এবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে তোড়জোড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২২, ০৬: ৩২
আপডেট : ৩০ জুন ২০২২, ১৯: ২৯

বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করতে দেশের বাজারেও ডিজেল ও অকটেনের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিজেল ও অকটেনের দাম ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।

দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, পরিবহন খাতের নেতা ও ফিলিং স্টেশনের মালিকদের ইতিমধ্যে বৈঠক হয়েছে।

বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, জ্বালানি তেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ডিজেল, যা মোট জ্বালানির ৭৩ শতাংশ। গত বছরের নভেম্বর মাসে ডিজেলের দাম ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। বিপিসি বলছে, প্রতি ব্যারেল ডিজেল গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কেনা হয়েছে ৮৩-৮৬ মার্কিন ডলারে, এখন কিনতে হচ্ছে ১৭৩-১৭৫ মার্কিন ডলারে। প্রতি লিটারে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে গড়ে ৫৫ টাকা। প্রতি লিটার অকটেনে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে প্রায় ৩৫ টাকা।

বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত জ্বালানি পণ্যে ভর্তুকি বাবদ অতিরিক্ত খরচ হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। বিপিসি যেভাবে জ্বালানি পণ্যে ভর্তুকি দিচ্ছে এভাবে চলতে থাকলে প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’ দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কবে আসতে পারে–এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে ডিজেল ও অকটেনের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা চলছে। অব্যাহত লস কমাতে আমার চাওয়া, দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত শিগগিরই নেওয়া হোক। আমরা এখন ভর্তুকি দিয়ে যে দামে জ্বালানি পণ্য বিক্রি করছি, তাতে বিপিসি সর্বোচ্চ জুলাই পর্যন্ত টিকতে পারবে।’

এদিকে জুন ২০১৬ থেকে জুন ২০২১—এই ছয় অর্থবছরের বিপিসির আর্থিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সংস্থাটি এই সময়ের মধ্যে জ্বালানি তেল বিক্রি করে আয়কর বাদ দিয়ে মুনাফা করেছে ৩৮ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্য বিক্রির আয় থেকে ছয় বছরে বিপিসি সরকারকে কর দিয়েছে ৭ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দাম বাড়ার কারণে বিপিসি যে লোকসানের কথা বলছে, আসলে তারা এখন লাভের বদলে আগের মুনাফার অংশ কমছে। কারণ, বিপিসিকে এখন বেশি দামে জ্বালানি তেল কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘২০২১ সালের দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেল ও অকটেনের দাম যখন কম ছিল, তখনো সরকার অকটেনের দাম বাড়িয়েছে। দাম বাড়লে সরকার দাম বাড়াবে কিন্তু দাম কমলে কমাবে না—এটা নীতি হতে পারে না। আমরা জানি না সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে কোন নীতি অনুসরণ করে।’

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী নসরুল হামিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি, কী করা যায়। মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পরিবহন ব্যয় বাড়বে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে গেলে তাঁরা বেতন বাড়ানোর দাবি করবে, যা শিগগির করা সম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত