। সরকারি-বেসরকারি তেমন কোনো সহযোগিতাও আমরা পাই না। আমরা কী দোষ করলাম?’ 
গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত নীলিমা শান্ত, রুপা ও মিষ্টি নামের শিক্ষার্থীরা বলেন, গুচ্ছগ্রামের রাস্তা বাদেও প্রধান সড়ক ভালো না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ না থাকায় কেউ ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়ালেখা করে, আবার কেউ সোলারের আলোতে পড়াশোনা করে।

বাগালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ গাজী বলেন, ‘ওখানে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের একটি বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার পরে আর কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায় না। আমরা তিনবার আবেদন করার পরেও বলা হয়েছে, বরাদ্দ দেওয়া হবে না। এ জন্য আমাদের স্থানীয়ভাবে টিআর-কাবিখা থেকে সংস্কারকাজ করতে হয়; যা দিয়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণ অসম্ভব। এ ছাড়া গুচ্ছগ্রামগুলো বেড়িবাঁধের বাইরে হওয়ায় নিরাপদ নয়। একবার বাঁধ সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, নদীর তীর হওয়ায় ফের ভেঙে গেছে। ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দ্রুত সংস্কারের চেষ্টা করা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত