Ajker Patrika

অরক্ষিত ইলিশের খনি

খান রফিক, বরিশাল
অরক্ষিত ইলিশের খনি

রুপালি ইলিশের খনি হিসেবে পরিচিত বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ। ষষ্ঠ অভয়াশ্রম গড়ে উঠেছে মূলত এ অঞ্চল নিয়েই। মেঘনাসহ গজারিয়া, তেঁতুলিয়া, মাসকাটা, কালাবদর নদীও এখানে। ডিম ছাড়তে তাই এসব নদীতেই সবচেয়ে বেশি বিচরণ মা ইলিশের; কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হতে যাওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায়ও অরক্ষিত থাকছে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ। সেখানে এখনো দেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত জনবল, নৌযান এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

মৎস্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কী পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য থাকবেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি অথচ প্রতিবছর এই দুই উপজেলার নদীতীরে মা ইলিশ শিকার করতে আসা প্রভাবশালীদের হাতে মার খাচ্ছেন মৎস্য কর্মকর্তা, উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ অবস্থায় মেঘনাসহ ইলিশ বিচরণের নদীগুলোতে এবারও অরাজকতার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুরুন্নবী এ তথ্য স্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানকার রেকর্ড বেশ খারাপ। মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞাকালে প্রতিবারই হামলার শিকার হতে হয়। যে কারণে এ বছর নদীতীরবর্তী চেয়ারম্যান, মেম্বারদের এই অভিযানে সম্পৃক্ত করেছি। তাঁরা একাধিক টিম করে নিজ এলাকায় মা ইলিশ রক্ষা করবেন। জলে-স্থলে দুই জায়গায়ই ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চেয়েছি। সেটা না করলে এবার আর নিস্তার পাওয়ার সুযোগ নেই। নদীতে ধরতে পারলেই এক বছর জেল।’

বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ ধরা সব নদীতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এজন্য গত মঙ্গলবার টাস্কফোর্স কমিটির সভা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছর ইলিশ প্রবেশের জায়গা অর্থাৎ নদীতীরবর্তী যেসব এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, তেমন চারটি স্পটে ক্যাম্প স্থাপন করা হবে।

হিজলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এস এম পারভেজ জানান, তাঁর দপ্তরে ছয়জন স্টাফ আছেন। এর মধ্যে কর্মকর্তা বলতে তিনি একাই। এত বড় নদীতে এই জনবল দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তিনি একজন নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশের পাঁচজন সদস্য এবং অতিরিক্ত জনবল চেয়েছেন; কিন্তু বুধবার বিকেল পর্যন্ত পাননি। তাঁর মতে, একটি স্পিডবোট, পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য এবং নির্বাহী ক্ষমতা হলে মা ইলিশ রক্ষা সহজ হতো। তিনি মনে করেন, প্রতিবছর হামলা হয় বিচ্ছিন্ন অভিযানের কারণে। এবার কম্বিং অপারেশন করবেন।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, মা ইলিশ রক্ষার মৌসুম এলেই নেতাদের (জনপ্রতিনিধি) মাছ ধরার বিশেষ রোগ দেখা দেয়। এই রোগ নিয়ন্ত্রণে মা ইলিশ রক্ষায় বিশেষ অভিযানসহ মেহেন্দীগঞ্জে নৌবাহিনী, র‍্যাব, পুলিশ থাকবে।

জাতীয় ক্ষুদ্র জেলে সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেরা একপক্ষকে টাকা দেয়। আরেকপক্ষ সেখানে অভিযানে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযানকারীদের ওপর হামলা চালায়। তাঁর মতে, মৌসুমি জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার করে। তাঁদের ভাড়ায় খাটান স্থানীয় প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ীরা। নিষেধাজ্ঞাকালে মাঠ কর্মকর্তারা প্রান্তিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করায় এবারও মেঘনাসহ ইলিশ বিচরণের নদীগুলোতে অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে।

এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আনিছুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় বাড়তি ৪১ জন জনবলের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছিল। কিছু জনবল দিলেও সব জায়গায় দেয়নি। হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জে জনবল কম থাকলেও সমন্বয় করা যাবে। তিনি বলেন, এ সময়ে মা ইলিশ নদীতে আসে ডিম ছাড়তে; কিন্তু তখনই সিজনাল মানুষ আসে নদীতীরে ফুর্তি করতে। কিছু জনপ্রতিনিধি এর সঙ্গে জড়িত। এদের প্রতিরোধে নদীতীরবর্তী এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে একাধিক টিম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

বগুড়ায় ইফতারের পর ডেকে নিয়ে যুবককে হত্যা

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

সেনাসদস্যকে এক গাড়ি ধাক্কা দেয়, আরেক গাড়ি পিষে যায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত